বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১০

রাষ্ট্রের ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

ধর্ম শব্দটির সাথে পরিচয় নেই এমন লোকের সংখ্যা পৃথিবীতে খুবই কম। কোথায় ব্যবহৃত হচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করে শব্দটি
বিভিন্ন ধরণের অর্থ প্রকাশ করে থাকে। মানব জাতির জন্য হলে এটির অর্থ হয় শাস্ত্রনির্দিষ্ট বিধি-বিধান। অন্যভাবে বলা যায় সঠিক পথে চলার নিমিত্তে মহান সৃষ্টি কর্তার পক্ষ থেকে প্রেরিত সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা যা ধর্মগ্রন্থে কালির আঁচড়ে আমাদের মাঝে জীবন্ত হয়ে আছে। বস্তুর জন্যে ধর্মের অর্থ হয় বস্তুটির নিজস্ব গুণাগুণ। রাষ্ট্রের জন্য ধর্ম কি হবে সেটাই হলো ভাবনার বিষয়।

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ শব্দের সাথেও আমরা বেশ পরিচিত। অধুনাকালে ধর্মনিরেপেক্ষ অর্থ ধর্মহীনতা নয় বলে প্রচার চালানো হচ্ছে বেশ জোরে, যদিও এ শব্দটির একটা আবিধানিক অর্থ আছে। ধর্মনিরেপেক্ষ মানে হচ্ছে ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এমন। মূলতঃ রাষ্ট্র পরিচালনার ও শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এ শব্দটি অধিক ব্যবহার হয়ে থাকে। এ মতের অনুসারীরা বলে থাকেন ধর্ম হচ্ছে ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণের বিষয়। কাজেই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ কোন ধর্মের পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারেনা।
ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কি রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করতে পারে? পারলে তা কি ভাবে সেটি হচ্ছে আলোচনার প্রদিপাদ্য বিষয়। আরো একটু খেয়াল রাখতে হবে শিরনামের রাষ্ট্রের ধর্ম আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এক নয়। ফলে কোন বিশেষ ধর্মকে কেন্দ্র করে আলোচনার ব্যাপ্তি ঘটবেনা এ লেখায়।

একসময় ধর্মগুরুরা স্বাধীনভাবে রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতেন। কিন্তু নিজেদের অজ্ঞতার কারণে হোক অথবা গোঁড়ামির কারণে সমসাময়িক যুগে সৃষ্ট অনেক সমস্যার সমাধান করতে তাঁরা ব্যর্থ হন। কিছু কিছূ ক্ষেত্রে হটকারী সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেন তাঁরা। ফলে তথাকথিত সুশীল সমাজের লোকেরা ধর্মগুরুদের উপর প্রচন্ডভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ফলশ্রুতিতে জনগণের জন্য আইন তৈরিতে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মের প্রভাব না খাটানোর আন্দোলন গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়। ফল সরূপ ধর্মগুরুদের হাতে রয়ে গেল শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয়গুলি দেখ-ভাল করার ও নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব এবং জন্ম নিলো ধর্মনিরেপেক্ষবাদ নামে নতুন মতবাদের। আর এ মতবাদের অনুসারীরা রাষ্ট্রের আইন রচনা ও রাষ্ট্র পরিচালনার একছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেলেন।

বর্তমানে ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ দুটি আলোচনার শীর্ষে রয়েছে রাজনীতিবীদ্‌দের বাকযুদ্ধের বদৌলতে। তাছাড়া টিভি টক-শো গুলোতে অনেক প্রাজ্ঞ আলোচকও বেশ সোচ্চার এ বিষযে। এ দ্বন্দ্ব যে নতুন, বিষয়টা সে রকম নয়। মানব জাতির ইতিহাস যত পুরাতন এ দ্বন্দ্বটাও ততই পুরাতন। তবে তা ছিল অন্য অবয়বে। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে তার আবির্ভাব ঘটেছে বিভিন্ন ভাবে।

ধর্মের সাথে বিশ্বাসের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ধর্মগ্রন্থে লিখিত কতগুলো বিষয়ের উপর বিশ্বাস আনতে বলা হয়েছে বিশেষ ভাবে মানুষ জাতিকে। কাজেই মানুষ ধর্ম গ্রহণ করে সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়। তাহলে অতি সহজেই প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে ধর্ম যখন মানুষের জন্য তখন একটি রাষ্ট্রের কি কোন ধর্ম থাকতে পারে, নাকি থাকা বাঞ্ছনীয়?

একটি রাষ্ট্রে শুধুমাত্র একটি শ্রেণী, গোষ্ঠী, জাতি বা একই ধর্মের লোক বাস করবে তা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারেনা এবং বলাও সঙ্গত নয়। মানুষের জন্যে রাষ্ট্র। তাই একটি রাষ্ট্রে সকল জাতি ও ধর্মের লোকের বস-বাস নিশ্চিত করতে কারোর দ্বিমত না থাকারই কথা। তবে সংখ্যা গরিষ্ঠ কোন সমপ্রদায়ের দ্বারা কোন লোকালয় শাসিত হলেও যেন সংখ্যা লঘুরা স্বাধীন ভাবে বসবাস করতে পারে তার একটা সুব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। এটার ব্যত্যয় ঘটলে সমস্যা সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাকি নয়।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলামের অনুসারী হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সহ আরো অন্যান্য ধর্মের লোকেরও বাস এখানে। ছোট-খাটো ঘটনা ছাড়া সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ হিসাবেও অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে এ দেশটি। সহ অবস্থানের পরিবেশ গড়ে উঠেছে এক ধর্মের অনুসারীদের প্রতি অন্য ধর্মের অনুসারীদের সহিষ্ণু মনোভাবের কারণে। হাজার বছরের এ সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতাকে বিনষ্ট করে ফায়দা হাসিলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ছদ্বাবরণে স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উসকিয়ে দিচ্ছে এক ধর্মের লোকদেরকে অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি। দুঃখ জনক হলেও সত্য স্বার্থান্বেষী এ গোষ্ঠী বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারের, তথাকথিত সুশিল সমাজের এবং আন্তর্জাতিক মুরুব্বিদের আনুকল্যও পেয়ে থাকে বিভিন্ন ভাবে। তাছাড়া সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে তাদের সমর্থন আদায় করে চলেছে সুকৌশলে।

তথাকথিত প্রগতিবাদীদের প্রচারণার মূল শুর হলো, যদি শুধুমাত্র একটি ধর্ম বিশ্বাস দিয়ে রাষ্ট্রের বিধি-বিধানগুলি বেঁধে ফেলা হয় তাহলে অন্য ধর্মের লোকদের করুন অবস্থার সৃষ্টি হবে। জনসাধারণকে ধমের্র শাসন ব্যবস্থা সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করার এটাই হলো ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদীদের বড় হাতিয়ার। তাই তারা এ অযুহাতে ধর্মে উল্লেখিত রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির বিরুদ্ধে বেশ মুখর। মূলতঃ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বা ধর্মের প্রতি সদয় হয়ে নয় বরং তাদের দৃষ্টি আকর্ষনের মাধ্যমে সমর্থন লাভই হচ্ছে এ সকল প্রচারের আসল উদ্দেশ্য।

বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে আক্বিদাগত পার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক।| ধর্মীয় বিশ্বাসের পার্থক্যের কারণে এক প্লাটফর্মে এসে সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার জন্য বৃহত্তর অঙ্গনে একসাথে কাজ করতে দেখা যায়না। যদিও হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংগঠনের অস্তিত্ব আমদের দেশে আছে। আক্বিদাগত পার্থক্য ও আনুষ্ঠানিক কিছু ইবাদাতের কথা বাদ দিলে সব ধর্মের অনুসারীদের জন্য ধর্মীয় অধিকাংশ আদেশ ও নিষেধের মধ্যে প্রচন্ড মিল রয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের এই সামঞ্জস্যতাকে কাজে লাগাতে না পারাটা, ধর্মবিরোধী অন্যান্য আদর্শের অনুপ্রবেশকে সহজ করে দিয়েছে।

হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সংগঠনটি ছাড়াও মুসলিমদের মধ্যেও কিছু সংগঠন বা দল আছে যারা ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কথা বলে। কিন্তু উপরোল্লিখিত মুসলিমদের কোন কোন সংগঠন সহ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টানদের সংগঠনগুলি ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের চেয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের কর্মসুচী বাস্তবায়নে অধিক তৎতপর। তাছাড়া সাধারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ (যা সব ধর্মের জন্যই প্রযোজ্য) রক্ষার জন্য ইসলাম সহ উপরোল্লেখিত অন্যান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সেতু বন্ধনের কোন চেষ্টা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে সুস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশের জন্য তা অত্যন্ত জরুরী।

এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকদের সাথে ধর্মীয় মূলবোধ রক্ষায় কাজ না করার কারণে দিল্লীর সম্রাট আকবরের দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরকে নিয়ে এক সাথে কাজ করার মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। ব্যক্তিগত কিছু
ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে পারাটাকেই ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করার গৌরবে গৌরবান্বীত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের নিকট আত্মসমর্পণাকারী ধার্মীকগণ। দুঃখ জনক হলো সত্য এসকল ধার্মীক(?) লোকেরা বুঝতেও পারেনা যে কিভাবে নিজেদের ধর্মের আক্বিদা-বিশ্বাসের সর্বনাশ করা হচ্ছে তাদের পছন্দের মতবাদ দ্বারা।

দুনীয়া ব্যাপি দোর্দন্ড প্রতাপে ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদীরা নিজেদের আদর্শ তথাকথিত গণতন্ত্রের মাধ্যমে সকলের উপর প্রভাব ফেলার প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে অনেকটা সফলকামও হয়েছে। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর ১৯২ টি দেশের অধিকাংশ দেশ এ মতবাদের অনুসারীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে সরকারী আনুকল্যে ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর ক্রমাগত কুঠারাঘত করতে পারছে অতি সহজে।

ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদীরা বস্তুবাদের ধ্যান-ধারণা দ্বারা সাংঘাতিক ভাবে প্রভাবিত। বস্তুবাদ তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে, যে জিনিসটির অস্তিত্ব রয়েছে সেটা হচ্ছে বস্তু। বস্তু থেকেই অন্যান্য সকল জিনিসের উৎপত্তি। চেতনা সহ সব ধরণের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুরও জন্ম হয়েছে বস্তুর মধ্যে পরস্পরের বিক্রিয়ার ফলে। বস্তুবাদীরা সৃষ্টিকর্তার ধারণাকে অলীক বলে মনে করে এবং প্রচার করে। বস্তুর মাধ্যমেই তারা সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সব কিছু পেতে চায়। পৃথিবী হচ্ছে তাদের শেষ ঠিকানা। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সবকিছু পরিসমাপ্তি ঘটবে। পূনরুজ্জীবন তাদের নিকট অকল্পনীয় ব্যাপার। জান্নাত-জাহান্নামের কিংবা স্বর্গ-নরকের সুখ-দুঃখতো পৃথিবীতেই রয়েছে।

ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদীদের ধারণা হলো রক্ত-মাংশ দিয়ে তৈরি যে জীব, যার বিচার-বিবেচনা করার মত যোগ্যতা আছে, আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা, আনন্দ-বেদনায় ভরপুর যে হৃদয় সেখানেই তো শুধুমাত্র বিশ্বাসের ন্যায় অদ্ভুত একটা কিছু বাসা বাঁধাতে পারে। আর রাষ্ট্র, সেটাতো একটা জড় পদার্থ। যেটার হৃদয় নেই, নেই বিচার-বিবেচনা করার মত বোধ শক্তি। নয়নাভিরাম সবুজ আর শ্যামলিমায় ভরা যার মাঠ-ঘাট ও পথ-প্রান্তর, পাহাড়-পর্বতের ন্যায় কঠিন বস্তু বাসা বেঁধেছে যার বুকে, সে ধর্ম বিশ্বাসটা রাখবে কোথায়? ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা মুর্খের ন্যায় শুধু শুধু জিগির তুলেছে ধর্মের আবরণে রাষ্ট্রকে আচ্ছাদিত করতে।

একটি রাষ্ট্রের ধর্ম থাকতে পারেনা একজন মহামুর্খও তা জানে। তারপরেও সে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেই চলেছেন বিদগ্ধ জনেরা। পৃথিবীতে অনেক দেশ রয়েছে যে গুলোকে বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষিত করা হয়ে থাকে। যেমন ইসলামিক, হিন্দু, খৃষ্টান, ধর্মনিরেপেক্ষ, পুঁজিবাদী, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইত্যাদি। এতে করে কি এটা বুঝতে হবে যে একেকটি দেশ বা ভূখণ্ড নিজেই একটি আদর্শ গ্রহণ করে হয় মুসলিম না হয় খৃষ্টান অথবা অন্যান্য কোন ধর্মের বা আদর্শের অনুসারী হয়ে গেছে। আমরা সবাই অতি সহজে এর অর্থ যা বুঝি তা হলো প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের সরকার কোন না কোন আদর্শের নীতিমালার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকে। আর তার আলোকেই এক একটি রাষ্ট্রকে বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

জনগণের রায়ে যদি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ ইত্যাদি আদর্শের নীতিমালার ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে তাহলে একই ভাবে র্ধমের নীতিমালার আলোকে কেন একটি দেশ বা রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারবেনা এটা একটা বিরাট প্রশ্ন। অথচ জড়বাদীরা ধর্মনিরপেক্ষতার আবরণে স্বস্ব আদর্শকে ধর্ম তুল্য মনে করে থাকে তা একটু চিন্তা করলেই এবং তাদের কর্মকাণ্ড দেখলেই সহজেই বুঝা যায়।

অপরাধকে কোন ধর্মই প্রশ্রয় দেয়না। ধর্মে বর্ণিত আবশ্যিক কাজ না করাটাই অপরাধ। তা ছাড়া অন্যান্য আরও কি ধরণের কাজ করলে মানুষ অপরাধী হয় তাও প্রত্যেকটি ধর্মে উল্লেখ করা আছে। অপরাধের শাস্তির বিধানও দেয়া আছে। ধর্মে যদি সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বিধান নির্দিষ্ট করে দেয় তাহলে তা না মানাও শাস্তি যোগ্য অপরাধ। ধর্মের বিধি-বিধানের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ গ্রহণ করা নেহায়েতই একটা সখের ব্যাপার নয় বরং ধর্ম পালণকারীদের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও অবশ্যকরণীয় কাজ।

রাষ্ট্রের ধর্ম থাকতে নেই। তবে রাষ্ট্রের আইন-কানুন কোন না কোন আদর্শের ভিত্তিতেই রচিত হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ নাগরিকের মতামতের উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট হয়ে থাকে কোন আদর্শের পতাকাবাহীরা রাষ্ট্রের হাল ধরবে। সে হিসাবে যদি জনগণের ভোটে বিশেষ কোন ধর্মের অনুসারীরা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় তাহলে কি তা গনতন্ত্র বিরোধী হবে? অবশ্যই না। এটা গনতন্ত্র বিরোধী না হলেও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সুবোধ বালোকের মত তা মেনে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকবেনা। সৃষ্টিকর্তার দেয়া জীবন বিধানের সাথে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ছদ্মাবরণে মানব সৃষ্ট জীবন বিধানের দ্বন্ধ চিরন্তন।

লেখকঃ আব্দুল মান্নান

কোন মন্তব্য নেই: