'আজ কতদিন ধরে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করা হয় না, 'কেমন আছ বন্ধু? আমাকেও তো জানতে চাওনা আমি কেমন আছি! ফেসবুক অপেন করে এখন আর তোমাকে অনলাইনে
দেখিনা। তোমার অনলাইনে থাকা সবুজ বাতির সংকেতটা নিভে থাকে সারাক্ষন। কেন জানি আজ
আর লগইন করতে ইচ্ছে করে না। এভাবে একা একা সার্থপরের মত চলে গেলে অনন্ত অসীমের
খোঁজে। কই! যাওয়ার আগে বার্তা দিয়ে একটিবারও তো বলে গেলেনা। অবশ্য, তোমার এই সার্থপরতার জন্য আমরা তোমাকে নিয়ে অনেক গর্বিত।
ওরা তোমাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে; কেঁড়ে নিয়েছে আমাদের মাঝ থেকে। তোমার দেহটাকে করেছে রক্তাক্ত , ক্ষত-বিক্ষত। তোমার রক্তাক্ত গেঞ্জি হাতে নিয়ে মা, কেঁদেছে অনেকক্ষন। হাত তুলে আল্লাহর কাছে তোমার জন্য
জান্নাতের পরিয়াদ করেছে। তোমার নিষ্প্রান লাশ বাবার কাঁধে পাহাড়ের মত চেপেছে।
তারপরও সন্তান হারা পিতার মুখে গৌ্রবজ্জল হাঁসি খেলা করতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়েছে
অন্য সকল পিতার চোঁখ। তুমি কি জান কতোটা ভাগ্যবান তুমি! তোমার সকল বন্ধুরা ব্যথিত
এই মন নিয়েও তোমাকে নিয়ে আজ ওরা কতোটা গর্বিত। এমন অনেকেই আছে যাকে তুমি কখনোই
দেখনি তবুও ওরা তোমার জন্য হাউমাউ করে কেঁদেছে। কেন কেঁদেছে তুমি কি বুঝতে পেরেছো!
কারন,
তুমি এক অনুপম আদর্শের অনুসারী এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ
হয়েছিলে। এই বন্ধন আত্মার সাথে যা আল্লাহপাক এই আত্মাগুলোকে পরস্পর জুড়ে দিয়ে
থাকেন।
যে স্বপ্নকে বুকে ধারন করে পথ চলেছিলে এতোদিন, তোমার সেই স্বপ্নটা আজ পূরন হয়েছে।
তুমি বলেছিলে হে আল্লাহ, আমাকে উপহার দিও শহিদী মরন। সেই উপহার তোমার মিলেছে, তুমি আজ শহীদ হয়েছো। আল্লাহর ঐ সকল প্রিয় বান্দাদের মাঝে তুমিও আজ অন্তর্ভুক্ত হলে। কেননা, আল্লাহর ঐ সকল প্রিয় বান্দাদের মত তোমারও লক্ষ্য ছিল আল্লাহর পথে লড়াই করে বাতিলকে উৎখাত করা। ওরা তোমাকে একবার মেরে অনন্তকালের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে পৃথিবীর বুকে আমাদেরী মাঝে। মহান আল্লাহইতো , পবিত্র কোরানে বলেছেন, ''যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাঁদেরকে তোমরা মৃত বলো না, বরং তাঁরা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করতে পারো না।'►► আল-বাকারা:১৫৪
তাহলে সেই আল্লাহর চেয়ে মহা শক্তিধর ক্ষমতার
অধিকারী আর কে আছেন এই পৃথিবীতে? যে তোমাকে আবারো নির্মমভাবে মেরে ফেলতে চাইবে। তুমি বেঁচে
আছ, তুমি বেঁচে থাকবে। যুগ থেকে যুগান্তর ধরে; আদর্শের এই মশাল হাতে নিয়ে যারাই
পথ চলবে; তাদের সেই পথ চলায় তুমিও তাদের সঙ্গী হয়ে থাকবে চিরন্তন। আল্লাহর কাছে যারাই
শহিদী মরন উপহার চাইবেন। তাদের সমস্ত অনুভূতি জুড়ে তুমি
থাকবে প্রেরনার উৎস হয়ে। শহীদের রক্তে মাখা জামায় তোমার প্রতিচ্ছবি আমরা খুঁজে নেব।
বাগানের লাল রক্ত গোলাপ হয়ে তুমি প্রতিটি ভোরে ফুঁটে উঠবে সৌরভে গৌরবান্নিত হয়ে।
তুমি থাকবে; তুমি থাকবে আমাদের সকলের সবচেয়ে প্রিয় 'বন্ধু' হয়ে।
জানি, আর কখনোই তোমাকে অনলাইনে দেখতে পাবনা। কখনো আর বার্তা দিয়ে
জিজ্ঞেস করা হবেনা 'মাসুদ ভাই কেমন আছেন'?
শেষ বারের মত; রক্তাক্ত এই হৃদয়ের ক্ষত বিক্ষত
আর একটি নটিফিকেশন পাঠিয়ে আপনাকে বলতে চাই, আপনি নাই তাতে কি হয়েছে! আপনার
বন্ধুত্বটাকে তো ওরা মেরে ফেলতে পারেনি। বন্ধু, তোমার বন্ধুত্বের এই শেকড় হৃদয়
থেকে কখনোই উপড়ে ফেলতে দেব না। বন্ধুত্বের এই প্রদীপটিকে প্রজ্জলিত উনুনে রুপ
দেবোই আমরা। আমাদের কেউই তাতে রুখতে পারবে না। বাতিলকে উৎখাত করার লক্ষ্য নিয়ে লড়ে
যাব বাতিলের সাথে আমরন;
তাতে গেঞ্জী রক্তাক্ত হওয়ার ভয়ে কখনো পিছু হটবো না। বন্ধু
মরে গেলেই কি বন্ধুত্বও মরে যায়। কক্ষনো না। বন্ধুত্ব কখনো মরেনা। দোয়া করি আপনার
জন্য ; আপনি জান্নাতে সবুজ পাখি হয়ে উড়ে বেড়ান দিগ্বিদিক। হাঁসিমাখা মুখ নিয়ে আনন্দে
মেতে থাকুন অনন্তকাল।
আমরা জানি, হযরত বেলাল, হযরত হামযা, শহীদ
তীতুমীর, হাসানুল বান্নার কথা আর এখন জানলাম আমাদের ভাই, বন্ধু , 'মাসুন
বিন হাবীবের কথা'
। এভাবেই যুগে যুগে দ্বীন প্রতীষ্ঠায় ,সত্য
প্রতীষ্ঠায় বুকের তাজা লাল রক্ত ঢেলে দিয়ে আল্লাহর সবুজ জমীনকে উর্বর করে গেছেন
যারা ;তাদেরকে আমরা ভুলে যাইনি ; কখনো ভুলবো না। তারা আমাদের প্রেরনা; আমাদের
সাহসিকতার মিনার;
আমাদের চেতনার চাষী।
আমরাও যেন চলতে পারি সেই পথধরে যেই পথে হেঁটে গেছেন
ইতিহাসের এই সেরা মানুষগুলো। বাতিলের সামনে দাঁড়িয়ে যেন নির্ভয়ে বুকটা পেতে দিতে
পারি। ওদের হাতিয়ারের রক্তাক্ত আঘাত সহ্য করার ক্ষমতায় ঈমানের বলে বলীয়ান হতে
পারি। জান্নাতের সুঘ্রান আমাকেও যেন তাড়িয়ে নিয়ে যায় শাহাদাতের তামান্নার দিকে।
আমিও যেন যেতে পারি সেই প্রান চঞ্চল আনন্দে মেতে থাকা সবুজ পাখিদের নীড়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন