الٓمٓ (١) أَحَسِبَ ٱلنَّاسُ أَن يُتۡرَكُوٓاْ أَن يَقُولُوٓاْ ءَامَنَّا وَهُمۡ لَا يُفۡتَنُونَ (٢) وَلَقَدۡ فَتَنَّا ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۖ فَلَيَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَلَيَعۡلَمَنَّ ٱلۡكَـٰذِبِينَ (٣) أَمۡ حَسِبَ ٱلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّيِّـَٔاتِ أَن يَسۡبِقُونَاۚ سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ (٤) مَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ ٱللَّهِ فَإِنَّ أَجَلَ ٱللَّهِ لَأَتٍ۬ۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ (٥) وَمَن جَـٰهَدَ فَإِنَّمَا يُجَـٰهِدُ لِنَفۡسِهِۦۤۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَنِىٌّ عَنِ ٱلۡعَـٰلَمِينَ (٦) وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَنُكَفِّرَنَّ عَنۡهُمۡ سَيِّـَٔاتِهِمۡ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَحۡسَنَ ٱلَّذِى كَانُواْ يَعۡمَلُونَ (٧) وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَـٰنَ بِوَٲلِدَيۡهِ حُسۡنً۬اۖ وَإِن جَـٰهَدَاكَ لِتُشۡرِكَ بِى مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌ۬ فَلَا تُطِعۡهُمَآۚ إِلَىَّ مَرۡجِعُكُمۡ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ (٨) وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَنُدۡخِلَنَّهُمۡ فِى ٱلصَّـٰلِحِينَ (٩) وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ فَإِذَآ أُوذِىَ فِى ٱللَّهِ جَعَلَ فِتۡنَةَ ٱلنَّاسِ كَعَذَابِ ٱللَّهِ وَلَٮِٕن جَآءَ نَصۡرٌ۬ مِّن رَّبِّكَ لَيَقُولُنَّ إِنَّا ڪُنَّا مَعَكُمۡۚ أَوَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِأَعۡلَمَ بِمَا فِى صُدُورِ ٱلۡعَـٰلَمِينَ (١٠) وَلَيَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَلَيَعۡلَمَنَّ ٱلۡمُنَـٰفِقِينَ (١١) وَقَالَ ٱلَّذِينَ ڪَفَرُواْ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّبِعُواْ سَبِيلَنَا وَلۡنَحۡمِلۡ خَطَـٰيَـٰكُمۡ وَمَا هُم بِحَـٰمِلِينَ مِنۡ خَطَـٰيَـٰهُم مِّن شَىۡءٍۖ إِنَّهُمۡ لَكَـٰذِبُونَ (١٢) وَلَيَحۡمِلُنَّ أَثۡقَالَهُمۡ وَأَثۡقَالاً۬ مَّعَ أَثۡقَالِهِمۡۖ وَلَيُسۡـَٔلُنَّ يَوۡمَ ٱلۡقِيَـٰمَةِ عَمَّا ڪَانُواْ يَفۡتَرُونَ (١٣) অর্থ : ১) আলীফ - লাম - মীম ২) মানুষেরা কি এটা মনে করে নিয়েছে যে আমি ঈমান এনেছি এটুকু বললেই তারা ছাড়া পেয়ে যাবে এবং তাদের এই ঈমানের দাবীতে এরপর আর কোন পরীক্ষা করা হবে না। ৩) আমি তো সেসব লোকদেরও পরীক্ষা করেছি যারা এদের আগে এভাবেই ঈমানের দাবী করেছিল, আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। ৪) আর যারা গুনাহের কাজ করছে তারা কি মনে করে নিয়েছে যে তারা (বুদ্ধির প্রতিযোগিতা) আমার থেকে আগে চলে যাবে। বড়ই ভুল সিদ্ধান্ত তারা (আমার সম্পর্কে) করছে। ৫) যে কেউ এই আশা করে যে তাকে (বিচারের জন্য একদিন) আল্লাহর সামনাসামনি হতে হবে, (তার জানা উচিত) আল্লাহর নির্ধারিত (সেই সাক্ষাতের সময়) অবশ্যই আসবে। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন। ৬) যে ব্যক্তিই (আল্লাহর পথে) কষ্ট - সংগ্রাম করে, সে তো আসলে তা করে তার নিজের (কল্যানের) জন্যই। কেননা আল্লাহ সমগ্র বিশ্বজগত থেকে মুক্ত। ৭) যারা ঈমান আনবে (সে মোতাবেক) নেক কাজ করবে আমি অবশ্যই তাদের দোষত্রটি গুলো দুর করে দেব এবং তাদেরকে তাদের সর্বোত্তম কাজগুলির প্রতিদান দেব। ৮) আমি মানুষকে তাদের পিতামাতার সাথে সৎ ব্যবহার করা আদেশ দিয়েছি (সাথে তাদের একথাও বুঝেয়ি দেয়েছি যে) যদি তারা তোমাকে আমার সাথে কাউকে শরীক করার ব্যাপারে জবরদস্তি করে যে ব্যাপারে তোমার কাছে কোন রকম দলিল প্রমাণ নেই, তাহলে (এ ব্যাপারে) তাদের আনুগত্য করোনা। কেননা (হিসাব কিতাবের জন্য তো) তোমাদের আমার কাছে শেষতক ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের (এক এক করে) বলে দেব তোমরা (দুনিয়ায় কে কোথায়) কি করতে। ৯) যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করে আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করে নেব। ১০)মানুষের মাঝে এমনও আছে যারা (মুখে) বলে আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি। কিন্তু যখন তাকে আল্লাহর পথে কষ্ট দেয়া হয় তখন তারা মানুষের এই পীড়নকে আল্লাহর আযাবের মতো মনে করে নিয়েছে। আবার যখন তোমার রবের পক্ষ থেকে বিজয় ও সাহায্য এসে যায় তখন তারা বলতে থাকে আমরা অবশ্যই তোমাদের সাথে ছিলাম। বিশ্ববাসীদের মনের অবস্থা কি আল্লাহ ভালোভাবে জানেননা? ১১)আল্লাহ অবশ্যই ভালো করে জেনে নেবেন কারা ঈমান এনেছে এবং কারা মুনাফিক। ১২)কাফেররা ঈমানদারদেরকে বলে তোমরা আমাদের পথ ধরো, তাহলে আমরা তোমাদের গুনাহসমূহের বোঝা তুলে নেব। (অথচ) তারা (সেদিন) নিজেদের গুনাহের বিপুল পরিমান বোঝাই উঠাতে পারবেনা (আবার তোমাদের গুনাহের বোঝা উঠাবে কি করে?) এরা হলো (মূলত নির্জলা) মিথ্যাবাদী। ১৩)(সত্য ঘটনা হচ্ছে) সেদিন এরা তাদের নিজেদের গুনাহের বোঝা তো উঠাবেই (তারপর) তাদের এই বোঝার সাথে থাকবে তোমাদের বোঝাও। আর তারা যে মিথ্যাচার চালিয়ে এসেছে সে ব্যাপারে যেদিন অবশ্যই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
নামকরণ : ৪১ নং আয়াতের অংশবিশেষ থেকে সুরাটির নাম গৃহীত হয়েছে।
নাযিল হবার সময়কাল : - ৫০ থেকে ৬০ আয়াতের আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট এটি হাবশায় হিজরতের কিছু আগে নাযিল হয়েছে। - ৮ম আয়াতের নাযিল হবার কারণ হিসেবে বলা হয় সেটি সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাসের ইসলাম গ্রহন উপলে নাযিল হয়েছে। - সুরার প্রথর এগারো আয়াতে জিহাদ ও মোনাফেকীর বক্তব্য এসেছে তাই অনেকে মনে করেন মাদানী। কিন্তু যাদের মোনাফেকীর কথা বলা হয়েছে তারা কেবল কাফেরদের জুলুম, নির্যাতনের ভয়ে মুনাফেকী অবলম্বন করেছিল। এ ধরনের মুনাফেকী মক্কায় হওয়া সম্ভব। মদীনায় হিজরতের আগে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। বিষয়বস্তু ও নাযিলের কারণ : সুরার বক্তব্য থেকে বোঝা যায় এটি নাযিলের সময় মক্কায় মুসলমানদের উপর কাফেরদের পক্ষ থেকে পূর্ণ শক্তিতে নির্যাতন চলছিল। এ অবস্থায় একদিকে ঈমানদারদের মধ্যে সংকল্পের দৃঢ়তা সাহস সৃষ্টির জন্য এবং দুর্বল ঈমানদারদের লজ্জা দেবার জন্য। এবং অপরদিকে কাফেরদেরকে তাদের আচরনের চরম পরিণতির কথা বলে ভীতি প্রদর্শন করে এ সুরা নাযিল হয়। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে - - পিতামাতার পক্ষ থেকে তাদের আদেশ মানার কথা বলে প্রশ্ন (৮ আয়াত) - নওমুসলিমদেরকে তাদের গোত্রের পক্ষ থেকে গুনাহের বোঝা তুলে নেয়ার প্রস্তাব (১২-১৩ আয়াত) ** সমগ্র সুরার আলোচ্য বিষয় তিনটি পর্বে বিভক্ত - ১.ঈমানের প্রকৃত তাৎপর্য ও পরিচয় আলোচনা। ঈমানের পরীায় আল্লাহ নীতি। অন্যদেরকে বিপথগামী করে পাপের বোঝা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তিগত ভাবে জবাবদিহি। ২.ইসলামের দাওয়াতের পথে বিপদ ও বাধার অনিবার্যতা সম্পর্কে প্রাপ্ত শিক্ষা এবং আল্লাহর শক্তির সামনে সেসব বাধা বিপত্তি আরোপকারীদের শক্তির নগন্যতা সংক্রান্ত বক্তব্য। ৩.কেতাবধারীদের মধ্যে যারা যালেম তারা ছাড়া অন্য সবার সাথে কেবলমাত্র ভদ্র জনোচিত ও মার্জিত ভাষায় বির্তক করতে আদেশ দেয়া হয়েছে। তাদের ধর্ম ও মুহাম্মদ (সা:) এর ধর্ম যে এক ও অভিন্ন সে সংক্রান্ত বক্তব্য এবং জিহাদকারীদেরকে হিজরত করা সংক্রান্ত বক্তব্য।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা : ১) এটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে আল্লাহ তার বান্দার উপর যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপাদান হিসেবে এই অরগুলি ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো আরবদের নিকট পরিচিত এবং এগুলো ব্যবহার করে তার নিজেদের ইচ্ছামতো কথা বলতে পারে কিন্তু এ রকম একটা কিতাব রচনা করতে পারেনি কারণ এটি আল্লাহর রচিত। যে কটি সুরা এ রকম বিচ্ছিন্ন অক্ষর, দিয়ে শুরু হয়েছে তাতে কোরআন সম্পর্কে কিছু বক্তব্য থাকে। = “এই সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই।” (বাকারা-২) = “যে কিতাব তোমার কাছে ওহী আকারে পাঠান্ হয়েছে তা পড়ে শোনাও।” (আয়াত-৪৫) = “এভাবে আমি তোমার কাছে কিতাব নাযিল করেছি।” (আয়াত-৪৭) ২)দ্বিতীয় আয়াত : মূলত সুরার শুরু হয়েছে এই আয়াতের প্রশ্নের মধ্য দিয়ে। এ প্রশ্নে যে ঈমানের কথা বলা হয়েছে তা মানুষের সাধারন ধারনা, ঈমান মুখ দিয়ে দাবী করাই যথেষ্ট। - ঈমান হলো একটা গুরুতর দায়িত্বপূর্ণ কাজ ও আমানত। এর সাফল্যের জন্য ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা অপরিহার্য। - আগুন যেমন স্বর্ণকে পরীক্ষা করে খাদ আলাদা করে খাটি করে। এই ফেতনা (পরীক্ষা) তেমনি ঈমানকে খাটি করে। এটি বিপদ মুসিবতের আকারে আসে। - ঈমানের পরীক্ষা আল্লাহর মানদন্ডে একটি চিরস্থায়ী ও শ্বাশত মূলনীতি। - এখানে মক্কার প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের পরো একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অত্যাচারের চিত্র পেশ করে হাদীস- “হযরত খাব্বার বিন আরাত- বলেন যে সময় মুশরিকদের কঠোর নির্যাতনে আমরা ভীষন দুরবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়েছিলাম সে সময় একদিন আমি দেখলাম নবী (সা:) কাবা ঘরের দেয়ালের ছায়ায় বসে রয়েছেন। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে বললাম- হে আল্লাহর রসুল আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করবেন না? এবং তিনি বললেন- “তোমাদের পূর্বে যেসব মুমিনদল অতিক্রান্ত হয়েছে তারা এর চাইতেও বেশী নিগৃহীত হয়েছে। তাদের কাউকে মাটিতে গর্ত করে তাতে বসিয়ে দেয়া হতো এবং তারপর মাথার উপর করাত চালিয়ে দু’টুকরো করে দেয়া হতো। কারো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সন্ধিস্থলে লোহার চিরুনী দিয়ে আচড়ানো হতো যাতে তারা ঈমান প্রত্যাহার করে। আল্লাহর কসম, এ কাজ সম্পন্ন হবেই এমন কি, এক ব্যক্তি সান’আ থেকে হাদ্বারামাউত পর্যন্ত নি:শঙ্ক চিত্তে সফর করবে এবং আল্লাহ ছ্ড়া আর কারো ভয় তার মনে থাকবেনা। (বুখারী) মূলত বোঝানো হয়েছে আল্লাহর দেয়া প্রতিশ্রতি ইহকালীন ও পরকালীন, সাফল্য শুধু মৌখিক দাবীর দ্বারা অর্জন করা যাবে না। অবশ্যই চরম পরীক্ষার চুল্লী অতিক্রম করতে হবে। “তোমরা কি মনে করেছো তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে অথচ তোমরা সে অবস্থার সম্মুখীন হওনি যে অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী (ঈমানদার) গন। তারা সম্মুখীন হয়েছিল নির্মমতা ও দু:খ ক্লেশের এবং তাদের অস্থির করে তোলা হয়েছিল এমনকি রাসূল ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলেছিল আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে। (তখন তাদের সুখবর দেয়া হয়েছিল) জেনে রাখ আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।” (বাকারা-২১৪) “তোমরা কি মনে করে নিয়েছ, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি, যে তোমাদের মধ্য থেকে কে জিহাদে প্রাণ উৎসর্গকারী এবং কে সবরকারী।” (আল ইমরান-১৪২) পরীক্ষার ধরন : - বাতিল পন্থীদের পক্ষ থেকে জুলুম নির্যাতন। - ইসলামী দাওয়াত এর কাজে বাতিলপন্থী কর্তৃক পরিবার ও বন্ধুবান্ধব এর উপর চাপ প্রয়োগ এবং পরবর্তীতে তাদের অনুরোধ। - বাতিল পন্থীরা সম্পদ প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ এবং সমাজে সম্মানী বিপরীত পক্ষে ঈমানদাররা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত নয়। - চারপাশের সবাই গোমরাহীতে নিমগ্ন ও ইসলাম বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত। হতাশ হওয়ার মতো পরিবেশ। - বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যারা জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত, তাদের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা উন্নত। তারা শক্তিশালী ও সম্পদশালী অথচ আল্লাহদ্রোহী। - প্রবৃত্তির কামনা, লালসা, মোহ, ক্ষমতার লিপ্সা, ঈমানের পথে টিকে থাকার পথে বাধা। - আল্লাহর সাহায্য আসতে দেরী হওয়া। ৩) আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন- প্রশ্ন হলো আল্লাহ সত্যবাদীর সত্যতা মিথ্যাবাদীর মিথ্যাবাদীতা ভালোভাবেই জানেন তবে পরীক্ষা করে জানার দরকার কি? যখন কোন ব্যক্তির মাঝে, কোন কাজের কেবল যোগ্যতা ও কর্মমতা থাকে কার্যত তা প্রকাশ পায়না ততন ইনসাফ ও ন্যায়নীতির দৃষ্টিতে যে কোন পুরস্কার ও শাস্তির অধিকারী হতে পারেনা। যেমন এক ব্যক্তির মধ্যে আমানতদার হবার যোগ্যতা আছে আর একজনের মাঝে আত্যসাত করার যোগ্যতা আছে। শুধু এই অদৃশ্য জ্ঞানের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যাবেনা। আল্লাহ জানেন গোপন প্রকাশ করতে হবে। ৪) আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত সকলের উদ্দেশ্যে হতে পারে। বিশেষত যারা সেই সময় মুসলমানদের উপর অত্যাচারের ষ্টিম রোলার চালিয়েছিল তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন। যে আল্লাহ মুমিনকে পরীক্ষা করার বিধান চালু করেছেন তিনিই অত্যাচারীকে শাস্তির বিধান কার্যকর করবেন। বিপদ আপদ দিয়ে ঈমানের দৃঢ়তা যাচাই যখন চিরন্তন রীতি তখন অত্যাচারী ও পাপীদের ব্যর্থ হওয়া ও পাকড়াও হওয়াও একটা চিরস্থায়ী বিধি। ৫) এ পর্যায়ে যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস পোষন করে এবং তার সামনে হাজির হবার সত্যতা স্বীকার করে তাদের কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের মুমিনদের কখনই এটা মনে করা উচিত নয় মৃত্যু অনেক দুরে। ৬) “মুজাহাদা” শব্দের অর্থ কোন বিরোধী শক্তির মোকাবেলায় দ্বন্দ, সংগ্রাম, প্রচেষ্টা ও সাধনা করা। তখন সাধারনভাবে এ শব্দ ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ দাড়ায় সর্বাত্মক দ্বন্দ-সংঘাত মুমিনকে সংগ্রাম করতে হয়- - শয়তানের সাথে - নফসের সাথে - সামাজিক রসম রেওয়াজ এর সাথে - বাতিল শক্তি সাথে হাসান বসরী (রা:) : “মানুষ যদ্ধ করে চলে যদিও তাকে একবার তলোয়ার চালাতে হয়না।” - আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিজেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। - মানুষের সাহায্যের তার কোন প্রয়োজন নেই। - খলিফা হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করে সাফল্য লাভ মানুষের কাম্য। ৭) সৎকাজ হলো আল্লাহর প্রতি ও তার রাসূলের প্রতি আনীত বিশ্বাস মোতাবেক সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাজ করা। এই ঈমান আনা ও সৎকাজ করার দুটি ফল দেয়া হবে- ১. মানুষের পাপগুলি তার থেকে দুর করে দেয়া হবে। ২. তার সর্বোত্তম কাজসমূহের সর্বোত্তম পুরস্কার তাকে দেয়া হবে। পাপের অর্থ : (দুরীকরনের অর্থ) ১) ঈমান আনার সাথে সাথে ঈমান আনর পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। ২) ঈমান আনার পর মানবিক দূর্বলতা বশত যেসব, ভুলত্র“পি করে থাকে তার সৎকর্মের দিকে নজর দিয়ে সেগুলো উপো করা হবে। ৩) ঈমান ও সৎকর্মশীলতার জীবন যাপন করার দরুন আপনা আপনিই মানুষের নফসের সংশোধন হয়ে যাবে এবং তার অনেকগুলি দূর্বলতা দূর হয়ে যাবে। ঈমান ও সৎকাজের প্রতিদান সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার দুটি অর্থ হয় - ১) মানুষের সৎকাজগুলির মধ্যে যেটি সবচেয়ে ভালো কাজ, তাকে সামনে রেখে তার প্রতিদান নির্ধারন করা হবে। ২) মানুষ তার কার্যাবলীর দুরুন যতটা পুরস্কারের অধিকারী হবে তার চেয়ে বেশী ভালো পুরস্কার তাকে দেয়া হবে। এর উল্লেখ কোরআনে - “যে ব্যক্তি সৎকাজ নিয়ে আসবে তাকে তার থেকে দশগুন বেশী দেয়া হবে।” (আনআম-১৬০) “যে ব্যক্তি সৎকাজ নিয়ে আসবে তাকে তার চেয়ে দশগুন বেশী দেয়া হবে।” (কাসাস) ৮) মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনা হচ্ছে “এটি সা’আদ বিন আবি ওয়াককাসের ব্যাপারে নাযিল হয়। “তার বয়স যখন আঠারো/উনিশ তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মা হামনা বিনতে সুফিয়ান (আবু সুফিয়ানের ভাইঝি) যখন জানতে পারে যে তার ছেলে মুসলমান হয়ে গেছে তখন তিনি বললেন যে তুমি যতন না মুহাম্মদকে অস্বীকার করবে ততন আমি কিছুই পান করবনা এবং ছায়াতেও বসবনা। (মায়ের হক আদায় করা আল্লাহর হুকুম। কাজেই আমার কথা না মানলে তুমি আল্লাহর হুকুম অমান্য করবে।) (অন্য বর্ণনায় আমি না খেয়ে মারা গেলে লোকে তোমাকে মাতৃহন্ডা বলবে।) হযরত সাদ অত্যন্ত অস্থির চিত্তে রাসূল (সা:) এর কাছে গেলেন। তারপর রাসূল (সা:) এ আয়াত শুনালে হযরত সাদ ফিরে এসে তার মাকে বললেন আপনার যদি একশটি প্রাণ থাকত এবং একশ বার আপনি আমার সামনে মারা যান তবুও আমি ইসলাম ত্যাগ করবনা। মক্কার প্রথম যুগে যারা ইসলাম গ্রহণ করেন হতে পারে তারাও এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এ দুনিয়ার আত্মীয়তা ও আত্মীয়দের অধিকার কেবলমাত্র দুনিয়ার ত্রিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। সবশেষে পিতা মাতা সন্তান সবাইকে তাদের স্রষ্টার কাছে ফিরে যেতে হবে। সেখানে প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে জবাবদিহি করতে হবে। ৯)এ আয়াতে মুমিন ও মুশরিকদের পার্থক্য বর্ণনা করা হয়েছে। ১০) এ আয়াতে এমন এক শ্রেণীর মানুষের নমুনা পেশ করা হয়েছে যারা নির্যাতন ও নিপীড়ন আকারে পরীক্ষার সম্মুখীন হলেই দিশেহারা হয়ে পড়ে। আবার শান্তির বড় বড় বুলি আওড়ায়। বৈশিষ্ট্য : -এখানে বক্তা যদিও একজন কিন্তু সে-আমি ঈমান এনেছি। মুনাফিক সবসময় নিজেকে মুমিনদের মাঝে শামিল করার চেষ্টা করে থাকে এবং নিজের ঈমানের উল্লেখ এমনভাবে করে থাকে যাতে মনে হয় সেও ঠিক অন্যদের মতই মুমিন। উদাহরন: কাপুরুষ যদি কোন সেনাদলের সাথে গিয়ে অন্যদের বীরত্ব যুদ্ধ জয় করে তবে বলে আমরা জয় করেছি। এ ধরনের লোক মুশরিক কাফের কর্তৃক নির্যাতিত হওয়ার ভয়ে ঈমান ও সৎকাজ থেকে এমনভাবে বিরত হয় যেমন ভাবে মুমিনরা আল্লাহর শাস্তির ভয়ে কুফর থেকে বিরত হয়। তারা ভাবে মৃত্যুর পর কুফরী অবলম্বনের কারনে এ ধরনের আযাবই গ্রহন করতে হবে কাজেই মৃত্যুর পরেরটাই শ্রেয়। এদের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো অত্যাচারের সময় মুমিনদের প ত্যাগ করে কাফেরদের সাথে যোগ দেয়া এবং আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় লাভের মুহুর্তে মুমিনদের সাথে যোগ দেয়া। মাসআলা : অসহ্য নিপীড়ন ও অত্যাচারের মুখে কোন ব্যক্তির কুফরী কথা বলে নিজেকে রা করা যায়েজ। তবে শর্ত হলো- সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আন্তরিকত সহকারে ঈমানের উপর অবিচল থাকতে হবে। - মুসলমানদের বিজয়ে খুশী হওয়া এবং বিপদে অস্থিরতা। - সুযোগ পেলেই মুসলমানদের সহায়তা করা। এরা হচ্ছে এমন সব লোক যারা তোমাদের ব্যাপারে অপো করছে (অবস্থা) কোনদিকে মোড় নেয় তা দেখার জন্য যদি আল্লাহর প থেকে তোমাদের বিজয় হয় তবে এসে বলবে-আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? আর যদি কাফেরদের পাল্লা ভারী থাকে তাহলে তাদেরকে বলে-আমরা কি তোমাদের বিরুদ্ধে করতে সম ছিলাম না? এবং এরপরও তোমাদেরকে মুসলমানদের হাত থেকে বাচাইনি? (নিসা-১৪১) ১১) আল্লাহ ঈমানদার ও মুনাফিকের অবস্থা জানার জন্য বারবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ মুমিনদেরকে কখনই এমন অবস্থায় থাকতে দেবেন না যেমন তোমরা আছ (অর্থ্যাৎ ঈমানদার ও মুনাফিক মিশ্রিত হয়ে আছ) তিনি পবিত্র লোকদেরকে অপবিত্র লোকদের থেকে সুস্পষ্ট ভাবে আলাদা করে দেবেন। (আল ইমরান-১৪৯) ১২) এখানে তাদের আরও একটি প্রস্তাবনার উল্লেখ করা হয়েছে। তারা এ দাওয়াত টিকে এতটাই উদ্ভট মনে করত যে নও মুসলিমদের এ প্রস্তাব দিত যে তোমরা এ ধর্ম ত্যাগ কর এর ফলে আমরা বহন করব। উমর (রা:) ইসলাম গ্রহণ করলে আবু সুফিয়ান, উমাইয়া তার সাথে সাক্ষাত করে এ কথাই বলেন। একই আয়াতে আবার এ প্রস্তাবের জবাব স্বরুপ বলা হয়েছে এটা কখনও সম্ভব নয় কারণ সবাই সেদিন নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য জিজ্ঞাসিত হবে। কেউ কারো পাপ বহন করতে পারবেনা। আর বহন অবস্থা দেখে কার এত বড় সাহস হবে সেচ্ছায় ঐ জাহান্নামে প্রবেশ করার? ১৩) এ আয়াতে চরম আকারে তাদের প্রস্তাবনার বিপে আল্লাহ একটি ঘোষনা দিয়েছেন যে যদিও তারা অন্যের বোঝা বইবে না কিন্তু দ্বিগুন বোঝা উঠানোর হাত থেকে নিষ্কৃতিও পাবেনা। যাতে কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের বোঝাও পুরোপুরি বহন করে এবং এমন সব লোকদের বোঝার একটি অংশও বহন করে যাদেরকে তারা জ্ঞান ছাড়াই গোমরাহ করে। (নাহল-২৫) রাসূল (সা:) বলেন- যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে আহবান জানায় সে তাদের সমান প্রতিদান পাবে যারা তার আহবানে সাড়া দিয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করে, এজন্য তাদের প্রাপ্তি কোন কমতি হবেনা। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর দিকে আহবান জানায় সে তাদের সবার সমান গোনাহের কোন কমতি হবেনা। (মুসলিম)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন