মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১০

ধর্ম ও বিজ্ঞান ভাবনা

ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা আছে আমাদের মাঝে। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘর্ষ নাকি সন্ধি এটা নিয়েও যথেষ্ঠ সন্ধিহান আমরা অনেকেই। কোন কোন ধর্মের সাথে রক্তা রক্তির ঘটনাও আছে ইতিহাসের পাতায় এ নিয়ে। তবে পবিত্র কুরআন থেকে উৎসারিত ধর্ম, ইসলামের সাথে প্রকৃত বিজ্ঞানের বিরোধ ছিলনা অতীতে, বর্তমানেও নেই এবং ভবিষ্যতেও হবেনা কখনও। ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে প্রাসঙ্গিক কিছু কথার প্রতিফলন ঘটবে এ লেখার মধ্য দিয়ে।
এক ঐশী বাণীর বা অহির মাধ্যমে মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য সামগ্রিক দিক নির্দেশনাকে সাধারণ ভাবে ধর্ম হিসাবে বুঝানো হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক জগতকে জানার এটা একটা মাধ্যমও বটে। মানুষ বিভিন্ন বিশ্বাসের ভিত্তিতে কিছু আচার অনুষ্ঠান ও প্রাত্যহিক কাজের মধ্য দিয়ে ধর্ম পালন করে থাকেন। বিশ্বাসই হচ্ছে ধর্মের মূল কথা। মহাপ্রভুর পক্ষ থেকে নির্বাচিত এক দল মহামানব (নবী ও রাসুল) তাঁরই দ্বারা আদিষ্ট হয়ে মানব জাতিকে বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানের শিক্ষা দিয়েছেন। এ সব মহামানবগণের প্রতি আস্থা রেখেই ধর্মপ্রাণ লোকেরা ধর্ম পালন করে থাকেন। বিশ্বাসীগণ তাঁদের (মহামানবগণের) প্রচারিত বাণীর স্বপক্ষে যুক্তি অথবা প্রমাণ দাবি করেননি কোন সময়ই। কারণ একটাই, আর তা হল মহামানব গণের প্রতি অগাধ আস্থা।

সুব্যবস্থিত জ্ঞান ও কাজকে আমরা সাধারণ ভাবে বিজ্ঞান বলতে পারি। প্রাকৃতিক জগত ও বস্তু সন্বন্ধে জানার আরও একটি ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়ে থাকে। প্রকৃতি ও পদার্থের বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যে সব তত্ত্ব ও তথ্য উপস্থাপন করা হয় তা সকল মানুষের নিকট বোধগম্য হবে এমনটি কেউই জোর করে দাবি করতে পারবেনা। উক্ত বিষয়ের ওপর কোন ব্যক্তির যদি যথাযথ জ্ঞান থাকে তাহলেই তা সে রপ্ত করতে সক্ষম হবে। দৃষ্টি শক্তির সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করে গোচরীভূত সীমানার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দেখতে পাওয়া সমতল পৃথিবীটাকে কারো নিকট গোলাকার বা তদ্রুপ আকারের প্রমাণ করতে হলে তার নিকট যুক্তি পেশ করতে হবে। কারণ বিজ্ঞানের মূল কথাই হচ্ছে যুক্তি ও প্রমাণ। ব্যক্তিটি যদি জ্ঞানী হন তা হলে খুব একটা সমস্যা হয়তো হবেনা । কিন্তু বিপত্তি ঘটবে তখনই, যখন কোন ব্যক্তি যুক্তি বুঝতে অক্ষম হবেন। সমস্ত পৃথিবীটাকে তো আর হাতের মুঠোয় পুরে তাকে বুঝানো সম্ভব নয়। তাহলে যুক্তি না বোঝা ব্যক্তির উপায় কি? উপায় একটাই, আর তা হল যুক্তিবাদীদের কথা অন্ধ ভাবে হুবহু বিশ্বাস করা। উল্লেখ্য যুক্তি বুঝতে অক্ষম ব্যক্তিদের সংখ্যাই পৃথিবীতে বেশী। এ সকল মানব সন্তান যুক্তিবাদীদের উপর আস্থা রেখেই কিন্তু দিব্যি ঘর সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।

কোন ব্যক্তি যদি ধর্মের অনুশাসন গুলি সঠিক ভাবে ও পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে মানার ব্যাপারে ব্রতী হন তাহলে তাঁকে সমাজে নতুন নামে আখ্যায়িত করা যায় কিনা এ ব্যাপারে কিছু লোকের মগজে নতুন নতুন বুদ্ধি গজাতে থাকে। ফল স্বরূপ বেরিয়ে আসে ধর্মান্ধ, মৌলবাদ, কট্টরপন্থী সহ আরো অনেক শব্দ গুচ্ছ। শুধু কি তাই? সমাজে তাঁকে কিভাবে কোনঠাসা করে রাখা যায় সে জন্য আবিস্কার হতে থাকে নব নব কলা কৌশল। ফলে বেচারা সময়ের চাকা ঘুরাতে থাকেন অব্যক্ত এক মর্মপিড়া নিয়ে। অপর পক্ষে কোন ব্যক্তি যদি বিজ্ঞানের ব্যাপারে একই পন্থা অবলম্বন করে থাকেন তাহলে তাঁর বিদ্যা বুদ্ধির স্বীকৃতি স্বরূপ বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, প্রগতিশীল, সুশীল ও আরো অনেক শিহরণ সৃষ্টিকারী শব্দ ব্যবহার হয়ে থাকে নামের সাথে। সমাজে নিজের অবস্থান সম্পর্কে ভাবতে থাকেন অন্যভাবে।

ধর্মান্ধ শব্দটি অনেক আগেই অভিধানে স্থান করে নিতে পারলেও বিজ্ঞানান্ধ শব্দটি যতদুর জানা যায় এখন পর্যন্ত অনাবিস্কৃতই রয়ে গেছে। ধর্মের সঠিক দিক নির্দেশনা অনুসরণ করতে গিয়ে যদি কেউ ধর্মান্ধ হন তাহলে বিজ্ঞানের ব্যাপারেও তো একই কথা প্রযোজ্য হওয়া উচিত। স্বঘোষিত সুশীল সমাজ বলতে পারে, ধর্ম পালনকারী লোকদেরকে কস্মিন কালেও ধর্মান্ধ বলা হয় না বরং ধর্মের ব্যাপারে উন্মত্ততা প্রদর্শনকারীদেরকেই তা বুঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সমাজে, ঘোরাফেরা করে আমরা কি উপরোক্ত যুক্তির সত্যতা খুঁজে পাই? বরং সত্য মিথ্যার সংমিশ্রণে এবং তথাকথিত ধর্ম নিরেপেক্ষতার আবরণে বিজ্ঞানের ধ্বজাধারী হয়ে সুশীল সমাজের ছদ্মাবরণে নিজেদের মতাদর্শকে (ইসলাম পরিপন্থী) প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই তারা ধর্মের ব্যাপারে সর্বদাই খড়গহস্ত।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে ধর্ম এবং বিজ্ঞান উভয়ের প্রতি সমর্থন আছে এরূপ বিশাল এক জনগোষ্ঠী আস্থা রাখে হয়তোবা নবী-রাসুলদের প্রতি নয়তোবা বিজ্ঞানীদের প্রতি। ইতিহাসের পাতা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পাই, অনেক তত্ত্ব এক কালে বৈজ্ঞানিক ভাবে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কিন্তু কালের আবর্তনে তা মিথ্যায় পর্যবসিত হয়েছে। যেমন, এক সময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন আমাদের এ মহাবিশ্বের কোন শুরু ছিলনা। অনাদিকাল থেকে এমনটি ছিল এবং এমনই থাকবে, এর কোন ধ্বংস নেই। অধুনাকালে আগের ধারণার বিলুপ্তি ঘটেছে। মহাবিশ্বের শুরু ছিল এবং তা একদিন ধ্বংস হবে এ ধারণা স্বীকৃতি লাভ করেছে।

কেউ যত বড়ই বিজ্ঞানী হোননা কেন মানুষ হিসেবে তাঁর জ্ঞানের একটা সীমাবদ্ধতা থাকতে বাধ্য। তাহলে সকল ক্ষেত্রে কি বিজ্ঞানীদের উপর আস্থা রাখা যায়? আমাদেরকে যখন কারো উপর আস্থা রাখতেই হবে তখন মহান প্রভুর পক্ষ থেকে নির্বাচিত ও হেদায়াত প্রাপ্ত লোকদের প্রতি আস্থা রাখা এবং তাঁদের প্রদর্শিত পথে চলাটা কি অধিক যুক্তি গ্রাহ্য নয়? তবে কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন সব বিষয়ের উপরে বিজ্ঞানীদের প্রতি আস্থা রাখতে আপত্তি নেই।

দুই

মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করার সুবাদে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা পবিত্র কুরআনের অনেক বাণীর সাথে পরিচয় ঘটেছিল বাল্যকাল থেকেই। লেখাপড়ার পরিধি কম হওয়ায় গবেষণার দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে কুরআনে আলোচিত বিষয় গুলোকে বিশ্লেষণ করা এবং বুঝা কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল আমার নিকট। তারপরও আলেম উলামাদের ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু ব্যক্তি বর্গের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে যে সাহিত্য সম্ভার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে এবং তাঁদের আলোচনা থেকে আমি যে অনুপ্রেরণা লাভ করেছি সে জন্য আল্লাহ্‌র নিকট তাঁদের জন্য কল্যাণ কামনা করছি।

কোন কোন ব্যক্তির লেখনি বা আলোচনা থেকে আমাদের মুসলিম সমাজে এমন একটা আবহ সৃষ্টি হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে অল্প শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত এবং শিক্ষিত অধিকাংশ মুসলমানেরা মনে করেন বিজ্ঞানের সকল আবিস্কারই হয়েছে কুরআন থেকে। আর অমুসলিমরা তা করেছে রীতিমতো কুরআন থেকে চুরি করে। আমিও কিন্তু ঐ মুসলমানদের মধ্যে একজন। বিশ্বাসও করতাম তাঁদের মত করে পাছে গুনাহ হয়ে যায় এ ভয়ে। কুরআনের ব্যাপারে এ ধরণের প্রচারণার কারণে কোন ব্যক্তি যদি এটাকে বিজ্ঞানের বই ভেবে বিজ্ঞান শিক্ষার উদ্দেশ্যে পড়তে শুরু করেন তাহলে তিনি বেকায়দায় পড়বেন নিঃসন্দেহে। কারণ প্রচলিত বিজ্ঞানের বইয়ের মতো তো আর কুরআন বিজ্ঞানের বই নয়। আল্লাহ্‌ সুব্‌হানু তায়ালা বলেননিও তা। কুরআনের পক্ষে আল্লাহ্‌র ঘোষণা, "এটা একটা সন্দেহ মুক্ত কিতাব (গ্রন্থ) এবং মুত্তাকীদের জন্য এতে রয়েছে হেদায়াত"। তবে তাঁর বান্দাহদের মনজগতকে আলোড়িত করার জন্য বিজ্ঞান সম্মত অনেক আয়াতও নাজিল করেছেন তিনি। এতে করে একথা বুঝে নেয়া ঠিক নয় যে প্রচলিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মত সেগুলিও হুবহু একই রকম তত্ত্ব। কুরআন থেকে বিজ্ঞানের নব নব আবিস্কারের কথাটা কুরআনে বিশ্বাসী লোকদের নিকট স্বাভাবিক মনে হলেও একজন অবিশ্বাসীর জন্য তা হবে অসামঞ্জস্যশীল একটা উক্তি। আর এ ধরনের উক্তির কারণেও হয়তো অনেকে থেকে যেতে পারেন অনেক -দুরে কুরআন নাজিলের আসল উদ্দেশ্য থেকে।


কুরআন থেকে কি ভাবে বিজ্ঞানের ব্যাপারে নির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে তার একটা উদাহরণ এখানে পেশ করছি। আপনারা অনেকেই 'মহাবিষ্ফোরণ তত্ত্ব' (Big Bang Theory) সম্বন্ধে অবগত আছেন। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন মহাবিষ্ফোরণের মাধ্যমে আমাদের এই মহাবিশ্বের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ তত্ত্বটি আবিস্কারের পেছনে নিয়ামক হিসাবে 'মহাবিশ্বের সম্প্রাসারণ তত্ত্ব'টি বিশেষ ভাবে কাজ করেছে। ১৯২২ সালে রাশিয়ার একজন বিজ্ঞানি আলেকজান্ডার ফ্রেইডম্যান আমাদের মহাবিশ্ব স্থির নয় 'সম্প্রসারণশীল' এ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে জর্জ মেইটর, একজন বেলজিয়ান মহাকাশ বিজ্ঞানী, 'সম্প্রাসারণশীল মহাবিশ্ব' তত্ত্বটিকে কাজে লাগিয়ে 'মহাবিষ্ফোরণ তত্ত্বের' নমুনা বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করেন।

এখন পবিত্র কুরআনের সূরা যারিয়াতের ৪৭ নং আয়াতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি। আল্লাহ্‌ পাক বলেন,"আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি মহাসম্প্রসারণকারী"। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতা এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশের সম্প্রসারণ সম্বন্ধে সম্প্রতিককালে জ্ঞান লাভ করেছেন বিজ্ঞানীগণ। অথচ সাড়ে ১৪০০ বছর পূর্বের এক অন্ধকার যুগে তা অংকিত হয়েছিল পবিত্র কুরআনে। একই ভাবে বিজ্ঞানের আরো অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে কুরআনের বিভিন্ন পাতায়। আর তা অনুধাবন করার জন্য দরকার এমন সব বিশ্লেষকের যাঁরা সঠিক অর্থেই হবেন কুরআন বিশারদ এবং যাঁদের থাকবে অধুনা কালের বিজ্ঞানের জগতে বাস্তব পদচারণা।

কুরআন গবেষকদের মধ্যে একদল রয়েছেন যাঁরা আল্লাহর দেয়া হুকুম গুলি চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন আমাদের সামনে। ফলে তা শিরক বিদায়াত সহ নানা ধরনের আল্লাহর নাফরমানী মূলক কাজ থেকে দুরে অবস্থান করে তাঁর খাঁটি গোলাম হতে সাহায্য করে আমাদেরকে। এ কাজের জন্য সাধুবাদ পেতে পারেন তাঁরা। তবে চলমান বিশ্বের ঘটনা প্রবাহ বিশেষ করে বিজ্ঞানের জগতে কুরআন কি ধরণের অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননা এ দলের গবেষকগণ। তার কারণ, বিজ্ঞানের জগতে তাঁদের পদচারণা খুবই কম। বিজ্ঞান হচ্ছে যুক্তি তর্কের ব্যাপার, কাজেই ধর্ম বিশ্বাসের সাথে যুক্তি তর্ক গুলিয়ে ফেলতে নারাজ তাঁরা ।

গবেষকদের মধ্যে আর একটি দল যাঁরা স্রষ্টার সৃষ্টির ব্যাপারে নাযিলকৃত আয়াত দ্বারা উদ্দীপ্ত হয়ে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। ধর্ম গ্রন্থের (কুরআন) নিদর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিস্কারের মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে বের করার জন্য বুদ্ধিদীপ্ত এ দলের গবেষকগণ এক যোগে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দেশে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে । গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানের তত্ত্ব গুলি আত্মস্থ করে কুরআনের ভাষায় আবার তা প্রকাশ করা নেহায়েতই ছেলে খেলা নয়। এটাও একটা জটিল কাজ হওয়ায় নিঃসন্দেহে তাঁরাও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। বিশ্ববাসীর সামনে কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণই যে তাঁদের উদ্দেশ্য তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু শুধুমাত্র সামঞ্জস্য খোঁজার মাধ্যমে কি শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা সম্ভব?

উপরে উল্লেখিত বুদ্ধি দীপ্ত দ্বিতীয় দলের গবেষকদের অবদানের কথা স্মরণে রেখে এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই আল্লাহ্‌ যা স্পষ্ট করে প্রকাশ করেননি তা আমাদের ও তাঁর অন্যান্য সৃষ্টির জন্য জানা বা অনুমান করা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। কাজেই সামঞ্জস্য খুঁজতে গিয়ে নিশ্চয় করে বলা কঠিন যে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ পাক মহাবিষ্ফোরণ তত্ত্ব, কৃষ্ণ গহ্বর, গ্যালাক্সি বা অন্য যে কোন তত্ত্বের কথাই হুবহু বলেছেন বিভিন্ন আয়াতের মধ্য দিয়ে। আমরা জানি বিজ্ঞানের তত্ত্ব পরিবর্তনশীল। আজ যা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য কাল তা মিথ্যাও হতে পারে। অপর পক্ষে কুরআন সকল যুগের মানুষের জন্য এক অমোঘ বাণী।

পবিত্র কুরআন যে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব- তা প্রমাণ করতে হলে কুরআনের সকল বিভাগের জ্ঞানের সাথে বর্তমান কালের জ্ঞান বিজ্ঞানের কলা কৌশলও আয়ত্বে আনতে হবে আমাদেরকে। তার জন্য দরকার গবেষকগণের একই প্লাটফরমে এসে কাজ করা। যে জ্ঞান এক সময় পৃথিবীবাসীকে করেছিল আলোকিত ও ধন্য, তা অনুসন্ধান করতে হবে আমাদের দায়িত্ব হিসাবেই। ধর্ম তথা কুরআনের সাথে প্রকৃত বিজ্ঞানের সংঘর্ষ ছিলনা কোন কালেই। আর যদি থেকে থাকেও, তা হয়েছে আমাদের জ্ঞানের অভাবের কারণে। কাজেই কুরআন থেকে একদেশদর্শী জ্ঞান নয় বরং বহুমূখী জ্ঞান অর্জনই হতে পারে কুরআনকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার কর্যকরী পদক্ষেপ।
লেখকঃ আব্দুল মান্নান

কোন মন্তব্য নেই: