বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে তার পথচলা শুরু। এর পর থেকে আস্তে আস্তে, হাটি-হাটি পা, পা,করে একে একে ৩৪টি বসন্তকে পেছনে ফেলে আজ এই সংগঠনটি রচনা করেছে এক গৌরবময় ইতিহাস। এখন সে তার ৩৫তম বসন্তে পদার্পন করেছে। এরি মাঝে গঙ্গার জল গড়িয়েছে অনেক, মিশেছে সাগর মোহনায়, দীর্ঘ এই পথচলায় সাথী হয়েছে রাশি রাশি পলিমাটি, জেগে উঠেছে উর্বরা স্বর্ণদ্বীপ। ৩৪ বছর আগে যে বীজটি বপন করা হয়েছিল; সেই বীজের চারাটি বড় হতে হতে আজ এক বিশাল বটবৃক্ষে পরিনত হয়েছে, সে আজ ফুলে ফুলে পল্লবে সুশোভিত মহীরুহ। তার ডালে ডালে এক অনুপম আদর্শের গান গেয়ে উড়ে উড়ে ছুটে বেড়ায় রঙ-বেরঙ্গের পাখি। ছায়াতলে বাশিঁবাজায় রাখালের দল, ক্লান্ত পথিক দুদন্ড জিরোয় সুশীতল ছায়াতলে। আজ সে বৃক্ষ সিডর, আইলার আঘাত সয়ে সয়ে শেকড় গেড়েছে বাংলার কোটি মানুষের হৃদয়ে, তাকে চাইলেই আজ আর সহজেই উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। কিংবা মুখের ফুৎকারে উড়িয়ে দেবার স্বপ্ন; এখন আর দুঃস্বপ্নেও কোন বাতুলতার শোভা পায় না।
চারদিক আজ পরিবর্তনের হাওয়া, সেই পরিবর্তনের হাওয়ায় বদলে গেছে অনেককিছু; বদলে গেছে গ্রামের সেই ছেলেটিও; যে ছেলেটি আগে সামনে মুরুব্বী দেখলে বিনয়ের সাথে হাত তুলে সালাম দিয়ে যেত, সেই ছেলেটি আজ মুখে সিগারেটের ধোয়ায় হাতে রামদা নিয়ে বুক পুলিয়ে বেড়ায়। অথচ এমন পরিবর্তনের মাঝেও শিবিরের ছেলেগুলো এখনো ব্যতিক্রম । ওরা বড়দের সন্মান করে; মুরুব্বী দেখলে বিনয়ের সাথে সালাম দেয়; ওদের হাতে থাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলোকিত বই আল-কোরান। ছাত্ররাজনীতি নামে শিক্ষাঙ্গনে অপরাজনীতির চর্চায় যখন বিপন্ন শিক্ষার পরিবেশ, নোংরামির নিত্য বলি যেখানে মেধাবী ছাত্রসমাজ, ছাত্রনেতাদের হাতে যেথায় লাঞ্ছিত মা-বোন, নির্যাতিত শিক্ষক সমাজ, চারিদিকে অশ্লীলতার হাতছানি, যুব সমাজ হারিয়ে যাচ্ছে অশ্লীলতার মহাসমুদ্রে। অশ্লীলতার এ মহাউৎসব থেকেও নিজেদেরকে সম্পূর্ণ আলাদা রেখেছে শিবিরের এই ছেলেগুলো। ওরা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, অশ্লীলতার এ যুগে ওরা নিজেদের চরিত্রকে রাখে পুতপবিত্র, তাইতো ওরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে জামায়াতে, কোরআন অধ্যয়ন করে, হাদীস পড়ে, ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নে শানিত করে ইসলামী চেতনা। সন্মানের নামে যে সমাজ কোরআনকে বন্দী করে রাখে সিন্ধুকে, যে সমাজ ইসলামকে নিছক ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে অবহেলা করে, সে সমাজে এই ছেলেগুলো কোরআনকে বুকে আগলে রাখতে জীবনবাজী রাখে। যে সমাজে অপসংস্কৃতির জয়যাত্রায় বিলিয়ন টাকা ঢালে বহুজাতিক নব্য ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিগুলো, সেই সমাজটাকে কোরআন তেলাওয়াতে জাগাতে চায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শিবিরই সেখানে গেয়ে যায় আদর্শের গান, হেকে যায় সত্যের স্লোগান। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদর্শে সমাজটাকে পরিবর্তনের এই অগ্রযাত্রায় ওদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে এক একটি আলোকিত মশাল। অন্ধকার এই ভূবনটাকে আলোকিত করার নেশায় আচ্ছন্ন ওদের চোখগুলো। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরই একমাত্র সংগঠন যা প্রচলিত ছাত্ররাজনীতির নিয়ম-নীতির বাইরে আদর্শ সংগঠন হিসেবে কুড়িয়েছে সুনাম। অর্জন করেছে মানুষের অসংখ্য ভালবাসা।
আর এজন্য ঘুনেধরা সমাজে আদর্শের কথা, নৈতিকতার কথা বলতে তাই তাদেরকে প্রতিনিয়ত ডিঙ্গাতে হয় বাধার পাহাড়। ওরা সাব্বির হামিদ আইয়ুব,জব্বার, নোমানী, মুজাহীদ, হাফিজুর রহমান শাহীনের মতো অগনিত ভাইয়ের রক্তে পিচ্ছিল করে দিতে চায় অগ্রগতির পথ, তবুও থমকে যেতে জানে না এ কাফেলা। এগিয়ে চলে দৃপ্ত পায়ে, ওরা জানে পথের শুরু যে সবে, মঞ্জিল বহুদূরে। ইসলামী ছাত্রশিবির সবার কাছে এখন এক বিস্ময়ের নাম। কিভাবে শত অত্যাচার, যুলুম নিপীড়নকে উপেক্ষা করে আদর্শের ঝান্ডা নিয়ে সামনে এগোতে হয়, ছাত্রশিবিরের দিকে তাকালে তা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায়। এতো কিছুর পরও অন্যায় অত্যাচারে রক্তাক্ত সংগঠনটির পানে কখনো বাড়িয়ে দেয় নি কেউ সহানুভুতির হাত। ওদের ভালো দিকগুলো কখনো পৌছেনা মিডিয়া পাড়ায়। কেবলমাত্র সুযোগের অপেক্ষা খুঁজে মিথ্যে অপপ্রোচারে ব্যাপক হৈ চৈ পড়ে যায় মিডিয়া পাড়ায়। আর তখনি কিছু হলুদ সাংবাদিক তার হলদে ডানায় ভর করে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত করে শিবির সংশ্লিষ্ট সংবাদগুলো। বাহবা, কুড়িয়ে পেয়ে যায় প্রমোশন। কখনো টক শো, কখনো বিশাল বিশাল কলাম, কখনো পাঠক জরিপ। ওদের নিন্দিত মুখে শিবিরের যে ভয়ংকর গল্প মানুষ শোনেন, বাস্তবে তার সাথে মিল খুব কমই খুঁজে পান তারা। বরং যারাই শিবিরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে পথে ঘাটে, জনসমুদ্রে, তাদের আচার আচরণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট সবকিছুই সাধারণ মানুষের কাছে উদ্ভট মনে হয়। এতো অত্যাচার, যুলুম, অপপ্রচার আর নিন্দার ধূলো গায়ে না জড়িয়ে শিবিরের হাত ধরে ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে চলবে তার সঠিক গন্তব্যের পানে, ছড়িয়ে পড়বে শহরে নগরে বন্দরে, ছড়িয়ে পড়বে আটষট্রি হাঁজার গ্রামের প্রতিটি কোনে কোনে। আজ এই দিনে শিবিরের ৩৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শিবিরের সকল শহীদের প্রতি রইলো আমাদের অজস্র দোয়া এবং শিবিরের সকল ভাইয়ের প্রতি আমাদের এক একটি রক্ত গোলাপ সাথে প্রানের প্রানঢালা রক্তিম শুভেচ্ছা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন