শহীদ নং-৭
নাম: মো: শফিকুল ইসলাম
সাংগঠনিক মান: সাথী
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ এপ্রিল ১৯৮৯ ইং
পিতার নাম: মৃত কায়েস আহমদ
সর্বশেষ পড়াশুনা: এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি প্রথম বিভাগে
উত্তীর্ণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম ও ২য় বর্ষে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ছিলেন।
জীবনের লক্ষ্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া।
আহত হওয়ার স্থান: সিনেট ভবনের সামনে।
আঘাতের ধরন: কাটা রাইফেলের গুলি।
কাদের আঘাতে শহীদ: সংগ্রাম পরিষদের যৌথ হামলায়।
শহীদ হওয়ার স্থান : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
স'ায়ী ঠিকানা: গ্রাম: শাহবাজপুর, ডাক: আজমতপুর, থানা: শিবগঞ্জ, জেলা: নবাবগঞ্জ।
ভাইবোন : ৭ জন।
ভাই-বোনদের মা েঝ অবস''ান: ৫ম।
পরিবারের মোট সদস্য: ৯।
পিতা: মৃত।
মাতা: মৃত।
শহীদ হওয়ার পূর্বে স্মরণীয় বাণী: শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কালো থাবা বিস-ার করেছে। সন্ত্রাস নির্মূলে এক সাগর রক্তের প্রয়োজন।
শাহাদতের পর শহীদের মাতা-পিতার প্রতিক্রিয়া: শহীদ শফিকের লাশ বাড়ি নেবার সাথে সাথে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শহীদের দুঃখিনী মাতা। পিতা কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, তুমি আমাকে ছেড়ে আগেই চলে গেলে শফিক। কিভাবে আমি এত বড় বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকবো।
শাহাদাতের প্রেক্ষাপট: শহীদ শফিকুল ইসলাম
নাম: মো: শফিকুল ইসলাম
সাংগঠনিক মান: সাথী
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ এপ্রিল ১৯৮৯ ইং
পিতার নাম: মৃত কায়েস আহমদ
সর্বশেষ পড়াশুনা: এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি প্রথম বিভাগে
উত্তীর্ণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম ও ২য় বর্ষে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ছিলেন।
জীবনের লক্ষ্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া।
আহত হওয়ার স্থান: সিনেট ভবনের সামনে।
আঘাতের ধরন: কাটা রাইফেলের গুলি।
কাদের আঘাতে শহীদ: সংগ্রাম পরিষদের যৌথ হামলায়।
শহীদ হওয়ার স্থান : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
স'ায়ী ঠিকানা: গ্রাম: শাহবাজপুর, ডাক: আজমতপুর, থানা: শিবগঞ্জ, জেলা: নবাবগঞ্জ।
ভাইবোন : ৭ জন।
ভাই-বোনদের মা েঝ অবস''ান: ৫ম।
পরিবারের মোট সদস্য: ৯।
পিতা: মৃত।
মাতা: মৃত।
শহীদ হওয়ার পূর্বে স্মরণীয় বাণী: শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কালো থাবা বিস-ার করেছে। সন্ত্রাস নির্মূলে এক সাগর রক্তের প্রয়োজন।
শাহাদতের পর শহীদের মাতা-পিতার প্রতিক্রিয়া: শহীদ শফিকের লাশ বাড়ি নেবার সাথে সাথে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শহীদের দুঃখিনী মাতা। পিতা কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, তুমি আমাকে ছেড়ে আগেই চলে গেলে শফিক। কিভাবে আমি এত বড় বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকবো।
শাহাদাতের প্রেক্ষাপট: শহীদ শফিকুল ইসলাম
শহীদ আসলাম হোসাইন ও আসগর আলীর শাহাদাত বরণের পর শিবির কর্মীদের শোক না ফুরাতেই আবারও তাদের সামনে এলো ১৮ এপ্রিল ’৮৯। শহীদ আসলাম হোসেনের মত মানুষ পৃথিবীতে নেই, আর শিবির কর্মীরা তার ফেলে রাখা কাজগুলি নিয়ে বসে থাকবে তা হয় না। শিবির কর্মীরা নতুন উদ্দীপনায় ইসলামের জন্য তাজা জযবা নিয়ে ক্যাম্পাসে কাজ শুরু করল। সবাই শাহাদাতের তামান্না নিয়ে ময়দানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ওদিকে বাতিলের হুংকার, ষড়যন্ত্র, রক্তচক্ষু গোটা ক্যাম্পাসকে ভয়ঙ্কর করে তুলছে হর হামেশা। ১৮ নভেম্বর ’৮৮ এর মাত্র পাঁচ মাস পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম শহীদ শফিকুল ইসলামের শাহাদাতের ঘটনা। গণিত ৩য় বর্ষের (নতুন) মেধাবী ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবী শিক্ষকনামের প্রতিভাবান যুবককে হারাতে হল চিরদিনের জন্য। ক্লাসে আগের বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে প্রথমে কথা কাটাকাটি পরে বিষয়টি গিয়ে পড়ল একদম রাজনৈতিক ভাবে। কথা কাটাকাটির বিষয় ছিল শুধু মাত্র পিলু ও কলু। ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকে সমূলে নির্মূল করার জন্য বাতিল সংগঠনগুলি ছিল সর্বদা খড়গহস-। মৈত্রীর সশস্ত্র গুন্ডা কামরান প্রথমেই তোতা ভাইয়ের নাকের ওপর আঘাত করল। প্রচন্ড আঘাতে তার নাক ফেটে রক্ত ঝরতে লাগল। তারপর তারা সশস্ত্র অবস'ায় ছড়িয়ে পড়ল গোটা ক্যাম্পাসে।
মতিহার হল শাখা সেক্রেটারী শিবির নেতা শফিকুল ইসলাম তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংকের সামনে ভর্তি গাইড বিক্রিয় কাজে ব্যস- ছিল। সংগ্রাম পরিষদের খুনীরা খুনের নেশায় উন্মত্ত তখন। তারা কাটা রাইফেল, পিস-ল, রিভলভার, ছোরা, রামদা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল শিবির কর্মীদের ওপর। গোটা ক্যাম্পাস তখন হাত বোমা, ককটেল আর গুলির ভয়ানক আওয়াজে প্রকম্পিত। ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসীদের আগ্নেয়াস্ত্রের হামলায় শিবির নেতা মতিউর রহমান আকন্দ, আব্দুস সাত্তার, শামসুল হক গুরুতর আহত হন। তৎকালীন ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি রাগিব আহসান মুন্নার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা যৌথ আক্রমণ চালায়। খুনীদের উপর্যুপরি গুলি আর বোমার আঘাতে নিরস্ত্র শিবির কর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়ল। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের একটি গুলি এসে শফিকুল ইসলামের বুকের ডান পাশ ভেদ করে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন শফিকুল ইসলাম। মৃত্যু যন্ত্রণায় প্রচন্ড কাতরাচ্ছিলেন শফিকুল ইসলাম। জরুরিভাবে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হল। সেখানে শফিকুল ইসলাম শাহাদাত বরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এভাবে পবিত্র রমজান মাসে একটি সম্ভাবনাময় যুবকের চির বিদায় ঘটে পৃথিবী থেকে। খুনীরা শহীদ শফিকুল ইসলামকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে চলে যায় কিন' পুলিশ ছিল নির্বিকার। শিবির কর্মীরা সন্ত্রাসীদের নিরস্ত্র করার জন্য ধাওয়া করলে পুলিশ তখন প্রচন্ড বাধা দেয়। পুলিশের এস. পি. সহ সিপাহীরা উপসি'ত ছিল কিন' এক অজ্ঞাত কারণে পুলিশ ছিল নিশ্চুপ। শহীদ শফিকের খুনীদের বিচারের দাবীতে শিবির নেতৃবৃন্দ পরের দিন ভিসি অফিসে স্মারকলিপি দিতে গেলে ভিসি আমানুল্ল্লাহর প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতে পুলিশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সেক্রেটারী রফিকুল ইসলাম খান সহ প্রায় চার কুড়ির উর্ধ্বে নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা: কাইছার রহমানের নেতৃত্বে একটি তদন- কমিটি গঠিত হয় কিন' তদনে-র ফল আজ অবধি প্রকাশ পায়নি।
স্মৃতির পাতায় মতিহার
মো: আশরাফুল ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপিঠ হিসাবে সর্বজন স্বীকৃত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় আমার উচ্চ শিক্ষার যাত্রা। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নূন্যতম ইসলামী পরিবেশ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন' আশ্চর্যের বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইসলামী কার্যকলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে নারায়ে তাকবীর আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিয়ে মুসলমানেরা আকাশ বাতাসকে মুখরিত করে তোলে সেই পবিত্র ধ্বনিটিও উচ্চারণ করা ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামী আন্দোলনের জানবাজ কর্মীরা অত্যন- গোপনে সাধারণ ছাত্রদের মাঝে ইসলামের দাওয়াতী কাজ চালিয়ে যেত। কিন' ইসলামের শত্রু বামপন'ী সংগঠনগুলো এই গোপন কাজেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো এবং ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সর্বদাই সন্ত্রস- করে রাখতো। কিন' এরপরও থেমে যাইনি দাওয়াতী কাজের গতি। এমনিভাবেই চলতে চলতে ১৯৮৮ সালের ৩১ মে উপসি'ত হলো এক ভয়াল পড়ন- বিকালে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে একজন ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সেদিন পড়ন- বিকাল বামপন'ী ও রামপন'ীর সকল ছাত্র সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সকল নেতাকর্মীকে অস্ত্রের বলে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে। তাদের মারাত্মক অস্ত্রের আঘাতে জখম হন শিবির নেতা মতিউর, কয়েস উদ্দিন, এন-াজ এবং ইউসুফ। দীর্ঘ ২ মাস ক্যাম্পাসের বাইরে অত্যন- মানবেতর জীবন যাপন করার পর ১৯৮৮ সালের ২৭ জুলাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের বুলন্দ আওয়াজে নারায়ে তাকবীর আল্ল্লাহ আকবর ধ্বনিতে ক্যাম্পাস মুখরতি হয়ে
ওঠে। কিন' বাতিল শক্তি মেনে নিতে পারেনি এই বুলন্দ আওয়াজকে। তৎকালীন ভি. সি. ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সহযোগিতায় বাতিল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মেতে ওঠে হত্যা ও খুনের হোলিখেলায়। তার ফলশ্রুতিতে ১৯৮২ সালের ১১ মার্চের শহীদ সাব্বির, আইয়ুব, হামিদ আর জব্বারের সাথে মিলিত হতে থাকে আরও ইসলামের তরুণতাজা প্রাণ। আমরা হারাই আমাদের প্রিয় ভাই আসলাম, আসগর, শফিক, খলিল, আজিবর, রবিউল আর মোস-াফিজকে।
১৯৮৯ সালের ১৮ এপ্রিল (১৭ ই রমজান) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ শান-। দেশের প্রত্যন- অঞ্চল থেকে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির উদ্দেশ্যে ফরম পূরণ ও জমা দেয়া নিয়ে ব্যস-। ইসলামী ছাত্রশিবির বরাবরই নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করে থাকে। সেই বারও ভর্তিচ্ছুদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকের সামনে ইসলামী ছাত্রশিবির একটি অস'ায়ী টেন্ট স'াপন করে। সেই টেন্টেই শহীদ শফিক সহযোগিতার কাজে ব্যস-। হঠাৎ করেই ক্যাম্পাসে সৃষ্টি হয় গোলযোগ। পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রমৈত্রীর কামরান হাফিজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন শের-ই-বাংলা হল শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের তোতাকে আঘাত করে। ফলে তোতার নাক দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়। শুরু হয় সংঘর্ষ। শহীদ শফিক ছুটে যান সংঘর্ষের কারণ জানার জন্য। কিন' তার আর ফিরে আসা হয়নি। বাতিলের বুলেট তার বুকে বিদ্ধ হয়ে তিনি রোজা রাখা অবস'ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহাদাত বরণ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন)।
শহীদ শফিক ভাই সহ অন্যান্য শহীদ ভায়েরা আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন' শহীদ শফিক ভাই এর কয়েকদিন আগেও তার দাফন সংক্রান- ঘটনা প্রবাহ আজও আমার মনে দাগ কাটে, শহীদ হবার ২দিন আগ পর্যন- প্রায় ১০/১৫ দিন আমার খাটে আমার পাশেই শয়ন করতেন শহীদ শফিক ভাই। রমজান মাসে আমাদের অধিকাংশ ভায়েরা ছুটিতে বাড়ি চলে যান। আমি থাকতাম শের-ই-বাংলা হলে এবং শফিক ভাই থাকতেন মতিহার হলে। মতিহার হলে জনশক্তি একেবারেই কম থাকার কারণে সাংগঠনিক সিদ্ধান- অনুযায়ী শফিক ভাইকে আমার হলের আমার বেডেই থাকার ব্যবস'া করি। আনুমানিক ১০/১৫ দিন থাকার পর শাহাদাতের ২ দিন আগে তিনি আমাকে বললেন, “আশরাফ ভাই, আপনার হলে শুধু আমার থাকাই হচ্ছে। লেখা পড়া হচ্ছে না। সুতরাং আমি আমার নিজ হলের নিজ রুমে চলে যাই। আল্ল্লাহ যা করবেন ভালর জন্যই করবেন।” তার লেখা পড়ার ব্যাঘাত হচ্ছে বুঝতে পেরে আমি তাকে বাধা দেইনি। নিজ হলেই পবিত্র মাহে রমজানে রোজা রাখা, লেখাপড়া আর দাওয়াতী দ্বীনের কাজে ব্যস- থাকতেন শহীদ শফিক ভাই।
দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে শফিক ভাই এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন অনন- জীবনে। তার শাহাদাতের খবর ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে। তার দেশের বাড়িতেও খবর দেয়া হলো। সন্ধ্যা নাগাদ তার মেজ ভাই ছুটে আসলেন রাজশাহীতে ্লেহের ছোট ভাইটিকে দেখার জন্য। এশার নামাজ পর রাজশাহীতে হেতেম খাঁয় অবসি'ত সদর হাসপাতালের সামনের প্রশস- রাস-ায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হলো। নামাজের আগে জামায়াত ও শিবির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আবেগ বিজড়িত কণ্ঠে বক্তৃতা করলেন শহীদের সেই ভাই।
এদিকে শফিক ভাইয়ের শাহাদাত এবং নাসিম ভাই ও সাত্তার ভাইকে গুলির আঘাতে মারাত্মক ভাবে যখম করার প্রতিবাদে ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ঐ দিন ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করা হলো। প্রতিবাদ মিছিল ভিসির বাসভবনে খুনীদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে গেলে ভি. সি. সাহেব ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শিবিরের ৮৭ জন নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন পুলিশকে। পুলিশ ৮৭ জনকে গ্রেফতার করে থানা হাজতে প্রেরণ করেন। এমনি এক সংকটময় মূহূর্তে শহীদ শফিক ভাই এর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির পক্ষ থেকে আমার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় এর জিওলজি এন্ড মাইনিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব আব্দুল মান্নান স্যার। রাত্রি ১২ টার দিকে ৮/১০ জন শিবির কর্মীসহ শফিক ভাই-এর লাশ নিয়ে লাশবাহী ট্রাকটি শহীদের বাড়ি নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার শাহবাজপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। যাত্রার প্রাক্কালে আমাকে এই মর্মে সংবাদ দেয়া হয় যে, শহীদ শফিক ভাই এর আব্বা-আম্মা এমনিতেই শারীরিক ভাবে অসুস', এরপরে শফিক ভাই এর শাহাদাতের কথা শুনলে কিংবা লাশ দেখলে কোন নতুন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। হয়তবা আরও দু’টি প্রাণের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আমাকে রাজশাহী ফিরে আসতে হবে।
ট্রাকে উঠে শহীদ শফিক ভাই- এর লাশের পাশে বসি। তার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল তখন তিনি শাহাদাতের পিয়ালা পান করে পরম শানি-তে ঘুমাচ্ছেন। চোখে মুখে কোন বিষণ্নতা নেই, নেই কোন আঘাতের ছাপ। হাস্যোজ্জল মুখে চির নিদ্রায় শায়িত তিনি। তখন আমার বার বার মনে পড়ে কুরআনের সেই আয়াতগুলি সেখানে বলা হয়েছে “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত কিন' তা তোমরা বুঝতে পারোনা।” শফিক ভাই-এর লাশবাহী ট্রাকটি যখন নবাবগঞ্জ শহরে পৌঁছে তখন রাত দু’টা বাজে। আমরা নবাবগঞ্জ শিবির অফিসের সামনে লাশবাহী ট্রাকটি রেখে শিবিরের জেলা মেসে কয়েক মিনিটের জন্য বিশ্রাম শেষে সেহেরী গ্রহণ করি। তার কিছুক্ষণ পরে শুরু হয় সুললিত কন্ঠে মুয়াজ্জিনের সুমধুর আযান। ফজরের নামাজ শেষে নাবাবগঞ্জ পৌরসভা পার্কে শহীদের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের প্রতিবাদ মুখর ট্রাকটি মহানন্দা মাঠে পৌঁছে। মাঠ পার হয়ে আমরা শিবগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি এবং সকাল আটটার সময় শিবগঞ্জের খেলার মাঠে শহীদের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শিবগঞ্জে জানাজা শেষে আমরা শহীদের গ্রামের বাড়ি শাহবাজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। সকালে আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে শহীদের বাড়িতে পৌঁছি। ট্রাক থেকে নেমেই প্রথম দেখা হয় শহীদের সম্মানিত পিতার সাথে। তিনি আমাকে প্রথম প্রশ্নই করেন আমার শফিক কেমন আছে? প্রথম এই প্রশ্নেই আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। কিন' পরক্ষণেই উত্তর দিই আপনার ছেলে ভাল আছে এবং শাহাদাতের অমীয় পেয়ালা পান করে শানি-তে ঘুমাচ্ছে। এর পরে তিনি অনুরোধ করে বললেন, বাবা আমার শফিককে একবার দেখার সুযোগ আমাকে দিও। আমি শুধু বললাম আপনার ছেলেকে আপনার হাতে তুলে দেয়ার জন্যই তো আমরা এখানে এসেছি। এর পরে চতুর্থ এবং সর্বশেষ জানাজার প্রক্রিয়া শুরু হলো। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা হলো। সেখানে শহীদের পিতাও কথা বললেন। তিনি শহীদের একজন গর্বিত পিতা হিসাবে সবার নিকট শহীদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া চেয়ে বক্তব্য শেষ করলেন।
দাফন শেষে আমাদের ট্রাকটি আবার রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা করলো। ট্রাকটি যাত্রার প্রাক্কালে হঠাৎ আমার স্মরণ হলো শহীদের পিতার অবস'া তো দেখলাম কিন' মায়ের অবস'া না জেনে রাজশাহী গিয়ে কি জবাব দেব আমাদের উৎসুক ভাইদের কাছে? তাই দশ মিনিটের জন্য বাড়ির ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম ঘরের বারান্দায় পনের বিশ জন মহিলা বসে আছেন। সবারই চোখে পানি জ্বল-জ্বল করছে। পরিচয় নিয়ে শহীদ শফিক ভাই- এর মায়ের নিকটে গিয়ে সালাম দিলাম। তিনি আমাকে একটা পিড়িতে বসতে বললেন। প্রথম আমি বললাম আপনি কেমন আছেন? তিনি এর কোন উত্তর না দিয়ে স্বাভাবিক ও সি'র কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, শফিক কখন কোথায় গুলির আঘাত পেয়েছে? সে কি রোজা মুখে শাহাদাত বরণ করেছে না শাহাদাতের আগে কিছু পান করেছে, কী খেয়ে রোজা করেছিল, রাত্রে সে কোথায় শয়ন করেছিল, শাহাদাতের আগে সে বাড়ির উদ্দেশ্যে কোন কিছু বলেছে কিনা ? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন করলেন আমাকে। আমার জানামতে সকল প্রশ্নের উত্তর দিলাম ও দোয়া চেয়ে বিদায় নিলাম। অবশ্য তিনি আমাকে ঘন ঘন তাদের বাড়িতে আসার জন্য অনুরোধ করলেন। যাত্রার প্রাক্কালে এবার দেখা হলো শহীদের পিতার সাথে। তিনি আমাকে তার এবং তার ছেলের জন্য দোয়া করতে বললেন। আমার তখনই মনে হলো নিজের প্রিয়তম সন-ানকে হারানোর পরেও যে দেশের পিতা-মাতা ধৈর্য ধারন করতে পারেন নিজেকে শহীদের গর্বিত পিতা-মাতা বলে পরিচয় দিতে পারেন সে দেশে ইসলামী বিপ্ল্লব হবেই ইন্শাআল্ল্লাহ। হতে পারে সেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আজ আমাদের শহীদের উত্তরসূরীদের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে নিজেকে যেমন ইসলামের আলোকে গঠন করা তেমনি তাদের অসমাপ্ত কাজকে বাস-বায়ন করার জন্য সকল বাধা বিপত্তি, সকল ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পরিবেশে ইসলামী বিপ্ল্লবের কাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রাণান-কর চেষ্টা করা। মহান রাব্বুল আলামীন এদেশের কোটি কোটি মজলুম মানুষের স্বার্থে শহীদের পবিত্র রক্তকে কবুল করুন এবং এদেশে ইসলামী সমাজ দেখে যাওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
(লেখক: সাবেক ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক,বাংলাদেশ ইসলমী ছাত্রশিবির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)
ওঠে। কিন' বাতিল শক্তি মেনে নিতে পারেনি এই বুলন্দ আওয়াজকে। তৎকালীন ভি. সি. ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সহযোগিতায় বাতিল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মেতে ওঠে হত্যা ও খুনের হোলিখেলায়। তার ফলশ্রুতিতে ১৯৮২ সালের ১১ মার্চের শহীদ সাব্বির, আইয়ুব, হামিদ আর জব্বারের সাথে মিলিত হতে থাকে আরও ইসলামের তরুণতাজা প্রাণ। আমরা হারাই আমাদের প্রিয় ভাই আসলাম, আসগর, শফিক, খলিল, আজিবর, রবিউল আর মোস-াফিজকে।
১৯৮৯ সালের ১৮ এপ্রিল (১৭ ই রমজান) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ শান-। দেশের প্রত্যন- অঞ্চল থেকে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির উদ্দেশ্যে ফরম পূরণ ও জমা দেয়া নিয়ে ব্যস-। ইসলামী ছাত্রশিবির বরাবরই নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করে থাকে। সেই বারও ভর্তিচ্ছুদের সাহায্যের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকের সামনে ইসলামী ছাত্রশিবির একটি অস'ায়ী টেন্ট স'াপন করে। সেই টেন্টেই শহীদ শফিক সহযোগিতার কাজে ব্যস-। হঠাৎ করেই ক্যাম্পাসে সৃষ্টি হয় গোলযোগ। পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রমৈত্রীর কামরান হাফিজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন শের-ই-বাংলা হল শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের তোতাকে আঘাত করে। ফলে তোতার নাক দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়। শুরু হয় সংঘর্ষ। শহীদ শফিক ছুটে যান সংঘর্ষের কারণ জানার জন্য। কিন' তার আর ফিরে আসা হয়নি। বাতিলের বুলেট তার বুকে বিদ্ধ হয়ে তিনি রোজা রাখা অবস'ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহাদাত বরণ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন)।
শহীদ শফিক ভাই সহ অন্যান্য শহীদ ভায়েরা আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন' শহীদ শফিক ভাই এর কয়েকদিন আগেও তার দাফন সংক্রান- ঘটনা প্রবাহ আজও আমার মনে দাগ কাটে, শহীদ হবার ২দিন আগ পর্যন- প্রায় ১০/১৫ দিন আমার খাটে আমার পাশেই শয়ন করতেন শহীদ শফিক ভাই। রমজান মাসে আমাদের অধিকাংশ ভায়েরা ছুটিতে বাড়ি চলে যান। আমি থাকতাম শের-ই-বাংলা হলে এবং শফিক ভাই থাকতেন মতিহার হলে। মতিহার হলে জনশক্তি একেবারেই কম থাকার কারণে সাংগঠনিক সিদ্ধান- অনুযায়ী শফিক ভাইকে আমার হলের আমার বেডেই থাকার ব্যবস'া করি। আনুমানিক ১০/১৫ দিন থাকার পর শাহাদাতের ২ দিন আগে তিনি আমাকে বললেন, “আশরাফ ভাই, আপনার হলে শুধু আমার থাকাই হচ্ছে। লেখা পড়া হচ্ছে না। সুতরাং আমি আমার নিজ হলের নিজ রুমে চলে যাই। আল্ল্লাহ যা করবেন ভালর জন্যই করবেন।” তার লেখা পড়ার ব্যাঘাত হচ্ছে বুঝতে পেরে আমি তাকে বাধা দেইনি। নিজ হলেই পবিত্র মাহে রমজানে রোজা রাখা, লেখাপড়া আর দাওয়াতী দ্বীনের কাজে ব্যস- থাকতেন শহীদ শফিক ভাই।
দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে শফিক ভাই এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন অনন- জীবনে। তার শাহাদাতের খবর ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে। তার দেশের বাড়িতেও খবর দেয়া হলো। সন্ধ্যা নাগাদ তার মেজ ভাই ছুটে আসলেন রাজশাহীতে ্লেহের ছোট ভাইটিকে দেখার জন্য। এশার নামাজ পর রাজশাহীতে হেতেম খাঁয় অবসি'ত সদর হাসপাতালের সামনের প্রশস- রাস-ায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হলো। নামাজের আগে জামায়াত ও শিবির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আবেগ বিজড়িত কণ্ঠে বক্তৃতা করলেন শহীদের সেই ভাই।
এদিকে শফিক ভাইয়ের শাহাদাত এবং নাসিম ভাই ও সাত্তার ভাইকে গুলির আঘাতে মারাত্মক ভাবে যখম করার প্রতিবাদে ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ঐ দিন ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করা হলো। প্রতিবাদ মিছিল ভিসির বাসভবনে খুনীদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে গেলে ভি. সি. সাহেব ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শিবিরের ৮৭ জন নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন পুলিশকে। পুলিশ ৮৭ জনকে গ্রেফতার করে থানা হাজতে প্রেরণ করেন। এমনি এক সংকটময় মূহূর্তে শহীদ শফিক ভাই এর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির পক্ষ থেকে আমার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় এর জিওলজি এন্ড মাইনিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব আব্দুল মান্নান স্যার। রাত্রি ১২ টার দিকে ৮/১০ জন শিবির কর্মীসহ শফিক ভাই-এর লাশ নিয়ে লাশবাহী ট্রাকটি শহীদের বাড়ি নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার শাহবাজপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। যাত্রার প্রাক্কালে আমাকে এই মর্মে সংবাদ দেয়া হয় যে, শহীদ শফিক ভাই এর আব্বা-আম্মা এমনিতেই শারীরিক ভাবে অসুস', এরপরে শফিক ভাই এর শাহাদাতের কথা শুনলে কিংবা লাশ দেখলে কোন নতুন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। হয়তবা আরও দু’টি প্রাণের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আমাকে রাজশাহী ফিরে আসতে হবে।
ট্রাকে উঠে শহীদ শফিক ভাই- এর লাশের পাশে বসি। তার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল তখন তিনি শাহাদাতের পিয়ালা পান করে পরম শানি-তে ঘুমাচ্ছেন। চোখে মুখে কোন বিষণ্নতা নেই, নেই কোন আঘাতের ছাপ। হাস্যোজ্জল মুখে চির নিদ্রায় শায়িত তিনি। তখন আমার বার বার মনে পড়ে কুরআনের সেই আয়াতগুলি সেখানে বলা হয়েছে “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত কিন' তা তোমরা বুঝতে পারোনা।” শফিক ভাই-এর লাশবাহী ট্রাকটি যখন নবাবগঞ্জ শহরে পৌঁছে তখন রাত দু’টা বাজে। আমরা নবাবগঞ্জ শিবির অফিসের সামনে লাশবাহী ট্রাকটি রেখে শিবিরের জেলা মেসে কয়েক মিনিটের জন্য বিশ্রাম শেষে সেহেরী গ্রহণ করি। তার কিছুক্ষণ পরে শুরু হয় সুললিত কন্ঠে মুয়াজ্জিনের সুমধুর আযান। ফজরের নামাজ শেষে নাবাবগঞ্জ পৌরসভা পার্কে শহীদের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের প্রতিবাদ মুখর ট্রাকটি মহানন্দা মাঠে পৌঁছে। মাঠ পার হয়ে আমরা শিবগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি এবং সকাল আটটার সময় শিবগঞ্জের খেলার মাঠে শহীদের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শিবগঞ্জে জানাজা শেষে আমরা শহীদের গ্রামের বাড়ি শাহবাজপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। সকালে আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে শহীদের বাড়িতে পৌঁছি। ট্রাক থেকে নেমেই প্রথম দেখা হয় শহীদের সম্মানিত পিতার সাথে। তিনি আমাকে প্রথম প্রশ্নই করেন আমার শফিক কেমন আছে? প্রথম এই প্রশ্নেই আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। কিন' পরক্ষণেই উত্তর দিই আপনার ছেলে ভাল আছে এবং শাহাদাতের অমীয় পেয়ালা পান করে শানি-তে ঘুমাচ্ছে। এর পরে তিনি অনুরোধ করে বললেন, বাবা আমার শফিককে একবার দেখার সুযোগ আমাকে দিও। আমি শুধু বললাম আপনার ছেলেকে আপনার হাতে তুলে দেয়ার জন্যই তো আমরা এখানে এসেছি। এর পরে চতুর্থ এবং সর্বশেষ জানাজার প্রক্রিয়া শুরু হলো। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা হলো। সেখানে শহীদের পিতাও কথা বললেন। তিনি শহীদের একজন গর্বিত পিতা হিসাবে সবার নিকট শহীদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া চেয়ে বক্তব্য শেষ করলেন।
দাফন শেষে আমাদের ট্রাকটি আবার রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা করলো। ট্রাকটি যাত্রার প্রাক্কালে হঠাৎ আমার স্মরণ হলো শহীদের পিতার অবস'া তো দেখলাম কিন' মায়ের অবস'া না জেনে রাজশাহী গিয়ে কি জবাব দেব আমাদের উৎসুক ভাইদের কাছে? তাই দশ মিনিটের জন্য বাড়ির ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম ঘরের বারান্দায় পনের বিশ জন মহিলা বসে আছেন। সবারই চোখে পানি জ্বল-জ্বল করছে। পরিচয় নিয়ে শহীদ শফিক ভাই- এর মায়ের নিকটে গিয়ে সালাম দিলাম। তিনি আমাকে একটা পিড়িতে বসতে বললেন। প্রথম আমি বললাম আপনি কেমন আছেন? তিনি এর কোন উত্তর না দিয়ে স্বাভাবিক ও সি'র কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, শফিক কখন কোথায় গুলির আঘাত পেয়েছে? সে কি রোজা মুখে শাহাদাত বরণ করেছে না শাহাদাতের আগে কিছু পান করেছে, কী খেয়ে রোজা করেছিল, রাত্রে সে কোথায় শয়ন করেছিল, শাহাদাতের আগে সে বাড়ির উদ্দেশ্যে কোন কিছু বলেছে কিনা ? ইত্যাদি নানান প্রশ্ন করলেন আমাকে। আমার জানামতে সকল প্রশ্নের উত্তর দিলাম ও দোয়া চেয়ে বিদায় নিলাম। অবশ্য তিনি আমাকে ঘন ঘন তাদের বাড়িতে আসার জন্য অনুরোধ করলেন। যাত্রার প্রাক্কালে এবার দেখা হলো শহীদের পিতার সাথে। তিনি আমাকে তার এবং তার ছেলের জন্য দোয়া করতে বললেন। আমার তখনই মনে হলো নিজের প্রিয়তম সন-ানকে হারানোর পরেও যে দেশের পিতা-মাতা ধৈর্য ধারন করতে পারেন নিজেকে শহীদের গর্বিত পিতা-মাতা বলে পরিচয় দিতে পারেন সে দেশে ইসলামী বিপ্ল্লব হবেই ইন্শাআল্ল্লাহ। হতে পারে সেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আজ আমাদের শহীদের উত্তরসূরীদের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে নিজেকে যেমন ইসলামের আলোকে গঠন করা তেমনি তাদের অসমাপ্ত কাজকে বাস-বায়ন করার জন্য সকল বাধা বিপত্তি, সকল ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পরিবেশে ইসলামী বিপ্ল্লবের কাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রাণান-কর চেষ্টা করা। মহান রাব্বুল আলামীন এদেশের কোটি কোটি মজলুম মানুষের স্বার্থে শহীদের পবিত্র রক্তকে কবুল করুন এবং এদেশে ইসলামী সমাজ দেখে যাওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
(লেখক: সাবেক ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক,বাংলাদেশ ইসলমী ছাত্রশিবির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)
শহীদী মিছিলের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র শহীদ শফিকুল ইসলাম
মো: সেতাউর রহমান
পদ্মা বিধৌত হযরত শাহ্ মখদুম (রহঃ)- এর স্মৃতি বিজড়িত উত্তর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এক অনন্য লীলাভূমি এই পবিত্র বিদ্যাপীঠ। সবুজ-শ্যামল, ছায়া সুনিবিড় আর সাজানো গোছানো সুরম্য অট্টালিকার মাধ্যমে চিত্তাকর্ষক ও মনোমুগ্ধকর দেখায় এই ক্যাম্পাস। শিক্ষার জগতে ভ্রমন করার, শিক্ষার অতল সমুদ্রে অবগাহন করার এবং জীবন সংগ্রামে নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য হৃদয়ে একগুচ্ছ আশা-ভরসা নিয়ে ভর্তি হয় ছাত্র-ছাত্রীরা মতিহারের এই সবুজ চত্বরে। প্রকৃতির সেই বাস-বতায় জীবনে বড় হওয়ার এক অদম্য স্পৃহা নিয়ে এই ক্যাম্পাসে ভর্তি হন আমাদের প্রিয় ভাই প্রতিভাবান ছাত্র, শহীদী মিছিলের উজ্জ্বল নক্ষত্র শহীদ শফিকুল ইসলাম। শহীদ শফিকুল ইসলাম ১৯৬৭ সালে নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অন-র্গত শাহবাজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই, চার বোন। ভাই-বোনদের মধ্যে ৫ম এবং ভাইদের মাঝে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বড় ভাই কামাল হাসান বিমান বাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার। মেজ ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক।
মরহুম পিতা কায়েস আহমদ ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি গত ২৪-২-৯৮ ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার সকাল৯-৪৫ মিনিটে ইনে-কাল করেন। মরহুমা মাতা ইহজগতের মায়া ত্যাগ করে জান্নাতের সিঁড়িতে পদার্পণ করেন ৩-১০-৯৫ ইং তারিখে রোজ মঙ্গলবার ভোর ৪ টায়।
শহীদী ঈদগাহের উজ্জ্বল নক্ষত্র শফিকুল ইসলাম পারদিলালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাস করেন। শাহবাজপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৮২ সালে অংকে লেটারসহ প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে এস এস সি পাস করেন। ঐতিহ্যবাহী কলেজ প্রতিষ্ঠান আদিনা ফজলুল হক সরকারী কলেজ
থেকে ১৯৮৪ সালে প্রথম বিভাগে এইচ এস সি পাস করেন। নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার মহান লক্ষ্যে মতিহারের পবিত্র অঙ্গনে ১৯৮৪-৮৫ শিক্ষাবর্ষে গণিত বিভাগে প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন প্রিয় ভাই শহীদ শফিকুল ইসলাম। তিনি ছিলেন মতিহার হলের আবাসিক ছাত্র এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের হল শাখার সেক্রেটারী। শাহাদাত কালীন সময়ে তিনি গণিত তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। দ্বীন কায়েমের বিপ্ল্লবী কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের দাওয়াত পান ১৯৮১ সালে স্কুল জীবনে। আল্ল্লাহর রঙে জীবনকে রঙ্গীন করার মহান চেতনায় ১৯৮৪ সালে সংগঠনের সাথী প্রার্থী হন অতঃপর আল্লাহর সন'ষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে সাথী শপথ গ্রহণ করেন। যদিও তিনি ক্যাম্পাসে এসে সাথী শপথ গ্রহণ করেন তবুও তিনি সংগঠনে প্রবেশের সূচনালগ্ন থেকেই সংগঠনের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। দাওয়াতে দ্বীনের মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রদের মাঝে ইসলামের সুমহান বাণী পৌঁছিয়ে দিতেন। তার অসাধারণ প্রতিভা এবং অনুপম চরিত্র স্কুল ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঈমানের প্রদীপ্ত চেতনা তাকে দাওয়াতের কাজে উদ্ধুদ্ধ করত প্রতিনিয়ত। যার কারণে তিনি বাড়ী থেকে প্রায় ১০ কিঃ মিঃ দূরে মির্জাপুর হাইস্কুলে পায়ে হেঁটে গিয়ে প্রোগ্রাম করে আসতেন এবং তরুণ ছাত্র সমাজকে দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান আদর্শের পথে আহবান করতেন।
শহীদী মিছিলের উজ্জ্বল তারকা শহীদ শফিকুল ইসলাম শুধুমাত্র একজন ভাল ছাত্রই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন আদর্শ যুবক। সামাজিক কর্মকান্ডের প্রতি দায়িত্ববান এক সচেতন নাগরিক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ দুর্যোগ বন্যায় একবার এলাকা প্লাবিত হওয়া শুরু হলে তিনি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকার সমস- ছাত্রদেরকে একত্রিত করে গ্রামের পার্শ্ববর্তী উমরপুর নালায় বাঁধ প্রদান করেন। ফলে এলাকার বিপুল পরিমাণ শস্য-ক্ষেত এবং ঘরবাড়ি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়।
শহীদী মিছিলের অগ্রসেনা শহীদ শফিকুল ইসলাম আচার আচরণের দিক থেকে এক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। উত্তম চরিত্র ও আচরণের কারণে তিনি ছিলেন একাধারে পিতা-মাতার আদরের সন-ান, বড় ভাই-বোনদের একান- স্নেহভাজন, পাড়ার প্রতিটি মানুষের উত্তম প্রতিবেশী এবং শিক্ষক মন্ডলীর নিকট এক আদর্শবান ছাত্র। রুচিশীল ও মার্জিত পোশাক পরতেন তিনি। প্রিয় শখ ছিল ফুটবল খেলা, তবে সংগঠনে আসার পর ট্রাকস্যুট পরে খেলতেন। তিনি হাতের তৈরি পিঠা খেতে ভালবাসতেন। ইসলামী অনুশাসনের প্রতি ছিল তাঁর ঐকানি-ক অনুরাগ। আন-রিকতা ও নিষ্ঠার সাথে ইসলামের ফরজিয়াতসমূহ পালন করতেন। নফল নামাজ ও নফল রোযা ছিল তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য আমল।
শহীদ শফিকুল ইসলামের জীবনের মহান লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া অথবা বি সি এস ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া। কিন' মানুষের তৈরি করা মতবাদের ধ্বজাধারী ইসলামের দুশমনরা তার সে স্বপ্নকে বাস-বায়িত হতে দেয়নি। তাদের পাশবিক জিঘাংসা মেটানোর টার্গেটে পরিণত হন তিনি। তাঁকে যোগ দিতে হয় শহীদ আসলাম ও আসগরের পথ ধরে শহীদী মিছিলে।
সেদিন ছিল ১৮ এপ্রিল ১৯৮৯ সাল। ক্যাম্পাসে শহীদ আসলাম ও আসগরের রক্ত শুকাতে না শুকাতেই ঘটে গেল আর একটি নারকীয় ঘটনা। ক্যাম্পাসের ৭ম শহীদ শফিকুল ইসলামের শাহাদাত। শহীদ আসলাম ও আসগরের শাহাদতের মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলামী আন্দোলনের জিন্দাদিল কর্মীরা যখন শহীদের রক্তে ভেজা মতিহারের পবিত্র অংগনে দাওয়াতে দ্বীনের কাজ শুরু করেন তখন ইয়াজিদ আর সীমারের উত্তরসূরী ইসলাম বিরোধী শক্তির হৃদয়তন্ত্রীতে শুরু হয় মর্মজ্বালা। তারা ইস্যু খুঁজতে থাকে কিভাবে মতিহারের সুবজ চত্বর থেকে নারায়ে তাকবীরের শ্লোগান চিরদিনের জন্য মুছে ফেলা যায়। এমনি একটা সময়ে তৈরি হল নতুন আর একটি ইস্যু। ক্লাসে আগের বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে প্রথমে কথা কাটাকাটি শুরু হয়, পরে সেটা রাজনৈতিক ব্যাপারে রূপান-রিত হয়। তথাকথিত সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা প্রথমেই কলা ভবনের সামনে শিবির নেতা তোতাকে আঘাত করে। মৈত্রীর সশস্ত্র গুন্ডা কামরান তোতা ভায়ের নাকের ওপর প্রচন্ড আঘাতে তার নাক ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। এরপরে সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা গোটা ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের সামনে ভর্তি গাইড বিক্রি রত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ওপর হামলা পরিচালনা করে। চালাতে থাকে এলোপাতাড়ি গুলি। গণিত ৩য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবি শিক্ষক শফিকুল ইসলাম অন্যান্য শিবির কর্মীদের সাথে গাইড বিক্রির কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
সন্ত্রাসী বাহিনীর উপুর্যপরি গুলিবৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও শফিকুল ইসলাম তার প্রিয় কাফেলার অন্যান্য ভাইদের হেফাজত ও খোঁজ খবরের স্বার্থে ব্যাংকের সামনে থেকে প্যারিস রোডের দিকে সিনেট ভবনের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। এমনি একটি ভয়াবহ মুহূর্তে সন্ত্রাসীদের একটি গুলি শহীদ শফিকুল ইসলামের বক্ষভেদ করে চলে যায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মারাত্মক আহতাবস'ায় শফিকুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মেডিকেলে পৌঁছার পরও তিনি জিজ্ঞেস করতে থাকেন হৃদয়ের স্পন্দন ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবস'ান সম্পর্কে, ক্যাম্পাসের সর্বশেষ অবস'া সম্পর্কে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শফিকুল ইসলাম শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে শহীদী মিছিলে যোগ দিয়ে চলে গেলেন আল্লাহর সান্নিধ্যে অনন- জীবনে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শহীদ শফিকুল ইসলামকে হত্যা করে জাসদ-মৈত্রীর সশস্ত্র গুন্ডা বাহিনী। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশের উপসি'তিতে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটে যাওয়া এই হত্যা কান্ডের বিচার দাবী করে কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।
সেই ’৮৯ থেকে আজ অবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পদ্মায় বন্যার জোয়ার এসেছে নিয়মিত। চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র উদিত হয়ে অস- যাচ্ছে আগের মতই, প্রকৃতিতে বসনে-র আগমন ও প্রস'ান ঘটেছে অনেক বার, সূর্য মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলে স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে বারবার, কিন' আজ পর্যন- সুষ্ঠু বিচার করা হয়নি শহীদ শফিকুল ইসলামের খুনীদের। যার কারণে সন্ত্রাসীরা উৎসাহিত হয়ে ক্যাম্পাসে বার বার হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে নির্লিপ্তে নির্বিঘ্নে। ফলশ্রুতিতে জীবন দিতে হয়েছে ’৯০-এর ২২ জুন শিবির নেতা খলিলুর রহমানকে, ’৯৩-এর ৬ ফেব্রুয়ারী মোস-াফিজুর রহমান ও রবিউল ইসলামকে, ’৯৫-এর ১২ই ফেব্রুয়ারী মোস-াফিজুর রহমান ও ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে।
এদেশ ও জাতির জন্য দুর্ভাগ্য যে, এদেশের বিচার বিভাগও সরকার নামক প্রশাসন যন্ত্রের নগ্ন থাবার প্রভাবমুক্ত থাকতে পারেনি। প্রভাবমুক্ত থাকতে পারেনি শহীদ শফিকুল ইসলামের বিচাররের ক্ষেত্রেও। শহীদ শফিকুল ইসলামের বিচারের রায় ঘোষণার কয়েক দিন পূর্বে তৎকালীন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিজভি আহমদের নেতৃত্বে খুনীচক্রের একটি দল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করে এবং শফিকুল ইসলামের হত্যাকারীদের বেকসুর খালাস দাবি করে। বেগম খালেদা জিয়া খুনীচক্রের অন্যায় আবেদনের নিকট মাথানতকরে টেলিফোনের মাধ্যমে হস-ক্ষেপ করেন বিচার বিভাগের ওপর। ফলে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটে যাওয়া একটি হত্যাকান্ডের নায়ক জাসদ-মৈত্রীর সন্ত্রাসীদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর এহেন মানবতাবিরোধী, দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং খুনীদের লালন করার নগ্ন বালখিল্যতা দেশবাসীকে চরমভাবে বিস্মিত করেছিল। রাজশাহী কোর্টের সেই দুঃখভরা সাজানো নাটকের দৃশ্য আজও চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। বিচারকের রায় ঘোষণার পূর্বেই খুনীরা পরস্পরের সাথে ফুলের মালা বিনিময় করছিল। বিচারটা ছিল মূলতঃ সাজানো মিথ্যা এক নাটক। হায়রে মানবতা! হায়রে বিচার বিভাগ! হায়রে এদেশের সরকারযন্ত্র! ন্যায়বিচার, মানবতা যে দেশে নিভৃতে কেঁদে কেঁদে ফেরে সে দেশের ক্ষমতায় আসীন বিদেশী প্রভূদের তাবেদার গোষ্ঠীর মুখে শোনা যায়, ন্যায়-বিচার আর মানবতার মুখরোচক মিথ্যাবুলি। শহীদ শফিকুল ইসলামের তো কোন অপরাধ ছিলনা। অপরাধ ছিল মাত্র একটি সেটা হলো ইসলামকে ভালবাসা। মহান আল্ল্লাহ পাক কালামে ঘোষণা করেছেন, “মুমিনদের সাথে’ ঐ বাতিল গোষ্ঠীর শত্রুতা শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা মহাপরাক্রমশালী, প্রশংসিত আল্ল্লাহর ওপর ঈমান এনেছিল।” (আল কুরআন) তারা শহীদ শফিকুল ইসলামকে হত্যা করতে পারে, কিন' তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। তিনি দৃশ্যতঃ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি রয়েছেন জীবিত। মহান আল্লাহর ঘোষণা, “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; কিন' তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না।” (আল কুরআন) তাঁর রেখে যাওয়া জীবনাদর্শ আমাদের জন্য এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। যা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জীবন চলার পথে আলো বিতরণ করবে অনন-কাল ধরে।
(লেখকঃ সাবেক সভাপতি, শহীদ হবিবুর রহমান হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) চারিদিকে ঐ জেগেছে দেখ
শহীদী কাফেলা
ঘুমে বিভোর আছিস নাকি
আজও একেলা।
মরহুম পিতা কায়েস আহমদ ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি গত ২৪-২-৯৮ ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার সকাল৯-৪৫ মিনিটে ইনে-কাল করেন। মরহুমা মাতা ইহজগতের মায়া ত্যাগ করে জান্নাতের সিঁড়িতে পদার্পণ করেন ৩-১০-৯৫ ইং তারিখে রোজ মঙ্গলবার ভোর ৪ টায়।
শহীদী ঈদগাহের উজ্জ্বল নক্ষত্র শফিকুল ইসলাম পারদিলালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাস করেন। শাহবাজপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৮২ সালে অংকে লেটারসহ প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে এস এস সি পাস করেন। ঐতিহ্যবাহী কলেজ প্রতিষ্ঠান আদিনা ফজলুল হক সরকারী কলেজ
থেকে ১৯৮৪ সালে প্রথম বিভাগে এইচ এস সি পাস করেন। নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার মহান লক্ষ্যে মতিহারের পবিত্র অঙ্গনে ১৯৮৪-৮৫ শিক্ষাবর্ষে গণিত বিভাগে প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন প্রিয় ভাই শহীদ শফিকুল ইসলাম। তিনি ছিলেন মতিহার হলের আবাসিক ছাত্র এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের হল শাখার সেক্রেটারী। শাহাদাত কালীন সময়ে তিনি গণিত তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। দ্বীন কায়েমের বিপ্ল্লবী কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের দাওয়াত পান ১৯৮১ সালে স্কুল জীবনে। আল্ল্লাহর রঙে জীবনকে রঙ্গীন করার মহান চেতনায় ১৯৮৪ সালে সংগঠনের সাথী প্রার্থী হন অতঃপর আল্লাহর সন'ষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে সাথী শপথ গ্রহণ করেন। যদিও তিনি ক্যাম্পাসে এসে সাথী শপথ গ্রহণ করেন তবুও তিনি সংগঠনে প্রবেশের সূচনালগ্ন থেকেই সংগঠনের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। দাওয়াতে দ্বীনের মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রদের মাঝে ইসলামের সুমহান বাণী পৌঁছিয়ে দিতেন। তার অসাধারণ প্রতিভা এবং অনুপম চরিত্র স্কুল ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঈমানের প্রদীপ্ত চেতনা তাকে দাওয়াতের কাজে উদ্ধুদ্ধ করত প্রতিনিয়ত। যার কারণে তিনি বাড়ী থেকে প্রায় ১০ কিঃ মিঃ দূরে মির্জাপুর হাইস্কুলে পায়ে হেঁটে গিয়ে প্রোগ্রাম করে আসতেন এবং তরুণ ছাত্র সমাজকে দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান আদর্শের পথে আহবান করতেন।
শহীদী মিছিলের উজ্জ্বল তারকা শহীদ শফিকুল ইসলাম শুধুমাত্র একজন ভাল ছাত্রই ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন আদর্শ যুবক। সামাজিক কর্মকান্ডের প্রতি দায়িত্ববান এক সচেতন নাগরিক। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ দুর্যোগ বন্যায় একবার এলাকা প্লাবিত হওয়া শুরু হলে তিনি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকার সমস- ছাত্রদেরকে একত্রিত করে গ্রামের পার্শ্ববর্তী উমরপুর নালায় বাঁধ প্রদান করেন। ফলে এলাকার বিপুল পরিমাণ শস্য-ক্ষেত এবং ঘরবাড়ি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়।
শহীদী মিছিলের অগ্রসেনা শহীদ শফিকুল ইসলাম আচার আচরণের দিক থেকে এক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। উত্তম চরিত্র ও আচরণের কারণে তিনি ছিলেন একাধারে পিতা-মাতার আদরের সন-ান, বড় ভাই-বোনদের একান- স্নেহভাজন, পাড়ার প্রতিটি মানুষের উত্তম প্রতিবেশী এবং শিক্ষক মন্ডলীর নিকট এক আদর্শবান ছাত্র। রুচিশীল ও মার্জিত পোশাক পরতেন তিনি। প্রিয় শখ ছিল ফুটবল খেলা, তবে সংগঠনে আসার পর ট্রাকস্যুট পরে খেলতেন। তিনি হাতের তৈরি পিঠা খেতে ভালবাসতেন। ইসলামী অনুশাসনের প্রতি ছিল তাঁর ঐকানি-ক অনুরাগ। আন-রিকতা ও নিষ্ঠার সাথে ইসলামের ফরজিয়াতসমূহ পালন করতেন। নফল নামাজ ও নফল রোযা ছিল তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য আমল।
শহীদ শফিকুল ইসলামের জীবনের মহান লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া অথবা বি সি এস ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া। কিন' মানুষের তৈরি করা মতবাদের ধ্বজাধারী ইসলামের দুশমনরা তার সে স্বপ্নকে বাস-বায়িত হতে দেয়নি। তাদের পাশবিক জিঘাংসা মেটানোর টার্গেটে পরিণত হন তিনি। তাঁকে যোগ দিতে হয় শহীদ আসলাম ও আসগরের পথ ধরে শহীদী মিছিলে।
সেদিন ছিল ১৮ এপ্রিল ১৯৮৯ সাল। ক্যাম্পাসে শহীদ আসলাম ও আসগরের রক্ত শুকাতে না শুকাতেই ঘটে গেল আর একটি নারকীয় ঘটনা। ক্যাম্পাসের ৭ম শহীদ শফিকুল ইসলামের শাহাদাত। শহীদ আসলাম ও আসগরের শাহাদতের মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলামী আন্দোলনের জিন্দাদিল কর্মীরা যখন শহীদের রক্তে ভেজা মতিহারের পবিত্র অংগনে দাওয়াতে দ্বীনের কাজ শুরু করেন তখন ইয়াজিদ আর সীমারের উত্তরসূরী ইসলাম বিরোধী শক্তির হৃদয়তন্ত্রীতে শুরু হয় মর্মজ্বালা। তারা ইস্যু খুঁজতে থাকে কিভাবে মতিহারের সুবজ চত্বর থেকে নারায়ে তাকবীরের শ্লোগান চিরদিনের জন্য মুছে ফেলা যায়। এমনি একটা সময়ে তৈরি হল নতুন আর একটি ইস্যু। ক্লাসে আগের বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে প্রথমে কথা কাটাকাটি শুরু হয়, পরে সেটা রাজনৈতিক ব্যাপারে রূপান-রিত হয়। তথাকথিত সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা প্রথমেই কলা ভবনের সামনে শিবির নেতা তোতাকে আঘাত করে। মৈত্রীর সশস্ত্র গুন্ডা কামরান তোতা ভায়ের নাকের ওপর প্রচন্ড আঘাতে তার নাক ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। এরপরে সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা গোটা ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের সামনে ভর্তি গাইড বিক্রি রত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ওপর হামলা পরিচালনা করে। চালাতে থাকে এলোপাতাড়ি গুলি। গণিত ৩য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবি শিক্ষক শফিকুল ইসলাম অন্যান্য শিবির কর্মীদের সাথে গাইড বিক্রির কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
সন্ত্রাসী বাহিনীর উপুর্যপরি গুলিবৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও শফিকুল ইসলাম তার প্রিয় কাফেলার অন্যান্য ভাইদের হেফাজত ও খোঁজ খবরের স্বার্থে ব্যাংকের সামনে থেকে প্যারিস রোডের দিকে সিনেট ভবনের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। এমনি একটি ভয়াবহ মুহূর্তে সন্ত্রাসীদের একটি গুলি শহীদ শফিকুল ইসলামের বক্ষভেদ করে চলে যায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মারাত্মক আহতাবস'ায় শফিকুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মেডিকেলে পৌঁছার পরও তিনি জিজ্ঞেস করতে থাকেন হৃদয়ের স্পন্দন ইসলামী ছাত্রশিবিরের অবস'ান সম্পর্কে, ক্যাম্পাসের সর্বশেষ অবস'া সম্পর্কে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শফিকুল ইসলাম শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে শহীদী মিছিলে যোগ দিয়ে চলে গেলেন আল্লাহর সান্নিধ্যে অনন- জীবনে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শহীদ শফিকুল ইসলামকে হত্যা করে জাসদ-মৈত্রীর সশস্ত্র গুন্ডা বাহিনী। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশের উপসি'তিতে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটে যাওয়া এই হত্যা কান্ডের বিচার দাবী করে কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।
সেই ’৮৯ থেকে আজ অবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পদ্মায় বন্যার জোয়ার এসেছে নিয়মিত। চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র উদিত হয়ে অস- যাচ্ছে আগের মতই, প্রকৃতিতে বসনে-র আগমন ও প্রস'ান ঘটেছে অনেক বার, সূর্য মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলে স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে বারবার, কিন' আজ পর্যন- সুষ্ঠু বিচার করা হয়নি শহীদ শফিকুল ইসলামের খুনীদের। যার কারণে সন্ত্রাসীরা উৎসাহিত হয়ে ক্যাম্পাসে বার বার হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে নির্লিপ্তে নির্বিঘ্নে। ফলশ্রুতিতে জীবন দিতে হয়েছে ’৯০-এর ২২ জুন শিবির নেতা খলিলুর রহমানকে, ’৯৩-এর ৬ ফেব্রুয়ারী মোস-াফিজুর রহমান ও রবিউল ইসলামকে, ’৯৫-এর ১২ই ফেব্রুয়ারী মোস-াফিজুর রহমান ও ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে।
এদেশ ও জাতির জন্য দুর্ভাগ্য যে, এদেশের বিচার বিভাগও সরকার নামক প্রশাসন যন্ত্রের নগ্ন থাবার প্রভাবমুক্ত থাকতে পারেনি। প্রভাবমুক্ত থাকতে পারেনি শহীদ শফিকুল ইসলামের বিচাররের ক্ষেত্রেও। শহীদ শফিকুল ইসলামের বিচারের রায় ঘোষণার কয়েক দিন পূর্বে তৎকালীন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিজভি আহমদের নেতৃত্বে খুনীচক্রের একটি দল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করে এবং শফিকুল ইসলামের হত্যাকারীদের বেকসুর খালাস দাবি করে। বেগম খালেদা জিয়া খুনীচক্রের অন্যায় আবেদনের নিকট মাথানতকরে টেলিফোনের মাধ্যমে হস-ক্ষেপ করেন বিচার বিভাগের ওপর। ফলে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটে যাওয়া একটি হত্যাকান্ডের নায়ক জাসদ-মৈত্রীর সন্ত্রাসীদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর এহেন মানবতাবিরোধী, দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং খুনীদের লালন করার নগ্ন বালখিল্যতা দেশবাসীকে চরমভাবে বিস্মিত করেছিল। রাজশাহী কোর্টের সেই দুঃখভরা সাজানো নাটকের দৃশ্য আজও চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। বিচারকের রায় ঘোষণার পূর্বেই খুনীরা পরস্পরের সাথে ফুলের মালা বিনিময় করছিল। বিচারটা ছিল মূলতঃ সাজানো মিথ্যা এক নাটক। হায়রে মানবতা! হায়রে বিচার বিভাগ! হায়রে এদেশের সরকারযন্ত্র! ন্যায়বিচার, মানবতা যে দেশে নিভৃতে কেঁদে কেঁদে ফেরে সে দেশের ক্ষমতায় আসীন বিদেশী প্রভূদের তাবেদার গোষ্ঠীর মুখে শোনা যায়, ন্যায়-বিচার আর মানবতার মুখরোচক মিথ্যাবুলি। শহীদ শফিকুল ইসলামের তো কোন অপরাধ ছিলনা। অপরাধ ছিল মাত্র একটি সেটা হলো ইসলামকে ভালবাসা। মহান আল্ল্লাহ পাক কালামে ঘোষণা করেছেন, “মুমিনদের সাথে’ ঐ বাতিল গোষ্ঠীর শত্রুতা শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা মহাপরাক্রমশালী, প্রশংসিত আল্ল্লাহর ওপর ঈমান এনেছিল।” (আল কুরআন) তারা শহীদ শফিকুল ইসলামকে হত্যা করতে পারে, কিন' তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। তিনি দৃশ্যতঃ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি রয়েছেন জীবিত। মহান আল্লাহর ঘোষণা, “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; কিন' তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না।” (আল কুরআন) তাঁর রেখে যাওয়া জীবনাদর্শ আমাদের জন্য এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। যা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জীবন চলার পথে আলো বিতরণ করবে অনন-কাল ধরে।
(লেখকঃ সাবেক সভাপতি, শহীদ হবিবুর রহমান হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) চারিদিকে ঐ জেগেছে দেখ
শহীদী কাফেলা
ঘুমে বিভোর আছিস নাকি
আজও একেলা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন