عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ (رض) عَلَىْ الْمِنْبَرِ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ (صلعم) يَقُوْلُ اِنَّمَا اَلاَعْمَالُ بَالنَّيَّاتِ وَاِنَّمَا لاَْمْرِىْ مَّا نَوَ فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ اِلى دُنْيَا يُصِيْبُهَا اَوْ اِلى اِمْرَأةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ اِلى مَا هَاجَرَ اِلَيْهِ ـ (بخارى) অর্থ:প্রত্যেকটি আমল(কর্ম) নিয়তের উপর নির্ভরশীল বা সকল কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসখানায় নিয়তের গুরুত্ব, আমল ও হিজরত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মুসলমানদের প্রত্যেকটি কাজে নিয়তের বিশুদ্ধতা থাকা অত্যাবশ্যক। প্রতিটি কর্ম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা) সন্তষ্টি অর্জনের জন্যই করা উচিত। কোন কাজে বিশুদ্ধ নিয়ত না থাকলে সে কাজ আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই আল্লাহর নিকট কোন কাজের পুরস্কার পেতে হলে প্রত্যেকটি কাজে নিয়তের বিশুদ্ধতা থাকা অপরিহার্য। এমনকি হিজরতের মত গুরুত্বপূর্ণ দীনি কাজেও নিয়তের বিশুদ্ধতা না থাকলে তা আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হবে না এবং তার প্রতিদান পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা কাজের সাথে বান্দার অন্তরের অবস্থাও দেখতে চান। বিশুদ্ধ নিয়ত প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আর তাদেরকে হুকুম করা হয়েছে যে তারা যেন একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকভাবে আল্লাহর দীন পালনের মাধ্যমে একমাত্র তাঁরই ইবাদ করে। (সূরা আলে-ইমরান: ২৯) আপনি বলুন, তোমরা তোমাদের মনের কথা গোপন রাখ অথবা প্রকাশ কর, তা সবই আল্লাহ জানেন। (সূরা আলে-ইমরান : ২৯) রাবী পরিচিতঃ হযরত উমর (রা)এর মূলনাম-ওমর, উপনাম-হাফস,উপাধি-ফারুক। পিতার নামঃ খাত্তাব। মাতার নামঃ হানতামা বিনতে হাশেম ইবনে মুগিরা। জন্মগ্রহণঃ হযরত উমর (রা) হিজরতের ৪০ বছর পূর্বে রাসূল (সা) এর জন্মের ১৩ বছর পর ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক জীবনঃ প্রাথমিক জীবনে হযরত উমর (রা) পিতা-মাতার আদরে লালিত-পালিত হন। পিতার উট চরাতে সাহায্য করেন। যৌবনের প্রারম্ভে যুদ্ধবিদ্যা, কুস্তি, বক্তৃতা এবং নসবনামা শিক্ষা লাভ করে আত্ম-প্রত্যয়ী যুবক হিসেবে বেড়ে উঠেন। ইসলাম গ্রহণঃ তিনি নবুয়তের ৬ষ্ঠ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বে ৩৯ জন পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করায় তাকে নিয়ে ৪০ জন পূর্ণ হয়। অতঃপর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু হয়। রাসূল (সা) তাঁকে ফারুক উপাধিতে ভূষিত করেন। (উসদুল গাবা) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণঃ হযরত আবু বকর (রা) এর ইনতিকালের পর হিজরী ১৩ সালের ২৩ জমাদিউল উখরা মোতাবেক ২৪শে আগষ্ট ৬৩৪ সালে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর খিলাফত কাল ছিল ১০ বছর ৬ মাস। তাঁর শাসনামলে সর্বাধিক রাজ্য জয় হয়। বিজিত রাজ্যের সংখ্যা ছিল ১৩০৬,তিনি সর্বপ্রথম হিজরী সনের প্রবর্তন করেন।
তিনি র্সবপ্রথম হিজরী সন প্রর্বতন করনে। সামরিক কেন্দ্রসমূহ প্রতষ্ঠি, কাজীর পদ সৃষ্টি ও বর্ধিমীদরে অধিকার সংরক্ষণরের ব্যবস্থা করনে। মূল কথা তিনিই ইসলামী রাষ্ট্র বাস্তব ভিত্তির উপর স্থাপতি করনে। (তাবাকাতে ইবনে সাদ) হাদীস র্বণনার সংখ্যাঃ তাঁর র্বণতি হাদীসরে সংখ্যা ৫৩৯ খানা। বুখারী শরীফে এককভাবে ৯ খানা ও মুসলমি শরীফে এককভাবে ১৫ খানা। উভয় গ্রন্থে র্সবমোট ২৪ খানা হাদীস সন্নবিশেতি হয়েছে। তিনি বিপুল সংখ্যক হাদীস সংগ্রহ করনে ও লিপিবদ্ধ করে রাজ্যর বিভিন্নি শাসকদরে নকিট প্রেরণ করনে। জনসাধারণকে হাদীস শিক্ষা দানের জন্য তিনি বড় বড় সাহাবীদরেকে বিভিন্নি রাজ্যে পাঠান। সেখানে তারা হাদীসের প্রশিক্ষণ দানে ও হাদীস শাস্ত্রের বিজ্ঞ বিজ্ঞ মুহাদ্দিস তৈরি করেন। শাহাদাত লাভঃ হিজরী ২৩ সালরে ২৪ শে জিলহাজ্জ বুধবার মসজদি নববীতে নামাযের ইমামতি করার সময় মুগীরা বনি শুবার দাস আবু লুঘু বষিক্তা তরবারি দ্বারা আঘাত করলে আহত অবস্থায় ২৭শে জিলহাজ্জ শনিবার শাহাদাত লাভ করনে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়ছেলি ৬৩ বছর। (তাবাকাতে ইবনে সাদ) হাদীসটির গুরুত্বঃ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় নিয়তের গুরুত্ব অপরিসিম। নিয়তের এ হাদীসখানা ইসলামরে একটি মূল র্ফমূলা হিসাবে গণ্য। এতে অল্প শব্দে অধিক অর্থ নিহিত রয়েছে। কারো কারো মতে ইসলাম সর্ম্পকিত ইলমে এর গুরুত্ব এক-তৃতীয়াংশ। নিয়তের আভিধানিক অর্থ- اَلْقَصْدُ وَلاِرَادَةُ ـ ইচ্ছা, স্পৃহা, মনের দৃঢ় সংকল্প ইত্যাদি। শরীযতের দৃষ্টিতে আল্লাহ তায়ালার সন্তোষ লাভ ও তাঁর আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করার দিকে হৃদয় মনের লক্ষ্য আরোপ ও উদ্যোগকে নিয়ত বলে। ফতহুর রব্বানী গ্রন্থকার বলনেঃ تَوَجُّهُ الْقَلْبِ جِهَةَ الْفِعْلِ اِبْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ تَعَالى وَاِمْتثَ لآ آلأمْرِهِ ـ "আল্লাহর সন্তষ্টি লাভ ও তাঁর আদেশ পালর্নাথে কোন কাজের দিকে মনে ঐকান্তকি আগ্রহ ও অভিপ্রায় প্রয়োগ করে।(ফতহুর রব্বানী ২য় খন্ড পৃ. ১৭)
ইবাদতমূলক কাজে নিয়তের গুরুত্বঃ ইবাদত বুনিয়াদী র্পযায়ে দু-প্রকারের। যথাঃ- ১ম। মাকসুদা বা মূল ইবাদত: ২য়:গায়রে মাকসুদা বা সহায়ক ইবাদত। ইবাদতে মাকসুদাঃ যে ইবাদতরে দ্বারা সাওয়াব পাওয়ার সাথে সাথে দায়িত্ব মুক্তির উদ্দেশ্য নিহিত থাকে তাকে ইবাদতে মাকসুদা বা মূল ইবাদত বল। যেমন- নামায, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি।২, ইবাদতে গায়েরে মাকসুদাঃ যে ইবাদত মূল ইবাদতের সহায়ক। যে ইবাদত দায়িত্ব মুক্তির উদ্দেশ্যে করা হয় না বরং উহা মাকসুদা বা মূল ইবাদতের সহায়ক বা মাধ্যম হিসাবে পরগনিত হয়। যমেন- অযু, তায়াম্মুম। ইহা সরাসরি ইবাদত নয় বরং সালাত উহার উপর নির্ভরশীল। আর নামাযের জন্য উহা সহায়ক বা মাধ্যমও বটে। নিয়ত ও ইরাদার মধ্যে র্পাথক্যঃ কোন কাজের পিছনে যে উদ্দেশ্যে মানব মনে ক্রিয়শীল থাকে, চাই তা ভাল হোক বা মন্দ হোক তাকেই নিয়ত বলা হয়। আর শুধু কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করার নাম হলো ইরাদা। হিজরত অর্থঃ ত্যাগ করা, সর্ম্পকচ্ছেদ করা, ছেড়ে দেয়া, কোন জিনিস ত্যাগ করা, এক স্থান থাকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া ইত্যাদি। (আল-ওয়াসীতঃ ২/৯৭৩) শরীয়তের পরিভাষায় নিজের জন্মভূমি পরিত্যাগ করে দীন ও ঈমান রক্ষার নিমিত্তে দারুল হরব থাকে দারুল ইসলামে প্রস্থান করাকে শরীয়তে হিজরত বলে। ইবনে হাজার আসকালানির (র) মত, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করাকে হিজরত বলে। একমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দারুল হরব থকে দারুল ইসলাম প্রস্থান করাকে হজিরত বল। যেমেন-নবী করীম (সা) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা) দীন ও ইসলামের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে মক্কাভূমি (দারুল হরব) পরিত্যগ করে মদীনা (দারুল ইসলাম) চলে গিয়েছিলেন। হিজরতের বিধানঃ পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে কিয়ামত র্পযন্ত জারী থাকবে এ বিধানটির উপর মুসলমানদরে বহুবদি কল্যাণ নিহিত আছে। এ দিকে লক্ষ্য রেখেই মহানবী (সা) নিম্নের হাদীসখানা র্বণনা করেছেনঃ لاَ تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ حَتّى لاَ تَنْقَطِعَ التَّوْبَةُ حَتَّى تَطْلُعُ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا ـ "তাওবা করার অবকাশ থাকা র্পযন্ত হিজরতের ধারা বা সিলসিলা বন্ধ হবে না। আর তাওবার অবকাশও বন্ধ হবে না পশ্চিম দিকে র্সূয উদিত না হওয়া র্পযন্ত। (আবু দাউদ) শিক্ষা ১. সকল কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। ২. মুসলমানদের সকল কাজরে র্পূবে নিয়তকে বিশুদ্ধ করে নেয়া উচিত ৩.দীন ও ঈমানের হিফাজতের জন্য প্রয়োজনে হিজরত করতে হবে।৪.সকল কাজ আল্লাহর সন্তষ্টরি জন্য হওয়া অপরিহার্য।শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ ভাল নিয়তে করা জায়েজ নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন