ইসলাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ইসলাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬

মুসলিম জীবনে রোযার সফলতা কতটুকু?

কতটুকু অর্জিত হচ্ছে তাকওয়া?
রোযার লক্ষ্য কি শুধু এটুকু, রোযাদার ব্যক্তিটি সকাল থেকে সন্ধা অবধি শুধু পানাহার বন্ধ রাখবে? তারাবিহ পড়বে এবং কোরআন তেলাওয়াত করবে? এবং রমযান শেষে মহা ধুমধামে ঈদ উদযাপন করবে? কত হাজার মাইল পথ চললো সেটিই কি পথিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো, সে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে আদৌ পৌঁছলো কিনা। রোযার মূল লক্ষ্য, তাকওয়া অর্জন। মহান আল্লাহতায়ালা সে লক্ষ্যটি ব্যক্ত করেছেন এভাবেঃ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)। উপরুক্ত আয়াতে সুস্পষ্ট করা হয়েছে,তাকওয়া অর্জনই রোযার মূল কথা। এক মাসের রোযায় রোযাদারের জীবনে কতটা তাকওয়া সৃষ্টি হলো তা থেকেই সেটিই রোযার সফলতা মাফকাঠি। আগুনের উত্তাপ যেমন প্রকাশ পায়,তেমনি প্রকাশ পায় তাকওয়ার উত্তাপও। সে উত্তাপে মানুষ মহামানবে পরিণত হয়। এমন মহাব মানবদের সংখ্যাবৃদ্ধিতে দেশ তখন ধর্মকর্ম, নেককর্ম, শিক্ষাদীক্ষা, মানবতা ও উচ্চতর সংস্কৃতিতে এক মহান সভ্যতা গড়ে তোলে। যেমনটি হয়েছিল সাহাবায়ে কেরামদের আমলে। অপর দিকে যে মুসলিম দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে, তখন কি বুঝতে অসুবিধা হয় সে দেশে মসজিদ-মাদ্রাসা ও রোযাদারের সংখ্যা বাড়লেও মানুষের তাকওয়া বাড়েনি। এবং তাদের জীবনে রোযাও সফল হয়নি।

আধ্যাত্মীক ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লবে রোযার কাঙ্খিত ভূমিকা ও মুসলমানদের ব্যর্থতা

আধ্যাত্মীক ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লব কীরূপে?

মানব জাতির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সাফল্যের জন্য আধ্যাত্মীক বিপ্লব যেমন জরুরী,তেমনি অপরিহার্য হলো রাষ্ট্রীয় বিপ্লব। পাখির দুটি ডানা সবল না হলে যেমন উড়তে পারে না তেমনি আধ্যাত্মীক বিপ্লব ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লব এ দুটি বিপ্লব একত্রে না হলে উচ্চতর সভ্যতাও নির্মিত হয় না। অর্জিত হয় না ইসলামের মূল লক্ষ্য।রাষ্ট্রের বুকে শয়তানের অধিকৃতি মেনে নিয়ে কি ইসলাম পালন হয়? আসে কি আধ্যাত্মীক উন্নয়ন? নবীজী এ দুটি বিপ্লব একত্রে পরিচালিত করে সমগ্র মানব জাতির সামনে অনুকরণীয় সূন্নত রেখে গেছেন। দ্বিমুখি এ বিপ্লবের পথ বেয়ে তিনি যেমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অসংখ্য মানব গড়ে গেছেন,তেমনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতাও গড়ে গেছেন। যারা রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখে স্রেফ মসজিদ-মাদ্রাসা,পীরের মাজার¸সুফী খানকা বা হুজরায় বসে আধ্যাত্মীক বিপ্লব ও সে সাথে দুই জাহানের কল্যাণ ভাবেন তারা কি নবীজী (সাঃ)র সে সূন্নত থেকে আদৌ শিক্ষা নিয়েছে? তাদের দ্বারা কোথাও কি আল্লাহর শরিয়তি বিধান বিজয়ী হয়েছে? নির্মিত হয়েছে কি ইসলামি রাষ্ট্র ও সভ্যতা? এসেছে কি আধ্যাত্মীক উন্নয়ন? বরং তাতে আধ্যাত্মীকতার নামে মুসলিম জীবনে এনেছে নবীজী (সাঃ)র প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকীম থেকে বিশাল বিচ্যুতি ও ভ্রষ্টতা। অপর দিকে আধ্যাত্মীক বিপ্লবকে গুরুত্ব না দিয়ে যারা শুধু ইসলামের নামে রাজনৈতীক দল ও রাজনৈতীক বিপ্লব নিয়ে ভাবেন তাদের দ্বারাই বা ইসলামি রাষ্ট্র নির্মানে কতটুকু সফলতা এসেছে? এবং কতটুকু এসেছে চারিত্রিক বিপ্লব? তারাও কি নবীজী(সাঃ)র সূন্নতকে পুরাপুরি আঁকড়ে ধরতে
পেরেছে?

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১১

*ইসলামই মুক্তির একমাত্র পথ*

আলচনার উদ্দেশ্য (Objective):

* শাশ্বত ও সার্বজনীন জীবন ব্যবস্থা ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করা। পাশাপাশি বর্তমান ও অতীতের কয়েকটি ভ্রান্ত মতবাদের অসারতা প্রমান করা ।

* প্রধান প্রধান কয়েকটি জাহেলী মতবাদ সম্পর্কে ধারনা প্রধান করা এবং জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সম্ভব ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মনে সে ধারনা অর্জনে সহায়তা করা ।

১. বস্তুবাদঃ
বস্তু সকল শক্তি ও ক্ষমতার মূল। বস্তুর উন্নতি সাধনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র। সমাজ তথা বিশ্বের সামগ্রীক উন্নতি সাধন সম্ভব। এই মতবাদ অনুযায়ী ৫টি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন হচ্ছে চরম বোকামী। এগুলো হলোঃ

বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১১

কুরআনের ছোঁয়ায় বদলে যাক এ জীবন।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
 
 
 
 ভূমিকা: আল কুরআন মহান আল্লাহর বাণীর অপূর্ব সমাহার বিস্ময়কর এক গ্রন্থের নাম। আল কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সংরক্ষিত এক সংবিধান। এই কুরআন যেমন সমগ্র মানবজাতির মানসিক সংশয়, সন্দেহ, অস্পষ্টতা, কুপ্রবৃত্তি, লোভ-লালসা নামক নানারকম রোগ-ব্যাধি নিরাময়ের অব্যর্থ মহৌষধ ঠিক তেমনি দৈহিক রোগ-ব্যাধি, বেদনা, কষ্ট-ক্লেশ এবং জীবন চলার পথের সকল অন্ধকার বিদূরিত করার এক অনবদ্য  নির্দেশিকা। এই কুরআন হল, সত্য-মিথ্যা এবং বৈধ-অবৈধের সীমা-রেখা নির্ধারণের এক সুউচ্চ মাইল ফলক, সুখ সমৃদ্ধ জীবনের বিশ্বস্ত ঠিকানা এবং পশ্চাদপদতা, দুর্ভাগ্য ও হতাশার গ্লানি থেকে মুক্তির অনুপম গাইড লাইন।

শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

মানবতার ধর্ম ইসলাম

প্রথম পর্ব
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ এবং সামগ্রিক জীবন বিধান হিসেবে ইতোমধ্যেই বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিশেষ করে জ্ঞানী গুণী বিশেষজ্ঞগণ মহান এই ধর্ম নিয়ে পড়ালেখা করতে গিয়ে এই ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ও স্বরূপের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পান। যার ফলে শত্রুদের তাবৎ ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিকাশ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। আসলে ইসলামের নীতিমালা এবং শিক্ষাগুলো জুলুম অত্যাচার নিপীড়নের বিরোধী হবার কারণে বিশ্বের বলদর্পী শক্তিগুলোর স্বার্থের পথে তা মারাত্মক অন্তরায়। যার ফলে আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ এবং তার বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্যে তাদের সর্বপ্রকার সামর্থ ও শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। আমরা তাই এই আসরে ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ ও বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

শনিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১১

রাসূল সাঃ-এর শেষ ভাষণ

দশম হিজরিজিলহজ মাস২৩ বছর আগে হেরাগুহায় জ্বলে উঠেছিল সত্যের আলোআজ তা পূর্ণতায় উপনীতএক কঠিন দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন এ পৃথিবীতে২৩ বছর কঠিন পরিশ্রম, সংগ্রাম, অপরীসীম কোরবানি ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিলতা আজ সমাপ্তির পথেযে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন মানুষের কাছে দূত হিসেবে তা আজ পূর্ণতার পথেদীর্ঘ ২৩ বছর তিনি সাধনা করে একটি রাষ্ট্র গঠন করলেনগঠন করলেন শোষণমুক্ত জুলুমহীন ন্যায়বিচারের সমাজগড়ে তুললেন তাওহিদভিত্তিক নব সভ্যতার এক নতুন জাতি­ মুসলিম উম্মাহ
তাই নবী করীম সাঃ সঙ্গীসাথীসহ হজের উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে গমন করেন এবং হজ সম্পাদন করেনআজ লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েকআজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ইব্রাহীম আঃ ও ইসমাইল আঃ যেখানে দাঁড়িয়ে কাবার প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে এক মুসলিম উম্মাহ গঠনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেছিলেনমুসলমানরা আজ মাকামে ইবরাহীমে সমবেত৯ জিলহজ রাসূল সাঃ সব মানুষের সামনে দাঁড়ালেনমহানবী সাঃ প্রথমে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করলেনএরপর তিনি তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ পেশ করলেন­ তিনি বললেন, সমবেত জনতা­

বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১১

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ

المعروف এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে : المعلوم বা জ্ঞাত ও জানা বস্তু বা বিষয় عرف يعرف معرفة وعرفانا এর অর্থ জানাالمنكر- المعروف (অজ্ঞাত ও অপরিচিত) এর বিপরীত
المعروف শব্দটি المعرفة (জানা) এবং الاستحسان (কল্যাণকরন) উভয়কে শামিল করে
শরিয়তের পরিভাষায় মারুফ বলা হয় :
اسم جامع لكل ما عرف من طاعة الله والتقرب إليه بفعل الواجبات والمندوبات.
অর্থাৎ, যে সকল ফরজ ও নফল কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ পায় এবং নৈকট্য সাধিত হয় তাকে মারূফ বলে
 আর মুনকার হচ্ছে মারূফের বিপরীত
وهو كل ما قبحه الشرع وحرمه وكرهه.
এমন কথা ও কাজ যাকে শরিয়ত হারাম, অপছন্দ ও ঘৃণা করে হারাম সাব্যস্ত করেছে উপরোক্ত

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১১

ইসলাম বাস্তববাদী জীবনাদর্শ

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়াতে মানব জাতিকে প্রেরণ করেছেন নিতান্ত সীমিত সময়ের জন্যএখানকার জীবন ক্ষণস্থায়ীমানুষের প্রকৃত জীবন হলো আখেরাতের জীবন নবী আদম আ. ও আদি মাতা হাওয়া আ.এর মাধ্যমে দুনিয়াতে মানব বসতি শুরু হয়েছেএরপর আবার সবাই একে একে চলে যাবে দুনিয়াবী জীবন ছেড়েদুনিয়ায় এ ক্ষণস্থায়ী জীবনকে ব্যয় করতে হবে আখেরাতের জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করার কাজেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়া হলো আখেরাতের জন্য ক্ষেতস্বরূপঅর্থাৎ আখেরাতের প্রকৃত জীবনের শান্তি সুখের সাজ-সরঞ্জাম এখান থেকেই সংগ্রহ করতে হবেতাই দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই অত্যন্ত মূল্যবানকেননা আখেরাতের জীবনের কোন শেষ নেইদুনিয়া ও আখেরাতের জীবনের মধ্যে তুলনা করা যায় এভাবে যে, একজন যদি সাগরে তার একটি আঙ্গুল ডুবিয়ে তোলে, তাহলে তাতে যতটুকু পানি উঠে আসে, তাহলো দুনিয়ার জীবন আর অবশিষ্ট জলরাশি হলো আখেরাতের জীবনস্পষ্টতঃই এ দুয়ের মধ্যে কোন তুলনা হতে পারে নাএক ফোঁটা পানির সাথে অকূল সমুদ্রের অথৈ জলরাশির তুলনা কোন মতেই করা চলে না
বস্তুতঃ পার্থিব এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আখেরাতের জীবনের পাথেয় সংগ্রহের জন্য ব্যয়িত হলেই জীবনের সাফল্য অর্জিত হতে পারে পক্ষান্তরে ভোগ-বিলাস আর আনন্দ-ফূর্তি কিংবা অনর্থক ক্রিয়াকর্মের মধ্য দিয়ে সময় কাটিয়ে দিলে সে জীবনের কোন অর্থই হয় নাআল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে মানুষকে পাঠানোর সময়ে বলে দিয়েছিলেন, তোমাদের নিকট আমার হেদায়েতের বাণী পৌঁছুলে যারা তা অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেইদুশ্চিন্তার কোন কারণও নেই মহান আল্লাহ তার সে প্রতিশ্রতি অনুযায়ী যুগে যুগে তাঁর মনোনীত পুরুষদের পাঠিয়েছেন মানুষকে জীবনপথের সঠিক দিশা দানের জন্যপার্থিব জীবনের মোহমুক্ত হয়ে মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি একনিষ্ঠভাবে ধাবিত হয়ে পরকালের জীবন পাথেয় সংগ্রহের জন্য আম্বিয়ায়ে কেরাম সর্বদা মানব জাতিকে আহ্বান জানিয়েছেনপৃথিবীর অনিত্যতা, মানব জীবনের স্বরূপ ও করণীয়, বান্দাদের প্রতি আল্লাহর অপার মেহেরবানী ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তারা বনী আদমকে চিন্তা-ভাবনা করার আহ্বান জানিয়েছেন

রবিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১১

বিশ্বাস

আল্লাহ। খুব ছোট একটি শব্দ। অথচ এই শব্দটি মানুষের জীবনে এনে দেয় বৈপ্লবিক পরির্বতন। কেউ আল্লাহকে বিশ্বাসী করেন, কেউ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চান স্রষ্ঠার অস্তিত্ব। আল্লাহকে বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস শক্তিশালী দুই মেরু। আল্লাহ আছেন, সারা বিশ্বকে তিনি সৃষ্টি করেছেন, সকল জীবের জীবন মরণ সবকিছুই তার আয়ত্বাধীন। কিন্তু সুস্পষ্ট কোন নিদর্শন দিয়ে এ বিশ্বাসকে প্রমাণ করা যায় না। আবার আল্লাহ বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই এ কথা বলা সহজ হলেও অকাট্য যুক্তি দিয়ে একে প্রমাণ করা অসম্ভব। অথচ আল্লাহকে বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস মানুষের জীবনে শক্তভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

ইসলাম ও ন্যায়বিচার

এক)
ফাতিমা বিনতুল আসওয়াদ ধরা পড়লেন। ধরা পড়লেন চুরির দায়ে। মুসলিম সমাজ বজ্রাহতের মতো চমকে গেলো, থমকে গেল। চুরির শাস্তি তারা জানেন। নির্ঘাত হাত কাটা যাবে ফাতিমার। না, অভাবের তাড়নায় চুরি নয়। ক্ষুধা নিবারণে কেউ চুরি করলে তো আর ইসলাম হাত কাটে না, চুরি যেন না করতে হয় তার নিশ্চয়তায় পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা আগেই নিশ্চিত করে ইসলাম ।
মাখজুমি বংশের মেয়ে ফাতিমা। সম্মান আর আভিজাত্যে আরব জোড়া সুনাম। আছে অর্থসম্পদ প্রাচুর্য। তবুও চুরির দায়ে ধরা পড়লেন ফাতিমা। কুরায়শদের মাঝে কানাকানি, ফিসফিসানি। কিছু একটা করা দরকার। বিব্রত কুরায়শগণ অবশেষে রাসূলের (সাঃ) কাছে শাস্তি কমানোর সুপারিশের কথা ভাবেন।
দয়ার নবী। কানায় কানায় করুনায় পূর্ণ হৃদয় । তবুও ন্যায়ের পথে হিমালয়ের চেয়ে অটল তিনি, জানেন সবাই। তার দয়ার দরিয়ায় সুপারিশের পাল তোলা নৌকা ভাসাবে এমন হিম্মত আছে বা কয় জনার।
উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ), নবীজির অতি প্রিয়। সবাই ঘিরে ধরেন তাকে। তিনিই পারবেন, সাহসের বৈঠা বেয়ে ঢেউ তুলবেন নবীজির দয়ার সাগরে। শরীরের সবটুকু সাহস বুকে তুলে দাড়ান তিনি নবীজির দরবারে। আবেদন করেন শাস্তি লাঘবের, সম্ভ্রান্ত বংশের রমণীর সম্মানহানি বাঁচাতে সুপারিশ করেন হাত না কাটার।
রাসূল (সাঃ) ব্যথিত হলেন। যার আগমন ধরায় সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায়, তিনি হাত গুটিয়ে নেবেন ন্যায় বিচার থেকে? বিস্ময়ভরা কন্ঠে তিনি বললেন, “আল্লাহর অনুশাসন কার্যকরী করার ব্যাপারে তুমি সুপারিশের আশ্রয় গ্রহণ করছ?”
অতঃপর তিনি উঠে দাড়ালেন, জনতাকে সম্বোধন করে দৃঢ কন্ঠে ঘোষণা করলেন, “তোমাদের পূ্র্ববর্তী লোক শুধু এ জন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে যে, তাদের মধ্যে কোন ভদ্র বা অভিজাত বংশীয় লোক চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। কিন্তু যদি কোন দূর্বল ব্যক্তি চুরি করত তবে তার উপর অনুশাসন কার্যকর করত। আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদ তনয়া ফাতিমাও যদি চুর করে তবে তার হাতও কর্তিত হবে”।
সেদিন থেকে বিশ্ববাসী শিক্ষা নিলেন, ন্যায়বিচারে আত্মীয়তার স্থান নেই, স্বজাতির স্থান নেই, অর্থ প্রতিপত্তির স্থান নেই।
দুই)
আলী (রাঃ)। আমিরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবু তালিব। যুদ্ধে অসীম বীরত্বে অধিকার করেছেন শেরে খোদা উপাধি। জেহাদের ময়দানে দূর্গম দূর্গের কপাট ভেঙ্গে ঢাল বানিয়ে যুদ্ধ জয় করতে পারেন যিনি অমন উপাধিতে তাকেই তো মানায়।
ঢাল নেই তলোয়ার নেই এমন নিধিরাম সরদাররদের জন্য যুদ্ধ নয়। যোদ্ধা মানেই সমরাস্ত্রে সজ্জিত দুঃসাহসী বীর। সেই বীরসেনা আলী (রাঃ) তার প্রিয় বর্ম হারালেন। নিজের বর্ম একদিন খুঁজেও পেলেন বাজারে। বাজারে কুফানিবাসী জনৈক খৃষ্টান বর্মটি বিক্রির জন্য হাকাহাকি করছেন। নিজের বর্ম, সহজে কি আর চিনতে ভুল হয়, তাও আবার বীর সেনানীর বর্ম। সহজেই চিনে ফেললেন তার হারানো বর্ম। তবু ছিনিয়েতো আর নেয়া যায় না। হ্যা তিনি মুসলিম জাহানের খলিফা, তাই বলে জোর করে, তথ্য প্রমাণ ছাড়াই নিজের বর্ম বলেতো আর কেড়ে নেয়া যায় না।
তিনি ছুটলেন কাজীর দরবারে। শুরা বিন হারিশের দরবারে নালিশ জানালেন কুফার খৃষ্টান ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। খলিফাতুল মুসলেমিন হযরত আলী বিচার চাইলেন সাধারণ প্রজার মতো, যদিও কাজী তারই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীমাত্র।
ন্যায়ের প্রতীক কাজী। ভুলে গেলেন বিচারপ্রত্যাশীর পরিচয়। আমিরুল মুমেনিনের দাবীর স্বপক্ষে দু’জন স্বাক্ষী নিয়ে আসার আদেশ দিলেন। আলী (রাঃ) তার অভিযোগের স্বপক্ষে নিজের সন্তান হাসান (রাঃ) কে হাজির করলেন, হাজির করলেন তার দাসকেও।
তবুও মামলায় হেরে গেলেন ক্ষমতামীল আমিরুল মু’মেনিন হযরত আলী। পিতার পক্ষে সন্তানের, মালিকের পক্ষে দাসের স্বাক্ষী গৃহীত হলো না কাজীর দরবারে। শুরা বিন হারিশ রায় দিলেন খৃষ্টান ব্যবসায়ীর পক্ষে।
কুফাবাসী অভিভূত হলেন ন্যায় বিচারে। যে ইসলাম বিচারে বাছবিচার করে না ধনী আর গরীবে, আমির আর সাধারণ প্রজার মাঝে, যে ইসলাম বিচারে খৃষ্টানের বিপক্ষে পক্ষ নেয় না মুসলিম আমিরের, সে ইসলাম থেকে পালিয়ে থাকতে পারে কি বুদ্ধিমান কেউ? কাজীর নিরপেক্ষ বিচারে আলোকিত হয়ে ওঠে খৃষ্টান ব্যবসায়ীর হৃদয়। ছুটে আসেন ইসলামের সুশীতল ছায়ায়,  ন্যায়ের ফল্গুধারায়।
তিন)
মৃত্যুদন্ড। রায় দিলেন কাজী সাহেব। রায় দিলেন রানী নূর জাহানের বিপক্ষে। ভারত উপমহাদেশের সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রাণপ্রিয় সহধর্মীনির মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করলেন ন্যায়ের মূর্তপ্রতীক কাজী।
না, কোন প্রতিবাদ জানালেন না মহারাজ। কোন অভিযোগ নেই রানীমার অন্তরে। অভিযোগ করবেনই বা কেন? তিনি অপরাধ করেছেন, শাস্তি যে তাকে পেতেই হবে। তিনি খুন করেছেন। শিকারের পানে নিশানা করা তার তীর বিঁধেছে ধোপার বুকে। যদিও ইচ্ছে করে নয়, তবু খুনতো খুনই। অনিচ্ছাকৃত বলে তো আর বেঁচে উঠবে না ধোপা।
হ্যা, চাইলেই বিচারের রায় বাতিল করতে পারতেন সম্রাট। চাইলেই গর্দান নিতে পারতেন বিচারকের। তবু পারেন না তিনি। সকল বিচারকের বিচারক মহান আল্লাহ তালার ভয়ে কম্পিত সম্রাটের হৃদয়, কৃতঅপরাধে অনুতপ্ত রাণীর অন্তর। অবনত মন্তকে তিনি মেনে নিলেন কাজীর আদেশ।
কাজীর ন্যায় বিচারে  হৃদয় আর্দ্র হয় ধোপার বিধবা বউয়ের। রাণী হয়েও যিনি প্রজার রক্তের বদলে রক্ত ঝরাতে মেনে নেন ফাঁসির আদেশ অমন রাণীর মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না তিনি। রাণীমার মৃত্যুতে তো আর ফিরবেনা তার স্বামী। কাজীর দরবারে আবেদন করেন মৃত্যুদন্ড প্রত্যাহারে। রক্তমূল্য পরিশোধে প্রাণ ফিরে পান সম্রাট জাহাঙ্গীরের বেগম মহারাণী নূর জাহান।
জয় হলো ন্যায় বিচারের, জয় হলো সুশাসনের।
ইসলামে সবাই সমান, এক আল্লাহর বান্দা। ধনী গরিব, আমির ফকির বিচারে বিবেচ্য নয়, ন্যায় বিচারই ইসলামের মর্মকথা। ইসলামের বাহারী গুলবাগের অন্যতম মনকাড়া সুবাসিত ফুলের নাম ন্যায়বিচার। অথচ আজ বিশ্বের সর্বত্র বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে। সাধারণ মানুষ আজ আর ইহলোকিক কোন রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে ন্যায় বিচারের মিছে আশা করে না, ন্যয় বিচারের জন্য তারা আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে করে কাঁদে।
আমাদের শাসকেরা আজ ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ন্যায়বিচার শিখছি তাদের কাছ থেকে যারা মনে করতেন সমাজের উচুশ্রেণীর নাগরিকেরা আইনের উর্ধ্বে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সমসাময়িক ব্রিটিশ শাসক ১ম জেমস মনে করতেন তিনি আইন উর্ধ্বের প্রভূ, তার কথাই আইন , তার হুকুমই শেষ কথা।  আমরা তাদের কাছে মানবতাবাদ শিখছি, যারা সেকেন্ডেই ধ্বংস করেছে হিরোশিমা নাগাসাকির মতো বড় বড় শহর, গণবিধ্বস্তী অস্ত্রের ধুয়ো তুলে যারা হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে।
নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব কিছুই শ্রবণ করেন। নিশ্চয়ই অবহেলিত সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় কায়েম হবে ইসলামী হুকুমাত। আমরা সেদিনেরই অপেক্ষায়।

মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১০

ধর্ম ও বিজ্ঞান ভাবনা

ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা আছে আমাদের মাঝে। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘর্ষ নাকি সন্ধি এটা নিয়েও যথেষ্ঠ সন্ধিহান আমরা অনেকেই। কোন কোন ধর্মের সাথে রক্তা রক্তির ঘটনাও আছে ইতিহাসের পাতায় এ নিয়ে। তবে পবিত্র কুরআন থেকে উৎসারিত ধর্ম, ইসলামের সাথে প্রকৃত বিজ্ঞানের বিরোধ ছিলনা অতীতে, বর্তমানেও নেই এবং ভবিষ্যতেও হবেনা কখনও। ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে প্রাসঙ্গিক কিছু কথার প্রতিফলন ঘটবে এ লেখার মধ্য দিয়ে।
এক ঐশী বাণীর বা অহির মাধ্যমে মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য সামগ্রিক দিক নির্দেশনাকে সাধারণ ভাবে ধর্ম হিসাবে বুঝানো হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক জগতকে জানার এটা একটা মাধ্যমও বটে। মানুষ বিভিন্ন বিশ্বাসের ভিত্তিতে কিছু আচার অনুষ্ঠান ও প্রাত্যহিক কাজের মধ্য দিয়ে ধর্ম পালন করে থাকেন। বিশ্বাসই হচ্ছে ধর্মের মূল কথা। মহাপ্রভুর পক্ষ থেকে নির্বাচিত এক দল মহামানব (নবী ও রাসুল) তাঁরই দ্বারা আদিষ্ট হয়ে মানব জাতিকে বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানের শিক্ষা দিয়েছেন। এ সব মহামানবগণের প্রতি আস্থা রেখেই ধর্মপ্রাণ লোকেরা ধর্ম পালন করে থাকেন। বিশ্বাসীগণ তাঁদের (মহামানবগণের) প্রচারিত বাণীর স্বপক্ষে যুক্তি অথবা প্রমাণ দাবি করেননি কোন সময়ই। কারণ একটাই, আর তা হল মহামানব গণের প্রতি অগাধ আস্থা।