সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১০

শহীদ আব্দুল হামিদ

নাম: মো: আব্দুল হামিদ
সাংগঠনিক মান: কর্মী
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১১ মার্চ ১৯৮২
পিতার নাম: মো: নাসির উদ্দিন
সর্বশেষ পড়াশুনা: আরবীতে অনার্স
জীবনের লক্ষ্য: অধ্যাপনা।
শহীদ হওয়ার স্থান: বি.এন.সি.সি. ক্যান্টিনের সামনে।
অস্ত্রের ধরণ: ইট, রড, হকিস্টিক, দা, কুড়াল।
কাদের আঘাতে শহীদ: জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন।
স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম: সৈয়দপুর, ডাক: দানার হাট, থানা: ঠাকুর গাঁ, জেলা: ঠাকুর গাঁ।
ভাইবোন : ৭ জন।
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান: সবার বড়।
পরিবারের মোট সদস্য: ১৫ জন (বর্তমানে) শাহাদতের সময় ১০ জন।
পিতা: মৃত
মাতা: জীবিত, পেশা: গৃহিণী।
শাহাদতের পূর্বে শহীদের কথা: গুণ্ডাবাহিনী যখন তাকে উপুর্যুপরি আঘাত করছিল আর বলেছিল, বল শালা আর শিবির করবি কিনা, শিবির না করলে তোকে ছেড়ে দেব। খুনীদের কথা শুনে শহীদ আব্দুল হামিদ বলেছিলেন, আমি যে সত্য পেয়েছি, আমি যে আলো পেয়েছি, ইসলামের পথ পেয়েছি, তা থেকে আমি দূরে থাকতে পারবো না।
শাহাদতের পর শহীদের পিতার প্রতিক্রিয়া: শাহাদাতের পূর্বে তার পিতা-মাতা দুই জনেই পূর্ণ সুস্থ, সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করছিলেন। পুত্রশোককে ভুলতে না পেরে দীর্ঘ ৪ বছর পর শহীদের শ্রদ্ধেয় পিতা জনাব নসির উদ্দিন ইন্তেকাল করেন। আর জনম দুঃখী মাতা হামিদা বেওয়া সন্তান হারা ব্যথা নিয়ে এখনও জীবন যাপন করছেন।

স্মৃতির সাগরে: শহীদ আব্দুল হামিদ

এ্যাডভোকেট সেলিম আজাদ

সত্যমিথ্যার দ্বন্দ্বের ইতিহাস পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে। শাশ্বত সত্যকে উর্ধে তুলে ধরার নিমিত্তে আল্ল্লাহর একান- প্রিয় নির্ভীক সিপাহসালারগণ যুগ যুগ ধরে সদা সর্বদা প্রাণান-কর চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। অপরদিকে মিথ্যার ধারক বাহক বলে পরিচিত, সত্য যাদের অন-রে তীরের ন্যায় বিঁধে তারা সব সময়ই এই শাশ্বত সত্যকে টুটি চেপে ধরে রাখতে চেয়েছে। নিভিয়ে দিতে চেয়েছে আল্ল্লাহর দ্বীনের উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ। কিন' ইতিহাস সাক্ষী, যারা সত্যকে বিলীন করতে চেয়েছে, সময়ের ব্যবধানে তারাই ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে গিয়ে ইতিহাসের আস-াকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আদ, ছামুদ, লুত জাতি, ফেরাউন ও আবুজেহেলের ইতিহাস তার জাজ্জ্বল্য প্রমাণ। ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে সত্যের আলো তারা তো নেভাতে পারেইনি বরং জুলুম-নির্যাতনের লৌহকপাট ভেঙ্গে সত্যের এ আলো সীমাবদ্ধ এলাকা থেকে বিস্তীর্ণ প্রান-রে ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে।
সত্যমিথ্যার দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতায় রাসূলের যুগে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস এক অনন্য এবং তার প্রতিটি অধ্যায় একদিকে যেমন বাঁধভাঙা সাগরের ন্যায় রুক্ষ অপরদিকে নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং বঞ্চিত সমাজের এক করুণ ট্রাজেডি রূপে চিত্রিত হয়েছে। ইতিহাসের এ অধ্যায়ে ট্রাজেডীর বাস-বতা শুরু হয়েছিল হযরত সুমাইয়া (রাঃ)-এর শাহাদাতের মাধ্যমে। পরবর্তীতে কালের সন্ধিক্ষণে যুগ থেকে যুগান-রে অগণিত নিবেদিত প্রাণ মহান রাব্বুল আলামীনের অকুতোভয় সৈনিকেরা শাহাদাতের রক্ত পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিয়ে
ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসের ধারাকে গৌরবোজ্জ্বল করে রেখেছে। শহীদ আব্দুল হামিদ ছিলেন পরম করুণাময়ের এমন এক অকুতোভয় সৈনিক, যিনি শাহাদাতের স্বর্ণ সিঁড়ি বেয়ে জান্নাতের ফুল হয়ে মহান রাব্বুল আলামীনের বাগিচায় ফুটে রয়েছেন। কিন' রেখে গেছেন মতিহারের এ ক্যাম্পাসে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের সৈয়দপুর নামক এক নিভৃত পল্লীতে সমাজের অপরাপর মানুষের মতই আবির্ভাব ঘটেছিল শহীদ আব্দুল হামিদের। পিতামাতার একান- স্নেহ ভালবাসায় গড়ে উঠেছিল ধীরে ধীরে। পিতামাতার চোখে মুখে ছিল একরাশ স্বপ্ন শহীদ আব্দুল হামিদকে নিয়ে। সেই স্বপ্ন সাধ বুকে নিয়েই পাঠশালায় পাঠিয়েছিলেন তাকে। লেখাপড়া শিখবে, চাকুরি করবে, বড় হয়ে পিতামাতার মুখে হাসি ফোটাবে এমন একটি আশার ভেলায় চড়ে সামনের পানে ধীরে ধীরে এগুতে থাকে কিশোর আব্দুল হামিদ। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন-ান হয়েও সে আশায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি তার। সীমাহীন প্রতিকূলতার মাঝেও স্বপ্নের সে তরী বেয়ে এলাকার দানার হাট মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং আলিম পাস করেন কৃতিত্বের সাথে। এভাবেই সে জ্ঞান আহরণের অদম্য স্পৃহা নিয়ে নতুন অধ্যায় পাড়ি দিতে এগিয়ে আসেন রাজশাহীতে। শুরু হয় নতুন জীবনের এক নব অধ্যায়ের। ভর্তি হলেন রাজশাহী সরকারী কলেজের আরবী বিভাগে।
এদিকে পূর্ব থেকেই ইসলামী আন্দোলনের প্রতি সীমাহীন নিষ্ঠা ও আন-রিকতা ছিল তার। ৮ম শ্রেণীতে অধ্যয়ন কালেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক হওয়ার নিমিত্তে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংগ্রামী কাফেলায় নিজেকে শরীক করেন। তিনি জানতেন এপথে রয়েছে সীমাতিরিক্ত প্রতিবন্ধকতা। রয়েছে কন্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথ। তবুও “ইসলামী আন্দোলন ঈমানের অপরিহার্য দাবী” ঈমানের এ দাবিকে মেটাতে সব কিছু কুরবানী করার মানসিকতা নিয়েই এগিয়ে এসেছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিপ্ল্লবী কাফেলায়। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, ভোগ বিলাসের মায়া মমতা জড়ানো এ পৃথিবীর চোরাবালিতে না ডুবে মহান রাব্বুল আলামীনের রাস্তায় নিজের জীবন কুরবানী করার মধ্যেই রয়েছে সবচেয়ে বড় সফলতা। আর সেজন্যই রাব্বুল আলামীন তার এ অব্যক্ত আকুতি কবুল করে নিয়ে তাকে জান্নাতের বাগানে সন্ধান করে দিয়েছেন।
১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী আন্দোলনের স্বর্গীয় বাণী বা মহামুক্তির পানে দাওয়াতের লক্ষ্যে আয়োজন করেছিল নবীন বরণ। নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ইসলামী আন্দোলনের সুমহান দাওয়াত তুলে ধরে ইসলামী আন্দোলনকে এ ক্যাম্পাসে তথা রাজশাহীতে আরো বেগবান করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। কিন' সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের ধ্বজাধারী বলে পরিচিত জাসদ-মৈত্রী, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শিবিরের এ নবীন বরণ বানচাল করার এক হীন ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকে। ঘটনার দিন হিংস্র এ হায়েনাদের প্রস'তি ছিল রীতিমত যুদ্ধাবস'ার। তাদের শত উসকানি সত্ত্বেও শিবির কর্মীরা সেদিন অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিল। কিন' তারা যখন (সন্ত্রাসী) দেখল তাদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে চলেছে, তখন তারা হিংস্র হায়েনার ন্যায় নিরীহ শিবির কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অসহায় শিবির কর্মীরা বি.এন.সি.সি. ক্যান্টিনের কাছে আশ্রয় নিলে সন্ত্রাসীরা তাদের পিছু ধাওয়া করে। সন্ত্রাসীরা বি.এন.সি.সি. ক্যান্টিনে আশ্রয় গ্রহণকারী শিবির কর্মীদের চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে রেখে এক এক করে টেনে হিঁচড়ে বের করে চেঙিসীয় ও হালাকু খানের কায়দায় নৃশংসভাবে হামলা চালায়। তারা সেখানে শহীদ আব্দুল হামিদ ভাইকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে নিয়ে অবর্ণনীয় ভাবে মাথা, নাক ও মুখে আঘাত করতে থাকে একের পর এক। এমতাবস'ায় হাত দিয়ে মাথা ঠেকাতে গেলে তার সম্পূর্ণ হাত নিজের রক্তেই রঞ্জিত হয়ে যায়। এ অবস'াতেই তিনি মৃত্যুর পূর্বে শেষ অবলম্বন হিসাবে বি.এন.সি.সির দেওয়াল হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি হায়েনাদের উপুর্যুপরি আক্রমণের শিকার হয়ে সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা ইটের উপর মাথা রেখে আরেকটি ইটের আঘাতে মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিলে তিনি শাহাদাত বরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সেই দেওয়ালে তার হাতের রক্তের ছাপ ও দাগ দীর্ঘদিন সাক্ষী হিসাবে জ্বলজ্বল করে প্রস্ফুটিত ছিল। যেন এ দাগ শাহাদাতের তামান্নাকে, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে আরও বেগবান করেছে। এই রক্তের সিঁড়ি বেয়েই ক্যাম্পাসে ইসলামী আন্দোলনের জোয়ার অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক দূর এগিয়েছিল। তারা মনে করেছিল ইসলামী ছাত্রশিবিরের এ কাফেলাকে হত্যা করে এভাবেই নিশ্চিহ্ন করা যাবে। কিন্তু কালের ব্যবধানে তারাই আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
আমরা জানি বাগানের মালিক তার প্রয়োজনে বাগান থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ফুলটি পছন্দ করে তুলে নেন। মহান আল্ল্লাহও তার দুনিয়ার বাগানের মধ্য থেকে তার পছন্দমত শ্রেষ্ঠ ফুল হিসাবে শহীদ আব্দুল হামিদ ভাইকে উঠিয়ে নিয়েছেন। শহীদ আব্দুল হামিদ ভাইয়ের বাস-ব জীবনধারা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ছোট বেলা থেকেই শহীদ আব্দুল হামিদ মহান প্রভুর কাছে সঁপে দিয়েছিলেন নিজেকে। ইসলামী অনুশাসনের প্রতি প্রবল ঝোঁক ও আন-রিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে শৈশব থেকেই। আদর্শ মুমিনের বাস-ব প্রতিচ্ছবি হিসাবে ৫ম শ্রেণীতে অধ্যয়ন কালেই নিয়মিত নামাজ পড়তেন। শুধু তাই নয়, বাড়ির সবাইকে এবং পাড়াপ্রতিবেশী ও সহপাঠিদের সবাইকে নামাজ পড়ার জন্য আহবান জানাতেন। ছোট থেকেই তার চোখে মুখে ছিল ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার সোনালী স্বপ্ন। সে জন্য ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন জায়গায় তিনি বক্তব্য রাখতেন।
প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে শহীদ আব্দুল হামিদ ছিলেন সদাসর্বদা সচেতন। সেজন্য প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা গরীব ছিল তাদেরকে সামর্থ্যানুযায়ী টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। রোগ-শোক, বিপদাপদে সব সময় খোঁজ খবর নেবার চেষ্টা করতেন এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস'া গ্রহণ করতে কার্পণ্য করতেন না। ইসলামের জন্য নিবেদিত-প্রাণ কর্মী শহীদ আব্দুল হামিদ ইসলামের কাজ করে সব সময় মানসিক প্রশানি- লাভ করতেন। কৈশোরেই তিনি ইসলামী জলসার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা সংগ্রহ করতেন। গ্রামের মানুষকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য গ্রামে এবতেদায়ী মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখনও সে মাদ্রাসা আছে। মাদ্রাসার নাম সৈয়দপুর শহীদী য়া মাদ্রাসা। সে মাদ্রাসা থেকে প্রতিবছর ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে।
শহীদ আব্দুল হামিদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন এক প্রতিবাদী কণ্ঠ। এলাকায় কোন মানুষকে কোন অন্যায় করতে দেখলে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিবাদ করতেন এবং অন্যায় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিতেন। চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে তিনি তার জীবন সাজিয়েছিলেন এক অনন্য মডেল হিসাবে। মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে তার জীবন ছিল সামগ্রিক ভাবে প্রশ্নহীন। স্বাভাবিক চাহিদা হিসাবে যখন যা জুটতো তাতেই তিনি সন'ষ্ট থাকতেন, এক্ষেত্রে কখনও বাড়াবাড়ি করেননি।
তিনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবন পছন্দ করতেন। উন্নত ও মননশীল রুচিবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি হিসাবে জীবনকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখে চলা ফেরা করার চেষ্টা করতেন। তিনি তার কক্ষকে এবং পড়ার টেবিল সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতেন। বাড়িতে তিনি ফলফুলের গাছ লাগিয়ে বাড়ির সৌন্দর্য রক্ষার চেষ্টা করতেন। এব্যাপারে পাড়া প্রতিবেশীকেও উদ্বুদ্ধ করতেন। আল্ল্লাহর একান- বান্দা হিসাবে শহীদ আব্দুল হামিদ ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমেই তার চরিত্রকে উন্নত ও মাধুর্যপূর্ণ করে তুলেছিলেন। পোশাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তিনি সব সময় পায়জামা পাঞ্জাবী ব্যবহার করতেন। জীবনে কোনদিন দাড়ি কাটেননি। বলা যায় যে, তাগুতি সমাজের ছোঁয়া তাকে বিন্দু মাত্রও টলাতে পারেনি। সেজন্য এলাকার সুধীজন ও সর্বস-রের মানুষের কাছে তিনি অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের জন্য তার আত্মত্যাগ সমাজ, তার পরিবার ও পিতা-মাতার গর্ব হিসাবে মর্যাদা পেয়েছে। শহীদের মেজভাই একবার তার আব্বাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন এবং কথা হয়েছিল। তার আব্বা বলেছিলেন, “আমি তোমার বড় ভাইয়ের জন্যেই কবরে খুব শানি-তে আছি।” শহীদের পিতা হিসাবে মহান রাব্বুল আলামীন তাঁকে যে সম্মানিত করেছেন এ সুরাত তারই ইঙ্গিত বহন করে।
শহীদ আব্দুল হামিদ ইসলামী আদর্শের উজ্জ্বল প্রতীক হিসাবে তার প্রাত্যহিক আচরণ, চালচলন, কথাবার্তায় ইসলামের সুমহান শানি-র অকপট দীপ্তি ভাস্বর ছিল। তার এ নৃশংস হত্যা মানবতার জয়গানে সোচ্চার একটি আদর্শগত মানবের পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। শহীদ আব্দুল হামিদ ভাইসহ ঐ ঘটনায় নিহত শিবিরকর্মীদের বর্বর হত্যাকরীদের দুনিয়ার আদালতে যৎ সামান্য বিচার হলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগসহ বামপন্থী ৮ দলীয় জোট সংলাপের শর্ত হিসেবে এই খুনীদের কারাদণ্ডাদেশকে মাফ করিয়ে নিয়ে ক্যাম্পাসের খুনীদের হত্যার লাইসেন্স দিয়ে দেয়। আজকের মানুষ সেই নরঘাতক পিশাচদের ক্ষমা করতে পারলেও আখেরাতের আদালতে ক্ষমা পাবে না; এটাই শাশ্বত সত্য। আপাত দৃষ্টিতে শহীদ আব্দুল হামিদের শাহাদৎ আমাদের জন্য শোকাবহ হলেও মহান রাব্বুল আলামীনের যে অর্থবহ দিকটি এতে প্রচ্ছন্ন রয়েছে তা বোধ করি কম নয়।

কোন মন্তব্য নেই: