বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ভালোবাসার অধিকার দেব না ছেড়ে (উৎসর্গঃআল্লামা সাঈদীকে)

ভালোবাসার সুগন্ধি দিয়ে ভরপুর এমন কিছু ভালবাসা আছে। আছে কিছু ভালোলাগা স্মৃতি ; যা ভোলার মত নয়; যা চিরজীবন রজনী গন্ধ্যার মত হৃদয়ে সৌরভ ছড়িয়ে বেড়ায়। সে স্মৃতির গুলবাগে প্রতিনিয়ত জন্ম নেয় নানা রঙের বাহারি ফুল। সুগন্ধি দিয়ে মাতিয়ে রাখে সারাক্ষন। সেই স্মৃতির ডালে ডালে উড়ে বেড়ায় রঙ বেরঙ্গের পাখী। সেই পাখিগুলো একত্রিত হয়ে হৃদয়ে অনুপ্রানিত করে কখনো আবার আন্দোলিত করে। এই স্মৃতি কোন মেমরী সেলে সেভ করে রাখারও প্রয়োজন হয়না। একটু চিন্তা করে মনেও করতে হয়না তা এমনিতেই মনে পড়ে যায়।

পৃথিবী এমন কিছু মানুষের জন্ম দিয়েছে যারা চিরসজীব,চির সতেজ, তাদেরকে দেখলে ভালোবাসার সকল বাধ ভেঙ্গে দিয়ে ,দিগন্তের পানে মন ছুটে যেতে ইচ্ছে হয়। নদী যেভাবে সাগরের ভালবাসায় সাগরের পানে ছুটে চলে। তেমনি ভাবে 'এই মানুষ গুলোর ভালবাসা পাওয়ার জন্য ধেয়ে আসে জনতার ঢল। সরাসরি তাদেরকে দেখার জন্য আকুল প্রান ব্যকুল হয়ে উঠে। কোন প্রাচীর দিয়েই সেই ভালোবাসা আটকানো যায়না। এই ভালোবাসার কোনো নথীপত্র নেই। নেই কোন রক্তের সম্পর্ক তবুও এই ভালোবাসা অন্য সকল ভালোবাসার চাইতে কোন অংশে কম নয়। বরং বেশীই বলা যেতে পারে। এই ভালোবাসা আত্মার সাথে আত্মার; যাকে কখনো দ্বিখন্ডিত করা যায়না। করতে গেলে নিজেকেই দ্বিখন্ডিত হতে হয়।


আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, তেমনি একজন মানুষ, যার আত্মার সাথে কোটি কোটি আত্মার ভালোবাসার সম্পর্ক। যিনি সারাজীবন বাংলা ভাষী কোটি কোটি তৌহিদী জনতাকে সুমিষ্ট কন্ঠে ডেকে চলেছেন আল্লাহর পথে, সত্যের পথে, ঈমানের পথে, কল্যাণের পথে। আর তার সুমধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাইতো তার মাহফিলে ছুটে আসে জনতার ঢল। এ ভালবাসায় কোন খাদ নেই , নেই কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের বিন্দু পরিমান অসৎ উদ্দেশ্য। নিখুত এই ভালোবাসা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই এই ভালোবাসা । নিছের সাম্প্রতিক এই ছবিটি দেখে কি সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয়না!

মনের অজান্তে হলেও আমিও হয়তো সেই ভালোবাসার টানেই তার তেমনি একটি মাহফিলে ছুটে গিয়েছিলাম। ''আমি তখন ক্লাস সেভেনের স্কুল বালক। ক্লাসে টিপিনের ঘন্টা বেজে উঠলো, যেইনা ঘন্টা বাজলো, এক দৌড়ে ক্লাসের বাহিরে, গেটের সামনে যেতেই দেখী লম্বা একটি ব্যাত হাতে নিয়ে, হুজুর স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। স্যারের নির্দেশ আগে নামাজ পড় ,তারপর খেতে বাহিরে যাও। নামাজ পড়ে হাঁটছি গন্তব্য খাবার হোটেল। টিপিনের জন্য মায়ের দেয়া পাঁচ টাকা পকেট থেকে বাহির করে হাতে নিলাম। কিন্তু একি চারদিকে এত মানুষ কেন! ওরা সবাই দল বেঁধে কোথায় যাচ্ছে। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলাম। যাক, কিছুদূর যেতেই প্রতিবেশী মাদ্রাসা পড়ুয়া এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। সালাম দিয়ে উনাকে বললাম, ভাইয়া, এখানে এত মানুষ কেন? ছোট,ছোট কয়েকটা মিনি বাস সারিবেধে দাঁড়িয়ে আছে, সকলের চোঁখে,মুখে যেন এক উৎসবের আমেজ আমি দেখতে পেলাম। এত আনন্দ নিয়ে ওরা সবাই কোথায় যাচ্ছে? ভাইয়া, বললেন, আজ মাইজদী সদরে সাঈদী হুজুর আসছেন , সবাই উনার মাহফিলেই যাচ্ছে। ভাবলাম, এতমানুষ এত দূর থেকে যখন যাবে; আরো না জানি কতো জায়গা থেকে আরো কতো লোকজন আসবেন! এই মানুষটির কথা লোকমুখে আমি কতো শুনেছি। সিডিতেও উনার ওয়াজ শুনেছি কয়েকবার। কি সুন্দর সুমিষ্ট কন্ঠ তার, হৃদয় তো নয় যেন আল্লাহ , আর রাসূলের ভালোবাসায় অবিরাম প্রবাহিত ঝর্নাধারা। মুখে কোরান,হাদীসের কি নিদারুন বহিপ্রকাশ। এমন বাংলাভাষী মুসলিম কে আছেন যিনি সাঈদীর এই সুমধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে চোঁখের জলে বুক ভাসিয়ে দেয় নি?

ইস! যদি উনাকে সরাসরি একবার দেখতে পারতাম। আমাদের এত কাছে এসে তিনি ওয়াজ করবেন, লাখো জনতা সেই ওয়াজ শুনে হৃদয়টাকে সিক্ত করবেন। আমিও যদি যেতে পারতাম। উনাকে বললাম,ভাইয়া আপনিও কি ঐ মাহফিলেই যাচ্ছেন? বললেন হ্যা, আমিও ঐ মাহফিলেই যাচ্ছি। আমার সাথে আরো কয়েকজন যাবে তাদের জন্যই অপেক্ষা করছি। একটু আবেগ তাড়িত কন্ঠেই ভাইয়াকে বললাম, ভাইয়া,আমিও আপনার সাথে যেতে চাই আমাকে আপনার সাথে নিবেন? উনি আবার আমাকে ছোট ভাইয়ের মতই স্নেহ করতেন। বড় ভাইয়ের মত আমিও তাকে শ্রদ্ধা করতাম এবং এখনও করি। তিনি চমকে গিয়ে উত্তর দিলেন, তুমি যাবে আমার সাথে? বললাম হ্যা,আমি যেতে চাই উনাকে সামনা সামনি দেখা আমার খুব ইচ্ছা। কিন্তু,ঊ... বলে উনি আর কথা বলছেন না। বুঝতে পারলাম উনি কি ভাবছিলেন। হ্যা, আমার মায়ের কথাই ভাবছিলেন, মা আমার আবার আমাকে নিয়ে একটু বেশীই চিন্তা করেন। বাসায় যেতে একটু দেরী হলেই হাঁজারো দুশ্চিন্তা মায়ের মাথায় ঘুরপাক করতে থাকে। কোথায় গেলে? কেন গেলে? আমাকে বলে গেলেনা কেন? উহ, এতোসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে মাঝে মাঝে মনে হতো। মায়ের নাম 'মা' নাহয়ে পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা আফ,বি,আই.. রাখা হলে বুঝি ভাল হতো। যাক, মায়ের তুলনা মা, এর আর হয়না তুলনা। ভাবছি মাকে তো বলা সম্ভব না; বাসায় গিয়ে মায়ের অনুমতি নিয়ে আসতে আসতে উনারা ততক্ষনে মাহফিলে গিয়ে উপস্থিত হবেন। আমার আর যাওয়া হবেনা। ভাইয়াকে বললাম, না কোনো সমস্যা হবেনা। বাসায় গিয়ে মাকে বুঝিয়ে বলবো। বলছি আর ভাবছি বাসায় গিয়ে নির্গাত আজ মায়ের হাতের মার খেতে হবে; তাতে কি এতো আর নতুন নয় ; ঐ রকম মার আরো বহুবার খেয়েছি। মায়ের হাতের মার শরীরে ভিটামিনের মত কাজ করে। একটু মার খেয়ে যদি কোটি জনতার প্রানের প্রিয় সাঈদী হুজুরকে স্বচক্ষে সামনা সামনি দেখতে পাই তাতেই আমি অনেক খুশি। অনেক অনুনয়ের পর ভাইয়া রাজী হলেন। নিরবে আনন্দের অদৃশ্য হাঁসিতে হাঁসলাম। বিনয়ের সাথে ভাইয়াকে বললাম। ভাইয়া,টিকেটের মূল্য কত? উনিও সাথে সাথে স্নেহভরা উত্তরে বললেন,ওটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা। আমার ক্ষুধার্থ মুখের দিকে তাকিয়ে হাতটি ধরে হোটেলের ভিতরে নিয়ে গেলেন। আমাকে গরম গরম সিঙ্গারা খাবালেন।

এবার প্রতিক্ষা গাড়ি কখন ছাড়বে, কখন গিয়ে পৌছব মাহফিলে, একটুপর গাড়ি ছাড়লো। যেন চারদিকে আনন্দের মেলা বসেছে। বর্ষার কাঁদা পথ মাড়িয়ে প্রকৃতি এখন শরতের সাদা শুভ্র নীল আকাশ। রাস্তার দু'পাশে নতুন অঙ্কুরিত ধানের চারায় মাঠ হয়ে আছে উজ্জ্বল । খেলা করে সবুজের মধ্যে সাদা কাশ ফুল ।এককথায় প্রকৃতিও আজ অসাধারন রুপে সেজে বসে আছে নব বধূর মত। ইংশাআল্লাহ, মাহফিলের কোন সমস্যা হবেনা। মাহফিলের অনেক আগেই গাড়ি থেকে নামতে হলো। চারদিকে ততক্ষনে লোকে লোকারন্ন। ভালোবাসার এই বহিপ্রকাশ দেখে প্রথমেই অবাক হলাম। হুজুরকে দেখার আকাঙ্খা আরো বেড়ে গেল। মনে মনে ঠিক করলাম মাহফিলের সামনে গিয়ে বসবো, যাতে আল্লা্মা সাঈদীকে কাছ থেকে দেখতে পাই। কিন্তু এই আকাঙ্খা কি শুধু একা আমার ? উনাকে মানুষ যে এত ভালবাসে তা বুঝতে আর বাকী রইলো না। এভালোবাসার অধীকার যেন কেউই ছাড়তে রাজী নয়। তাইতো সামনের সারিগুলো আগে থেকেই দখল হয়ে আছে। প্রতিবেশী সেই বড় ভাইকে বললাম ভাইয়া, মাহফিল শেষে কোথায় দাঁড়াবো আমাকে বলে দিন; মাহফিল শেষ হওয়া মাত্রই আমি ওখানেই এসে দাঁড়াবো। আস্তে আস্তে মাহফিলের সামনের দিকে এগুতে থাকলাম। কিছুদূর যেতে পিছন থেকে এত জোরে ধাক্কা খেলাম যার ফলে বাশের সাথে লাগানো টিউব লাইটের ট্রেন্সফার খুলে মাথার একপাশে এসে পড়লো। উহ,করে উঠলাম আর সাথে সাথে মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত বেরুলো কিনা। তখনি মায়ের কথা মনে হলো। মা, যদি শরীরে কোনো রক্ত দেখে তবে আজ নির্গাত মাথাঘুরে পড়বে, যাক রক্ত বেরুয়নি কিন্তু যথেষ্ট ফুলে গিয়েছিল। ভাবলাম, একটু আকটু কষ্ট না পেলে কি আর ভালোবাসা মজবুত হয়। গাঢ় হয় ভালোবাসার রং? হয়না....।

সকলের প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকলের প্রিয় আল্লামা সাঈদী সালামের মধ্যেদিয়ে মাহফিলে এসে উপস্থিত হলেন। ততক্ষনে মাহফিল জনসমুদ্রে পরিনত হলো। আর সকলের উল্লাসিত উচ্ছাসে পুরো মাহফিলটা এখন যেন এক ভালোবাসার উত্তাল সাগর, এত্ত ভালোবাস! এই ভালোবাসার উৎস কোথায়? তাইতো, এই ভালোবাসার সাথে যে আল্লাহর ভালোবাসার সম্পর্ক। রাসূলের ভালোবাসার সাথে সম্পর্ক। সাহাবায়ে কেরাম সহ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষের ভালবাসা এই ভালোবাসার সূতোয় আটকে আছে, এমন ভালোবাসার অধীকার কি ছেড়ে দেয়া যায়। যায়না। কিছুক্ষন তৃপ্তিনিয়ে অপলক চোঁখে তাকিয়ে ছিলাম উনার পবিত্র চেহারার দিকে। কি যাদু আছে এই চেহারায় যে, আশি বছরের বৃদ্ধ লোকটিও সেই দূর থেকে লাঠিতে ভর করে ছুটে এসেছেন এই মাহফিলে, তাকে এক নজর দেখার জন্য। তার মুখ থেকে কিছু কোরান হাদীসের কথা শুনে যদি ঈমানটাকে একটু তাজা করা যায় সেই জন্য।
আস্তে আস্তে আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে উনি শুরু করলেন ওয়াজ। মাহফিলে আসা লাখো তৌহিদী জনতাকে সুমিষ্ট কন্ঠে ডেকে চলেছেন আল্লাহর গুনগানে, রাসূলের আদর্শের প্রতি; ইসলামের প্রতি সাহাবাদের যে সীমাহীন আত্ম ত্যাগ, বেলাল (রাঃ) ও খাব্বাবের সেই কষ্টের কথা স্বরন করিয়ে দিচ্ছেন একে একে। কাফেরের পাথরে পিষ্ট হয়ে উত্তপ্ত মরু ময়দানে ছটফটিয়ে আহাদ আহাদ রবে এক আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে চলেছেন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল (রাঃ)। বাতিলের অঙ্গার কিছুতেই পুড়িয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ করতে পারে না সূর্যের চেয়ে তেজদীপ্ত ঈমান, তাইতো দেখি খাব্বাবের চর্বি গলে গলে নিভে যেতে বাতিলের যত অংগার-অহংকার। হৃদয়ের সকল আবেগ উজাড় করে তিনি বর্ণনা করছেন রাসূল (সাঃ) এর অন্তিম সময়ের কথা, বর্ণনা করছেন নামাজের প্রতি নবীজীর গুরুত্বের কথা। অসুস্থ নবীজী মসজিদে নববীর পানে তৃষার্ত নয়নে তাকিয়ে মুসল্লীর সারিতে। দুজনার কাধে ভর দিয়ে আজ আর যেতে পারেন নি মুত্তাকীদের মাহফিলে। মাওলানার আর্দ্র কন্ঠের বর্ণনায় আমি যেন দেখতে পেলাম নবীজীর তৃষ্ণার্ত মুখ, জীবনের শেষ জামায়াতের তৃষ্ণা, শেষ নামাজের তৃষ্ণা, আল্লাহর সাথে মেরাজের তৃষ্ণা। পিতা-মাতার খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত লাভের কথা বলতে গিয়ে উনার চোঁখে তাকিয়ে দেখলাম চোঁখ দু'টো অশ্রুতে টলমল করছে। হৃৎপিন্ডটা আস্তে আস্তে ফুলে উঠলো, লৌকিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে শান্ত হয়েছিল সেদিন এ হৃদয়। রাসূল প্রেমে যেন তার হৃদয় ভেঙ্গে যায়, কি অপরুপ এই ভালোবাসা। এমন ভালোবাসার অধীকার কি কখনো ছেড়ে দেয়া যায়?

মাহফিল শেষ ফিরে যেতে হবে বাড়ি কিন্তু মন যে যেতে চাইছেনা। ইচ্ছে করছিল সারারাত ধরে মাওলানার সুমধুর কন্ঠের ওয়াজ শুনি। চারদিকে এত ভিড়,দাঁড়িয়ে আছি, অনেকক্ষন পর ঐ ভাইয়াটি এলেন। এখন আর গাড়িতেও বসার জায়গা নেই, কি করা সারা পথ দাঁড়িয়ে যেতে হলো ,যেখান থেকে উঠেছিলাম, গাড়ি গিয়ে সেখানে থামলো। কোন রিক্সা না পাওয়াতে বাড়ি পর্যন্ত বাকী পথটা ভাইয়া সহ আমাকে হেঁটেই যেতে হলো। চারদিকে অন্ধকার দেখে বুঝতে পারলাম অনেক রাত হয়েছে, সাথে সাথে মায়ের কথা মনে পড়ল, বুকটা ধড় করে উঠলো। আল্লাহ জানে এতক্ষনে মায়ের কি হয়েছে! বাড়ির কাছা কাছি যতই এগুচ্ছি বুকের ধরপড় ততই যেন বেড়ে যাচ্ছে। ভাবছি মাকে গিয়েই জড়িয়ে ধরে বলবো, দেখ মা তুমি রাগ করোনা, যেখানে গিয়েছিলাম সেখানে তোমাদের কথাও হয়েছে। হুজুর বলেছে মাকে যেন কখনো কষ্ট না দেই তাইতো আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোমাকে আর কখনো কষ্ট দিবোনা, এখন থেকে তোমার সব কথা আমি শুনবো। তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসব। ভাবতে ভাবতে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দরজাটা খোলা রেখেই মা বসে আছে , পাশে আরো পরিচিত কয়েকজন। মায়ের চোঁখে তাকিয়ে দেখলাম ইতিমধ্যেই মা কেঁদে কেঁদে চোঁখ দু'টো ফুলিয়ে ফেলেছে। আমাকে দেখা মাত্রই মা, কিভাবে যে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো! আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। যে কথাগুলো মাকে বলবো বলে ভাবছিলাম। আমার মুখে যেন তালা আটকে গেল। কিছুই বলতে পারছিনা। পরে অবশ্য হালকা একটূ মারও খেয়েছিলাম। সেটাও ছিল মায়ের আদর। মায়েরা এমনি হয় শাসনের মাঝেও মায়েদের ভালবাসা জড়িয়ে থাকে। মাকে সব বললাম। ঐযে তুমি সিডিতে যেই হুজুরেরে ওয়াজ শুনো কাঁদো , আজ উনার মাহফিলে গিয়েছি উনাকে আজ সামনে থেকে দেখেছি। মা অনেক খুশি হলেন। আমাকে জড়িয়ে আবারো অনেক আদর করলেন। মনে মনে প্রিয় হুজুরকে অনেক সালাম কৃতজ্ঞতা দিলাম। তোমার জন্য আজ মায়ের এই ভালোবাসা পেলাম। তোমাকেও আজ ভালোবেসে নিলাম। তোমার সুখে দুঃখে সারাজীবন তোমাকে ভালোবেসে যাব। ভালোবাসার এই অধীকার কখনো ছেড়ে দেবোনা।


আজ দীর্ঘ দশ বছর পর এসে যখন দেখছিআল্লামা সাঈদীকে নিয়ে ওরা চার দেয়ালে আবদ্ধ করে রেখেছেতখন সেই দিনটির কথাই মনে পড়ছে বারবার। তার ভালোবাসার টানে ছুটতে গিয়ে সেদিন মাথায় আঘাতমায়ের হাতের মার খেয়ে এই চামড়ায় আঘাত লেগেছিল কিন্তু আজ প্রিয় মানুষটি আল্লামা সাঈদীকে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে হৃদয়ে রক্তক্ষরন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ আঘাত দেখা যায়নাএটা অনুভব আর অনুভুতির বিষয়। ভাবছি ওরা কি মানুষ নাকি অন্যকিছু ।আজ যদি উনি বাহিরে থাকতেন তাহলে কত মানুষই না তার সুমধুর কন্ঠের ওয়াজ শুনে নিজেকে শুধরে নিতে পারতেন। রাসূল প্রেমে দূর্বল ঈমানদারেরা ওমরের মত তেজদীপ্ত ঈমান নিয়ে জেগে উঠতেন। মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে এই নিরপরাধ কোটি জনতার প্রানের স্পন্দন এই মানুষটাকে আটকে রেখে ওরা কি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। ওরা কি ইসলামকেই চার দেয়ালে অবরুদ্ধ করার পায়তারায় মেতেছে। ওদেরকে বলে দিতে চাই তোমরা যতই তোমাদের ষড়যন্ত্রের বিধান দিয়ে তোমাদের খাতায় আল্লামা সাঈদীকে অপরাধী বানাবার চেষ্টা করনা কেন। আমাদের অন্তরে তাকে কখনোই অপরাধী বানাতে পারবেনা। ইতিহাসের প্রতি্টি পাতা খুলে দেখতে পারো। এমন মানুষরাই তোমাদের জন্য সবচেয়ে বড় অপরাধী হয়ে থাকে। যার সুমধুর জাদুর ছোয়ার হৃদয় গলে গলে ঝর্ণা হয়ে যায়সে জাদুকরের চেয়ে বড় অপরাধী বাতিলের কাছে তবে আর কে হতে পারেবাংলা ভাষী কোটি কোটি মুসলিম জনতাকে যিনি নবীপ্রেমে কাঁদতে শেখালেনতার চেয়ে তবে বড় অপরাধী আর কে হতে পারেইংশাআল্লাহ ,আবার তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। যদি এমন হতোআত্মা থেকে আত্মায় ম্যাসেজ পাঠানো যেততবে এই আত্মা থেকে প্রিয় সাঈদীর আত্মায় একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে তাকে বলতাম। ''হে কোটি মানুষের প্রানের প্রিয় সাঈদীজেনে রাখওরা তোমাকে বন্দী করেনিবন্দী করেছে আমার মত কোটি হৃদয়ের ভালোবাসাকে। আজও কোটি কোটি জনতা হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসায় জড়ানো একটি গোলাপ হাতে নিয়ে কোরানের মাহফিল সাজিয়ে তুমি ফিরে আসার সেই প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে। ওরা যতই ষড়যন্ত্রের জাল বুনকনা কেন। তোমাকে নিয়ে সর্বোচ্চ ছুড়া হিমালয়ের মত মিথ্যার পাহাড় রচনা করুকনা কেন। তোমার প্রতি আমাদের ভালোবাসা বিন্দুমাত্রও কমাতে পারবেনা। ভালোবাসার এই অটুট বন্ধন চিরজীবন শক্ত বাধনে সিক্ত থাকবে। কোন অবস্থাতেই ভালোবাসার এই অধীকার কখনো দেবোনা ছেড়ে''

কোন মন্তব্য নেই: