নাম: মো: আব্দুল জব্বার
সাংগঠনিক মান: কর্মী
শহীদ হওয়ার তারিখ : ২৮ ডিসেম্বর ১৯৮২
পিতার নাম: মো: জমির উদ্দিন
সর্বশেষ পড়াশুনা: রসায়ন বিভাগ ২য় বর্ষ।
জীবনের লক্ষ্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া।
আহত হওয়ার স্থান: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সমজিদের অজুখানা।
অস্ত্রের ধরন: ছোরা, ইট, হকিস্টিক, রড।
কাদের আঘাতে শহীদ: ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ(ক-চু), ছাত্রলীগ (মু-হা), ছাত্রমৈত্রী।
শহীদ হওয়ার স্থান: নিজ রাড়িতে।
স'য়ী ঠিকানা: গ্রাম: চকময়রাম, ডাক: ধামইর হাট, থানা: ধামইর হাট, জেলা: নওগাঁ।
ভাইবোন : ৬ জন।
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান: বড়।
পরিবারের মোট সদস্য: ১০ জন।
পিতা: মৃত।
মাতা: জীবিত, পেশা: গৃহিণী।
শহীদ হওয়ার পূর্বে স্মরণীয় বাণী: শহীদ আব্দুল জব্বার সমাজ নিয়ে বেশি ভাবতেন। সমাজকে কিভাবে পরিবর্তন করা যায় সেই চিন-াই সর্বদা করতেন এবং তার প্রচণ্ড বিশ্বাস ছিল যে শিবিরই একমাত্র দল যে দল এ সমাজ পরিবর্তন করতে পারে। শহীদ জব্বার কবি নজরুলের “আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়...” এই গানটি বেশি গাইতেন। বন্ধুরা তাকে এই গান গাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, “আর কতদিন বাঁচব, কখন যে ঝরে পড়ব কেউ জানে না!”
শাহাদতের পর শহীদের পিতার প্রতিক্রিয়া: শাহাদাতের পর পিতার বক্তব্য ছিল, “আমার ছেলে ইসলামের পথে শহীদ হয়েছে এতে আমার দুঃখ নেই। আনল্ল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্ল্লাহ যেন তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করে নেন।”
সাংগঠনিক মান: কর্মী
শহীদ হওয়ার তারিখ : ২৮ ডিসেম্বর ১৯৮২
পিতার নাম: মো: জমির উদ্দিন
সর্বশেষ পড়াশুনা: রসায়ন বিভাগ ২য় বর্ষ।
জীবনের লক্ষ্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া।
আহত হওয়ার স্থান: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সমজিদের অজুখানা।
অস্ত্রের ধরন: ছোরা, ইট, হকিস্টিক, রড।
কাদের আঘাতে শহীদ: ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ(ক-চু), ছাত্রলীগ (মু-হা), ছাত্রমৈত্রী।
শহীদ হওয়ার স্থান: নিজ রাড়িতে।
স'য়ী ঠিকানা: গ্রাম: চকময়রাম, ডাক: ধামইর হাট, থানা: ধামইর হাট, জেলা: নওগাঁ।
ভাইবোন : ৬ জন।
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান: বড়।
পরিবারের মোট সদস্য: ১০ জন।
পিতা: মৃত।
মাতা: জীবিত, পেশা: গৃহিণী।
শহীদ হওয়ার পূর্বে স্মরণীয় বাণী: শহীদ আব্দুল জব্বার সমাজ নিয়ে বেশি ভাবতেন। সমাজকে কিভাবে পরিবর্তন করা যায় সেই চিন-াই সর্বদা করতেন এবং তার প্রচণ্ড বিশ্বাস ছিল যে শিবিরই একমাত্র দল যে দল এ সমাজ পরিবর্তন করতে পারে। শহীদ জব্বার কবি নজরুলের “আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়...” এই গানটি বেশি গাইতেন। বন্ধুরা তাকে এই গান গাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, “আর কতদিন বাঁচব, কখন যে ঝরে পড়ব কেউ জানে না!”
শাহাদতের পর শহীদের পিতার প্রতিক্রিয়া: শাহাদাতের পর পিতার বক্তব্য ছিল, “আমার ছেলে ইসলামের পথে শহীদ হয়েছে এতে আমার দুঃখ নেই। আনল্ল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্ল্লাহ যেন তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করে নেন।”
স্মৃতির পাতা থেকে
মো: আব্দুল খালেক
“পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয় মরণ একদিন মুছে দিবে সকল পরিচয়।” মানুষ এ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকতে চায়। হতে চায় অমর। কিন' রাব্বুল আলামীনের দেয়া নির্ধারিত সময়ের পর তার মনের সকল কামনা ও বাসনা ছেড়ে দিয়ে তাকে পরকালের যাত্রা পথের যাত্রী হতে হয়। পৃথিবীতে মৃত্যুর নেই কোন প্রতিকার। মৃত্যু স্বাভাবিক, বেঁচে থাকা অস্বাভাবিক। তবুও কারো কারো মৃত্যুতে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার রেখে যাওয়া সুকীর্তি সুন্দর স্মৃতি তাকে অমর করে, চিরদিন বেঁচে থাকে মানুষের হৃদয়ে।
তেমনি এক সুকীর্তি অনেক স্মৃতি রেখে যান যিনি, তিনি হলেন শহীদ আব্দুল জব্বার ভাই। তিনি আমাদের সকলকে শোকের অথৈ সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছেন পরপারে সুন্দর সুখময় জিন্দেগীতে। আপন রবের সান্নিধ্যে।
দিনটি ছিল ১৯৮২ সালের ২৮ ডিসেম্বরের দিবাগত রাত। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা “কুল্লু নাফসিন জায়িকাতুল মাউত।” অর্থাৎ প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। শহীদ আব্দুল জব্বার ভাই আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন' তার কর্ম রয়েছে যা আমাদের সকলকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
আজ থেকে প্রায় বিশ বছর পূর্বে যার সাথে আমার পরিচয় ঘটে তিনি হলেন শহীদ আব্দুল জব্বার ভাই। নিউ গভ: ডিগ্রী কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময়। ভর্তি হওয়ার পর আমরা দু’জনই কলেজ হোস্টেলে থাকতাম। তার সাথে প্রথম পরিচয়ের ঘটনা একটু বলতে হয়। মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে দেখতাম
নামাজের পর একটি ছেলে মসজিদের এক কোণে বসে থাকতো। এইভাবে বসে থাকা দেখে তার সাথে পরিচিত হওয়ার একটি আগ্রহ সৃষ্টি হলো। নামাজের পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তার সাথে পরিচিত হলাম। পরিচয়ের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে বুঝতে পারলাম যে, ছেলেটি বেশ জ্ঞানী ও ভদ্র। তারপর থেকে তার সাথে ওঠাবসা করতে লাগলাম এবং বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। নিউ গভ: ডিগ্রী কলেজে পড়ার সময় আমি নিজে আওয়ামী ছাত্রলীগের সমর্থক ছিলাম। শহীদ আব্দুল জব্বার ভাই-এর সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম যে, সেও আওয়ামী ছাত্রলীগের সমর্থক। এদিক দিয়ে দু’জনই একই সংগঠনের সমর্থক হওয়ার কারণে আমাদের মাঝের সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে উঠল। তবে আমরা দু’জনই নামাজের প্রতি বেশ যত্নশীল ছিলাম।
শহীদ আব্দুল জব্বারের আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল সেটা বুঝা যেত। তার ওঠা-বসা, চলাফেরার মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যেত। নামাজ অনেকক্ষণ ধরে পড়তেন এবং মসজিদে অবস্থান করতেন। বিভিন্ন সময় আলাপ আলোচনার মধ্যে আল্লাহর প্রতি গভীর ভালবাসার পরিচয় পাওয়া যেত। যদিও সে তখন আওয়ামী ছাত্রলীগের সমর্থক ছিল।
সবসময় সে সমাজের দুঃস্থ মানুষের কথা বলতো এবং বেশ চিন্তা ভাবনা করতো এবং বলতো যে, এই সমাজ পরিবর্তনের জন্য একদল কর্মী বাহিনীর দরকার যারা করতে পারে এই সমাজের পরিবর্তন। সে প্রায়ই একটি প্রবাদ বলতো “পৃথিবীটা বড় কঠিন, পৃথিবীকে জানা খুব কষ্ট এবং পৃথিবীর মানুষকে চেনা খুব কঠিন।”
সে সব সময় সমাজ নিয়ে চিন্তা করতো এবং বলতো, “সমাজের অবস্থান যেদিকে এগুচ্ছে তাতে আগামীতে এই সমাজের অবস'া আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।” বর্তমানে তার কথার বাস-বতা দেখতে পাচ্ছি। তার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার ফলে তার মাঝে যে গুণটা পেয়েছিলাম সেটা হচ্ছে উদারতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ ভালবাসা। সেই একমাত্র আমার জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। এজন্য আমি নিজে গর্ব বোধ করি, কেননা এধরনের মানুষের সাথে আমার মত একজন ব্যক্তির বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। হাদিসে আছে, “এ দুনিয়ায় যে ধরনের লোকের সাথে বন্ধুত্ব হবে, ঐ দুনিয়াতে সেই ধরনের লোকের সাথে হাশর হবে।”
যাহোক এই ভাবে আমাদের ইন্টারমিডিয়েট জীবনের দু’টি বছর কেটে গেল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শুরু হয়। আমরা দু’জনই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হই। ভর্তির পর আমীর আলী হলের ১১৭ নং কক্ষে অবস্থান করি। অপর দিকে শহীদ আব্দুল জব্বার ভাই রানীনগর হাদির মোড়ের একটি মেসে অবস্থান করে। মেসের নামটা কী ছিল মনে পড়ে না।
আমি হলে সিট নেয়ার সাথে সাথে ইসলামী ছাত্রশিবিরের দাওয়াত গ্রহণ করি এবং সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ হই। অপর দিকে শহীদ আব্দুল জব্বার পূর্বের অবস্থায় অবস্থান করে। এভাবে দু’জন দু’ধারায় চলতে থাকি, কিন' আমাদের মাঝে সম্পর্কের কোন ঘাটতি ঘটেনি। শহীদ আব্দুল জব্বার বলতো যে, রাজনৈতিক মত পার্থক্য থাকতে পারে কিন' আমাদের সম্পর্কের কোন অবনতি ঘটবে না। এখান থেকে তার উদার মনের পরিচয় পাওয়া যায়। সে কত উদার, কত মহান ছিল।
তার সাথে ক্যাম্পাসে বসে প্রায়ই আলাপ হতো, সমাজ নিয়ে, পরিবেশ নিয়ে। কিন্তু কোন দিন তার সাথে শিবির নিয়ে আলাপ আলোচনা করতাম না। তার সাথে সমাজ নিয়ে আলোচনায় বসলে বলতাম যে, ইসলাম একমাত্র বিধান যার মাধ্যমে মানুষের চরিত্র পরিবর্তন হতে পারে। যার ফলে সমাজের পরিবর্তন হতে পারে।
এভাবে কিছুদিন চলার পর আব্দুল জব্বারকে বললাম যে, তুই হলে চলে আয়। তারপর সে আমার রুমে চলে আসে এবং আমার নিকট অবস্থান করতে থাকে। আমার রুমে অবস্থান করা অবস্থায় কোনদিন তাকে শিবিরের কথা বলি নি। সে হলে আসার পর শিবিরের কর্মীদের ব্যবহারের ফলে শিবিরের পতাকা তলে আবদ্ধ হয়। শিবিরের পতাকাতলে আবদ্ধ হওয়ার পর বলতো যে, আমি অনেক আগে থেকে এ ধরনের সংগঠনের চিন্তা করতাম, যারা পারবে সমাজ সংস্কার করতে। শিবিরের ভিতর এধরনের গুণাবলী সম্পন্ন কর্মী বাহিনী দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যে ব্যক্তিটি এতদিন শিবিরের কথা শুনতে পারত না সেই ব্যক্তিটি বলতে লাগলো যে, এতদিন শিবির থেকে দূরে থেকে আমি বড় ভুল করেছি।
সংগঠনে আসার পর থেকে সে এত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়েছিল যে, সবার চোখে সে অনুপ্রেরণার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে কয়েক মাসের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। সে সবার সাথে বন্ধুসুলভ ভালবাসা গড়ে তুলেছিল। তার মাঝে সবচেয়ে যে বৈশিষ্ট্যটি লক্ষ্য করা গিয়েছিল সেটা হচ্ছে নেতার প্রতি চরম আনুগত্য ও পরস্পরের প্রতি উদার, সদয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ ভালবাসা। কোন নেতা আসলে যে সে কি দিয়ে সম্মান করবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। সে সংগঠনের ভাইদেরকে এত ভালবাসত যে, তার ব্যবহারের মাধ্যমে তা ফুটে উঠতো। এভাবে কিছুদিন যেতে না যেতেই, গোলাপের কুঁড়ি ফুটতে না ফুটতে অকালে ঝরে পড়ল। সে ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ইসলামের চির দুশমনদের হাতে গুরুতরভাবে আহত হয়। এই আহত অবস'ায় সে প্রায় দশ মাস চরম যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটায়। দশ মাসের মধ্যে সে প্রায় নয় মাস হলে ছিল মাত্র এক মাস হয়তো বাড়িতে ছিল। তার বুকে চরম আঘাত পাওয়ার কারণে চলা ফেরা করতে পারতো না। সে প্রায় সময় বিছানায় শুয়ে থাকতো। হলে খাওয়ার অসুবিধা হতো বলে তাকে বাড়িতে যেতে বললে বলতো যে, ‘বাড়িতে আমার ভাল লাগে না। সংগঠনের ভাইদেরকে চোখে দেখতে পেলে আমি খুব শান্তি পাই।’ এখান থেকে বুঝা যায় যে, সে সংগঠনকে যেমন ভালবাসতো তেমনি সংগঠনের ভাইদেরকেও ভালবাসত।
আহত হয়ে থাকা অবস'ার একটি ঘটনা বলি। আমি সংগঠনের কাজে বাইরে গিয়েছিলাম। রুমে এসে দেখি যে, আব্দুল জব্বার রুমে নেই। রুমে এক ভাই ছিল তাকে বলা হলো, আব্দুল জব্বার কই? তিনি উত্তরে বললেন, আব্দুল জব্বারকে কিছুক্ষণ আগে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। যেহেতু বুকে ব্যথা থাকার কারণে তেমন চলাচল করতে পারতো না, তাই আমি চিন-ায় পড়ে গেলাম সে কোথায় যাবে! আমরা কয়েক ভাই তাকে খোঁজাখুঁজি করতে লাগলাম, কোথাও পাওয়া যায় না। তখন রাত প্রায় সাড়ে নয়টা। যাহোক খোঁজ করতে করতে এক পর্যায়ে মসজিদে গেলাম। মসজিদে গিয়ে দেখি অন্ধকারের ভিতর মসজিদের এককোণে দুই হাত তুলে বসে বসে একাকী কাঁদছে। কাঁদছে আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে এই বলে, “হে আল্লাহ! আমি তো কোন অপরাধ করিনি, আমি তো কারো ক্ষতি করিনি, কেন তারা আমাকে এ অবস্থা করলো! না, আমার একটি অপরাধ আছে সেটা এই যে, তোমার প্রতি আমি ঈমান এনেছি। হে আল্লাহ! তুমি এই সংগঠনকে শক্তিশালী কর। তুমি এই জমীনে তোমার দ্বীনকে বিজয়ী করে দাও এটাই আমার কামনা, এটাই আমার বাসনা।” এখান থেকে বুঝা যায় যে, সে দ্বীনকে কিভাবে বুঝে ছিল। কিভাবে জেনে ছিল। আর একদিনের ঘটনা বলি সে বুকের ব্যথায় যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তখন তাকে আমি বলি যে “তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?” তখন সে উত্তর দেয়, ‘কষ্ট নারে কষ্ট না’। এইতো আমার আত্মতৃপ্তি। আমার আত্মতৃপ্তি এ জন্য যে, আমি সেই মহাশক্তিধর আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান এনেছি। ইসলামের দুশমনেরা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এতো আমার চাওয়া, এতো আমার পাওয়া। শাহাদাত মুমিন জীবনের কাম্য তাই এইতো আমার কামনা, এইতো আমার বাসনা ছিল।” এভাবে কঠিন যন্ত্রণার মধ্যেই তার জীবন অতিবাহিত হতে থাকে, কিন' কোন দিন তার মধ্যে হতাশা দেখা যায়নি। আহত অবস'ায় তাকে আমি নয় মাস নিজের কাছে রাখার কারণে অনেক কিছু জানার ও বুঝার সুযোগ হয়েছিল। কিন' ইনে-কালের পূর্বে তার কাছে থাকতে না পেরে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়।
আমি ডিসেম্বর মাসের সতের তারিখ শিক্ষা সফরে চট্টগ্রামে যাই। সফরে যাওয়ার পূর্বে তার কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইতে গেলে সে বলে ‘এটা শিক্ষা সফর এটাতে যাওয়া উচিৎ। এটাতো আর পাওয়া যাবে না, আমার না হয় একটু কষ্ট হবে।’ বিদায়ের সময় আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো, ‘যা তুই ভালভাবে ফিরে আয়।’ আমি ভালভাবে ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ফিরে আসি, কিন' এসে শুনি, আব্দুল জব্বার এই দুনিয়াতে আর নেই। তিনি গতকাল আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার শাহাদাতের কথা শুনে আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম। আমাকে খুব অপরাধী মনে হয়েছিল এই জন্য যে, শেষ মুহূর্ত পর্যন- তার সাথে থাকতে না পেরে। আমি তার শাহাদাতের খবর পাওয়ার পরের দিন অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর তাদের বাড়ির দিকে রওনা হই। তাদের বাড়িতে গিয়ে দুই দিন অবস'ান করি এবং সকল স-রের মানুষের সাথে আলাপ করি। মৃত্যুর পূর্বে শহীদ আব্দুল জব্বার আমার নাম বারবার উচ্চারণ করেছিল। যার ফলে সবার নিকট আমার নাম পরিচিত ছিল। আমার নাম জানা থাকার কারণে আলাপকালে মনে হয় তারা শহীদ আব্দুল জব্বারকে পেয়ে গেছে।
যত লোকের সাথে আলাপ হয়েছে সবার একই কথা আব্দুল জব্বার খুব ভাল ছেলে ছিল। এই রকম ভাল ছেলে আমাদের গ্রামে মনে হয় আর নেই। সে সবার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করতো। সে যেমনটি ছিল সহপাঠিদের সাথে তেমন ছিল শিশু কিশোর ও বৃদ্ধদের সাথে। শিশুদেরকে নিয়ে যেমন খেলা করতো তেমন বৃদ্ধদেরকে সম্মান প্রদর্শন করতো। সে সবার সাথে মিশুক ছিল। শহীদ আব্দুল জব্বারের শখ ছিল পানি সেচে মাছ ধরা। তার প্রিয় খাবার ছিল ছোট মাছ। তার শিক্ষকদের সাথে আলাপ হয়েছে। তার শিক্ষকদের ভাষ্য এই যে, ‘এই ধরনের ভদ্র ছেলে আমরা আর পাইনি।’
তার জীবন চরিত্র আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে ও এই ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা শেষ করা সম্ভব নয়। তাই সর্বশেষে এটাই বলবো, যদি আমরা তার চরিত্র থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, তবে আমরা সার্থক হবো এবং তার ফেলে যাওয়া কাজ আঞ্জাম দেয়া আমাদের দিয়ে সম্ভব হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তার চরিত্র ও কর্ম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ইসলামী আন্দোলনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার তৌফিক দান করুন, আমীন।
(লেখক: শহীদ আব্দুল জব্বারের ক্লাসমেট ও সিনিয়র অফিসার, ইসলামী ব্যাংক, রাজশাহী শাখা)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন