শনিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১১

রাসূল সাঃ-এর শেষ ভাষণ

দশম হিজরিজিলহজ মাস২৩ বছর আগে হেরাগুহায় জ্বলে উঠেছিল সত্যের আলোআজ তা পূর্ণতায় উপনীতএক কঠিন দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন এ পৃথিবীতে২৩ বছর কঠিন পরিশ্রম, সংগ্রাম, অপরীসীম কোরবানি ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিলতা আজ সমাপ্তির পথেযে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন মানুষের কাছে দূত হিসেবে তা আজ পূর্ণতার পথেদীর্ঘ ২৩ বছর তিনি সাধনা করে একটি রাষ্ট্র গঠন করলেনগঠন করলেন শোষণমুক্ত জুলুমহীন ন্যায়বিচারের সমাজগড়ে তুললেন তাওহিদভিত্তিক নব সভ্যতার এক নতুন জাতি­ মুসলিম উম্মাহ
তাই নবী করীম সাঃ সঙ্গীসাথীসহ হজের উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে গমন করেন এবং হজ সম্পাদন করেনআজ লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েকআজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ইব্রাহীম আঃ ও ইসমাইল আঃ যেখানে দাঁড়িয়ে কাবার প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে এক মুসলিম উম্মাহ গঠনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেছিলেনমুসলমানরা আজ মাকামে ইবরাহীমে সমবেত৯ জিলহজ রাসূল সাঃ সব মানুষের সামনে দাঁড়ালেনমহানবী সাঃ প্রথমে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করলেনএরপর তিনি তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ পেশ করলেন­ তিনি বললেন, সমবেত জনতা­
১. আজ সকল প্রকার কুসংস্কার অন্ধ বিশ্বাস এবং সকল প্রকার অনাচার আমার পদতলে দলিত-মথিত হয়ে গেল
২. তোমরা তোমাদের দাসদাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার করো তাদের সাথে তোমরা খারাপ ব্যবহার কোরো নাতাদের ওপর নির্যাতন করবে নাতোমরা যা খাবে তাদেরকে তোমরা তাই খেতে দিবে তোমরা যে বস্ত্র পরিধান করবে তাদেরকে তাই পরিধান করতে দিবে মনে রেখো তারাও মানুষ তোমরাও মানুষ এরাও একই আল্লাহর সৃষ্টি
৩. সাবধান! নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে তাদের ওপর কখনো অন্যায়-অত্যাচার করবে না কেননা তারা হলো অবলা কেননা তাদের দায়িত্ব তোমাদের ওপরই তোমাদের যেমন নারীদের ওপর অধিকার আছে তেমনি তোমাদের ওপরও নারীদের অধিকার আছে দয়া ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাদের সাথে আচরণ করবে
৪. আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে সে কুফুরি করল
৫. সুদ ঘুষ রক্তপাত অন্যায় অবিচার জুলুম নির্যাতন কোরো নাকারণ এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাইআর মুসলমান পরস্পর ভ্রাতৃসমাজ
৬. তোমরা মিথ্যা বোলো নাকারণ মিথ্যা সব পাপ কজের মূলকারণ মিথ্যাই বিপদ ডেকে আনে
৭. চুরি কোরো না ব্যভিচার কোরো নাসর্বপ্রকার মলিনতা হতে দূরে থেকোপবিত্রভাবে জীবনযাপন করো সাবধান! শয়তান থেকে তোমরা দূরে থেকোতোমরা কোনো একটি কাজকে খুব সামান্য মনে করবে, কিন্তু শয়তান এসবের মাধ্যমে তোমাদের সর্বনাশ করিয়ে ছাড়বে
৮. তোমরা তোমাদের আমীরের আদেশ অমান্য করবে নাযদিও হাবশি নাক কাটা গোলাম হয়তোমরা তার আনুগত্য করবেযতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহর দীনের ওপর থাকবে
৯. ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো নাকারণ তোমাদের পূর্ব-পুরুষেরা এই কারণে ধ্বংস হয়েছে
১০. বংশের গৌরব কোরো নাযে ব্যক্তি নিজ বংশকে হেয় প্রতিপন্ন করে অপর বংশের পরিচয় দেয় তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ
১১. তোমরা তোমাদের প্রভুর এবাদত করবেপাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেরোজা রাখবে, তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে, তবেই তোমরা জান্নাতি হতে পারবে
১২. আমি আমার পরে তোমাদের জন্য যা রেখে যাচ্ছি তা তোমরা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবেতার ওপর আমল করবেতাহলে তোমাদের পতন ঘটবে নাআর তা হচ্ছে আল্লাহর কুরআন ও নবীর সুন্নত
১৩. তোমরা ভালোভাবে জেনে রাখো আমিই সর্বশেষ নবী আমার পরে আর কোনো নবী আসবেন নাআমিই আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলামআমার এই সকল বাণী তোমরা যারা শুনেছ তারা যারা অনুপস্থিত তাদের নিকট পৌঁছে দিবে
মহানবী সাঃ ভাষণ শেষ করলেনএবং তাঁর চেহারা মোবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠলতিনি করুণ স্বরে করুণভাবে আকাশ পানে তাকালেন এবং তিনি বললেন, হে মহান প্রভু! হে পরওয়ার দিগার! আমি কি তোমার দীনের দাওয়াত পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিতখন উপস্থিত জনতা সবাই সম্মিলিতভাবে বললেন, নিশ্চয়ই আপনি আপনার দীন পরিপূর্ণভাবে পৌঁছাতে পেরেছেনতখন তিনি আবার বললেন যে, হে প্রভু! আপনি শুনুন, আপনি সাক্ষী থাকুন, এরা বলেছ আমি আপনার দীনকে লোকদের নিকট পৌঁছাতে পেরেছিআমি আমার কর্তব্য পালন করতে পেরেছি
ভাবের অতিশয্যে নবী নীরব হলেনজান্নাতি নূরে তাঁর চেহারা আলোকদীপ্ত হয়ে উঠল এই মুহূর্তে কুরআনের শেষ আয়াতটি নাজিল হয়আজকের এই দিনে তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিলামতোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলামইসলামকেই তোমাদের ওপর দীন হিসেবে মনোনীত করলাম
হজরত রাসূল সাঃ কিছুক্ষণ চুপ রইলেনজনতা নীরবকিছুক্ষণ পর হজরত সাঃ জনতার দিকে তাকালেন এবং করুণ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন­ বিদায় বন্ধুগণ, বিদায়

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

Thank you so much and all the best