ঈমানদারগণ পরস্পর পরষ্পরের ভাই। ভ্রাতৃত্বের মহান ভীতে দাড়িয়ে আছে ইসলামের সুমহান ইতিহাস। যে আরবের ইতর মানুষেরা খুনো-খুনো হানাহানি ছাড়া কিছুই বুঝতো না, তরবারীতেই যারা খুঁজত সব প্রশ্নের উত্তর, যারা নারীকে মনে করতে গৃহস্তালী আসবাবপত্রের মতো ব্যবহার্য বিষয়, জীবন্ত কবর দিত যারা কন্যা সন্তানদের, যারা অপরাধের সকল শাখায় তৈরী করেছিল জঘন্য ইতিহাস, সেই অধমেরাই ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসে কোরআনের পরশে হয়েছিলেন ইতিহাস শ্রেষ্ঠ সোনার মানুষ। তাদের নাম মনে এলেই তাই শ্রদ্ধায় বিগলিত হয় হৃদয়, প্রতিটি নাম উচ্চারনের পরই আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলি “রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু”। যারা ইসলামপূর্ব যুগে ছিলেন পরস্পরের শত্রু, যারা ভাইয়ের রক্ত পানের নেশায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে বছরের পর বছর, ইসলামের ছায়ায় আবার তাকেই পেয়ে হয়ে গেলেন সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল, হলেন সবচেয়ে প্রিয় ভাই।
ইসলামের প্রধান শক্তি ভ্রাতৃত্ব। ইসলামের প্রতিটি মৌলিক ইবাদত শিক্ষা দেয় ভ্রাতৃত্বের। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতে সমাজের সবচেয়ে শরীফ ব্যক্তিটির পাশে নির্ভয়ে, নিঃশঙ্কোচে দাড়ায় রাস্তার ঝাড়ুদার, ভাইয়ের পাশে দাড়াতে ভয় কিসের, বরং শ্রদ্ধায় থাকে কানায় কানায় পূর্ণ হৃদয়। তাইতো বারে বারে ইসলামকে দূর্বল করতে ইসলাম বিরোধীরা ষড়যন্ত্র করেছে পবিত্র ভাতৃত্বের বন্ধনে ভাঙ্গন ধরানোর। কখনো উস্কে দেয়া হয়েছে উগ্র জাতীয়তাবাদ, কখনো তুলে ধরা হয়েছে জাতি, বর্ণ, গোত্র, ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতির ইস্যু। মদীনায় বেড়ে ওঠা ইসলামকে দূর্বল করতে বারে বারে আনসার মুহাজির ইস্যুকে উস্কে দেয়ার অপচেষ্টা হয়েছে, অনেক সময় ষড়যন্ত্র সফলও হয়েছে। যখনই ইসলামের ভ্রাতৃত্বের ভীতে কুঠারাঘাত পরেছে, ইসলাম হয়েছে ততধিক দূর্বল। আজো দিকে দিকে ইসলামকে দূর্বল করতে ইসলামের মূল দীক্ষা ভ্রাতৃত্বের উপর চলছে চতুর্মূখী আক্রমন। কখনো আমরা বুঝতে পারি, বুঝতে পারলে সচেতনভাবে মোকাবেলা করি, আবার কখনো বুঝতে হয়ে পড়ি পুরোপুরি অক্ষম।
শত্রু যতবার স্বরূপে আক্রমন করেছে আমরা তার মোকাবেলা করেছি দৃঢ় হস্তে। কিন্তু শত্রুরা কৌশল বদলায় বারে বার। চৌকষ শত্রু জানে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করা যায় ঈমানের। তাইতো ইবলিশ হানা দেয় আদমের (আঃ) বেহেস্তে, হানা দেয় বন্ধুর বেশে, জ্ঞানের অবারিত দ্বার উন্মোচিত করার প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে সীমালংঘনের, করে পদচ্যুত। আজো ইসলামের শত্রুরা ইসলামের উপর আঘাত হানে ইসলামের নামে, ভালোর দোহাই দিয়ে, কল্যাণের দোহাই দিয়ে। ওরা জানে, একটু অসচেতন হলে ইসলামপ্রিয় ঈমানদারেরা ইসলামের আবরণে শয়তানের বড়শি ঠিকই নেবে গিলে।
এই দৃঢ় ভ্রাতৃত্ব যাতে ভেঙ্গে না যায় তার জন্য এক মুমিনকে আরেক মুমিনের আয়না বলে আখ্যা দিয়েছে ইসলাম। মুমিন তার অন্য ভাইয়ের দোষ দেখে তাকে সতর্ক করবে, সংশোধনের জন্য, তার অগোচরে কারো কাছে দোষ তুলে ধরে গীবতে জড়াবে না মুমিন। তাইতো গীবতকে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার চেয়েও জঘন্য বলা হয়। অপর ভাইয়ের সংশোধনী এহতেছাব ছাড়াও মুমিন নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে। আর এসব যদি শিথিল হয়ে যায় তবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে চীড় ধরা অসম্ভব নয়।
মুমিনরা কান কথায় বিশ্বাস করে না, এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে আরেক ভাইয়ের কাছে কিছু বললেই বিশ্বাস করে সিদ্ধান্ত নেয় না, বরং যাচাই বাছাই করে তবেই প্রকৃত সত্যকে মেনে নেয়। আর এ যাচাই বাছাইয়ের জন্য প্রয়োজন চরম আত্মসংযম। আত্মসংযমের শিক্ষা তাই ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, এ শিক্ষা পাই সিয়াম সাধনে। যারা বয়সে তরুন, বিবেকের চেয়ে আবেগ যাদের বেশী তাদেরকে সংযমী হওয়ার জন্য তাই রোজা রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ইসলামে। আর নবীর শিক্ষা, দাড়ানো অবস্থায় রাগ হলে বসে পরা, বসা অবস্থায় রাগ হলে শুয়ে পড়া, ওজু করা ইত্যাদি আত্ম নিয়ন্ত্রণে যে কতটা বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি তা আজ স্বীকার করে অমুসলিম পন্ডতিরাও।
ইসলাম ভ্রাতৃত্ব রক্ষায় এতো সব শিক্ষার পরও আমরা কি ভুলে যাব সবকিছু? ভুলে যাব তাদের কথা যারা অগ্রাধিকার দিয়েছিলে নিজের উপর অন্য ভাইকে। যাদের ত্যাগে খুশী হয়ে আল্লাহ বলেন “এবং সে ব্যক্তি নিজের উপর অন্যদের অগ্রাধিকার প্রদান করে যদিও তারা ক্ষুধাতুর থাকে”। আমরা কি ভুলে যাব ইসলামের সকল শিক্ষা, ভুলে যাব আল্লাহর নির্দেশ, “তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ় ভাবে আকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না” কিংবা ভুলে যাব “আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং সেই সব লোকেরও যারা তোমাদের মধ্যে সামগ্রিক দায়িত্ব সম্পন্ন”।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক শিক্ষার উপর আমৃত্যু অবিচল রাখুন। আমীন।
1 টি মন্তব্য:
sukran jajakalla khayran
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন