শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১০

তার চেয়ে বড় অপরাধী আর কে হতে পারে যার হাতে কালেমা পড়েছেন সহস্র নওমুসলিম!

তার চেয়ে বড় অপরাধী আর কে হতে পারে যার হাতে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছেন সহস্রাধিক অমুসলিম? তার কথার চেয়ে আর কার কথা বাতিলের গায়ে অসহ্য জ্বালা ধরাতে পারে, যিনি মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকেন সুমিষ্ট আহ্বানে, ডাকেন আলোর পথে, সত্যের পথে, সৎ কাজের পথে এবং নিজেকে আল্লাহর দাস বলে স্বীকার করেন বিনয়াবনত চিত্তে? ইতিহাসের বিচারে, বর্তমান সভ্য সমাজের বিচারে কিছুতেই এমন অপরাধীকে লালগালিচা সম্বর্ধনা দেয়া হয় না, লাল দালানের মোটা লাল চালের ভাতই তাদের প্রাপ্য। ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় পাতায় লেখা আছে হাজারো এমন অপরাধীর কথা, যাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পৌত্তলিকতার শেকল ছিঁড়ে দলে দলে ছুটে এসেছে মুক্তিকামী মানুষ, তাদের অধিকাংশকেই বরণ করতে হয়েছে নিষ্ঠুরতম চরম শাস্তি।

 কি করে ভুলে যাব আমরা হযরত যাকারিয়ার (আঃ) কথা, পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে কথা বলায়, আল্লাহর একত্ববাদের কথা বলার অপরাধে যাকে করাতের আচড়ে চিঁড়ে ফেলা হয়েছিল? কি করে ভুলে যাব আমরা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর কথা, মুর্তিপূজক অবিশ্বাসীদের মাঝে ঈমানের বীজ বপনের দায়ে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন যিনি। ক’জন আল্লাহ প্রেরিত দূতের কথা বলে শেষ করা যায়, ক’জন নবী-রাসূলেরই বা নিস্তার মিলেছে সত্য প্রচারের অমন অপরাধে? ঈসা (আঃ)কে কি ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যার অপচেষ্টা হয় নি, তায়েফের উষ্ণভূমি কি সিক্ত হয়নি দয়াল নবীজির (সাঃ) এর পবিত্র লোহুতে? হ্যা, তিনি অপরাধ করেছিলেন, আর অদ্বিতীয় স্রষ্টা এক আল্লাহর পথে আহ্বানের চেয়ে বড় অপরাধ আর কি কিছুই কি হতে পারে?

অপরাধ করেছিলেন রাসূল (সাঃ) এর মহান সাহাবীরা (রাঃ)। রাসূলের (সাঃ) ডাকে সাড়া দিয়ে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের মতো বাতিলের সকল বাঁধাকে চুর্ণ-বিচুর্ণ করে সমবেত হয়েছিলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে। ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে যারা লড়াই করেছেন অন্ধকারের সাথে, লড়াই করেছেন তাগুতের সাথে, ছিনিয়ে এনেছিলেন সোনালী সূর্যোদয়। অন্ধকারে ঘাপটি মেরে থাকা পেঁচাদের কাছে আলোয় আলোয় ভূবন ভরিয়ে দেয়ার চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে? তাইতো দেখি সাহাবীদের ছিন্নভিন্ন দেহ নিয়ে ছুটে চলে আবু জেহেলের দল, কাফেরের পাথরে পিষ্ট হয়ে উত্তপ্ত মরু ময়দানে ছটফটিয়ে আহাদ আহাদ রবে এক আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল (রাঃ)। বাতিলের অঙ্গার কিছুতেই পুড়িয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ করতে পারে না সূর্যের চেয়ে তেজদীপ্ত ঈমান, তাইতো দেখি খাব্বাবের চর্বি গলে গলে নিভে যেতে বাতিলের যত অংগার-অহংকার। মুত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়েও যারা নির্ভয়ে ঘোষণা করে “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ (সাঃ) তারই প্রেরিত রাসূল , আমাদের আদর্শ” তবে তাদের চেয়ে বড় অপরাধী আর কে হতে পারে? আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে কায়েমের সংগ্রামের চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে বাতিলের কাছে?

হ্যা, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তেমনই অপরাধে অপরাধী। তিনি বাংলা ভাষী কোটি কোটি তৌহিদী জনতাকে সুমিষ্ট কন্ঠে ডেকেছেন আল্লাহর পথে, সত্যের পথে, ঈমানের পথে, কল্যাণের পথে। এমন বাংলাভাষী মুসলিম কে আছেন যিনি সাঈদীর সুমধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে দেয় নি? এমন ক’জন মা আছেন যিনি তার নামাজে আল্লামা সাঈদীর জন্য প্রাণখুলে দোয়া করেণ নি? মনে কি নেই সে কথা, যে নারী শুধু আল্লামা সাঈদীকে বিজয়ী করার জন্যই ছুটে এসেছিলেন নির্বাচনী কেন্দ্রে, যেখানেই ভূমিষ্ট হয়েছিল তার আদরের সন্তান? তার তো থাকার কথা ছিল মাতৃসদনের আতুর ঘরে। তবুও হুজুর নির্বাচনে দাড়িয়েছেন, মাত্র একটি ভোটের ব্যবধানে যদি তিনি হেরে যান বাতিলের সাথে, তবে কি জবাব দেবেন নব জাতকের কাছে? হ্যা, সাঈদী অপরাধ করেছেন, দেশের কোটি কোটি নারী পুরুষের হৃদয় জয় করেছেন, আর ভালোবাসার চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে?

আজো মনে পড়ে, হৃদয়ের সকল আবেগ উজাড় করে তিনি বর্ণনা করছেন রাসূল (সাঃ) এর অন্তিম সময়ের কথা, বর্ণনা করছেন নামাজের প্রতি নবীজীর গুরুত্বের কথা। অসুস্থ নবীজী মসজিদে নববীর পানে তৃষার্ত নয়নে তাকিয়ে মুসল্লীর সারিতে। দু’জনার কাধে ভর দিয়ে আজ আর যেতে পারেন নি মুত্তাকীদের মাহফিলে। মাওলানার আর্দ্র কন্ঠের বর্ণনায় আমি যেন দেখতে পাই নবীজীর তৃষ্ণার্ত মুখ, জীবনের শেষ জামায়াতের তৃষ্ণা, শেষ নামাজের তৃষ্ণা, আল্লাহর সাথে মেরাজের তৃষ্ণা। রাসূল প্রেমে আমার হৃদয় ভেঙ্গে যায়, লৌকিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে শান্ত হয়েছিল সেদিন এ হৃদয়। যার সুমধুর জাদুর ছোয়ার হৃদয় গলে গলে ঝর্ণা হয়ে যায়, সে জাদুকরের চেয়ে বড় অপরাধী তবে আর কে হতে পারে? বাংলা ভাষী কোটি কোটি মুসলিম জনতাকে যিনি নবীপ্রেমে কাঁদতে শেখালেন, তার চেয়ে তবে বড় অপরাধী আর কে হতে পারে?

এ মহা অপরাধীর আজো রিমান্ড চলছে, ২২টি দিন গুণেছিলাম, আজ আর গুণে কি হবে, হয়তো জীবনের শেষ পর্যন্ত রিমান্ডেই কেঁটে যাবে তার দিন। ডায়াবেটিসের রোগী তিনি, বুকে বসানো দু‘টি রিঙ । অন্যের সাহায্যে যাকে চলাফেরা করতে হয়, একাকী হাজতখানার অস্বাস্থ্যকর নোংরা ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে দিন কাটছে তার। ইতোমধ্যে দু‘টো হাঁটুই ফুলে গেছে, ভেঙ্গে গেছে শরীর। দিন রাত থমকে গেছে তার, সকালে সূর্যের আলোতে পবিত্র কুরআনের তাফসীর দেখার সুযোগটুকু নেই মুফাসসিরে কুরআনের। প্রচন্ড গরমেও ফ্যান নেই, নিয়মিত ঘুম নেই, স্বাস্থ্যকর খাবার নেই, অযু গোছল বা প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে অসুস্থ্য সাঈদীর কোন সাহায্যকারী নেই। মশা আর পোকা মাকড়ের কামড়ে অতিষ্ঠ জীবন। এ নির্যাতনের যেন শুরু আছে, শেষ নেই, বর্বরতার কোন সীমা নেই।

তবুও আশার কথা এই যে, এমন অপরাধীদের জন্যই আল্লাহ ওয়াদা করেছেন জান্নাতুল ফেরদাউসের, পবিত্র উদ্যানের, যার তলদেশ থেকে প্রবাহিত ঝর্ণাধারা। যেখানে চলে গেছেন আদম, ইব্রাহীম, ইসমাইল, জাকারিয়া, মূসা, ইসা, মুহাম্মদ (সাঃ) সহ অগণিত নবী-রাসূল ও তাঁদের প্রিয় সাথীরা। বাতিলের যতই গায়ে জ্বালা ধরুক না কেন, ওদের সংবিধানে যতই অপরাধ বলে সংজ্ঞায়িত হোক না কেন, আমরাও কি তবে এমন অপরাধে অপরাধী হব না, আমরাও কি তবে দলে দলে ঝাপিয়ে পড়বো না আল্লাহর পথে, সত্যের পথে, আলোর পথে, যে পথের মশাল হাতে ছুটে চলেছেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ), ছুটে চলেছেন আবুবকর, ওমর, ওসমান, আলী (রাঃ) মতো কোটি কোটি পূণ্যপ্রাণ। যে ছুটে চলায় শুধুই জীবন, আলোয় আলোয় ভরা যে জীবন, সে জীবনের পথে তবে এসো আজ সকলে সমবেত হই।

কোন মন্তব্য নেই: