মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১০

ওরা জামাত শিবিরকে মুখের ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেয়ার দুঃস্বপ্ন দেখে

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে ঊনচল্লিশ বছর আগে। গঙ্গার জল গড়িয়েছে অনেক, মিশেছে সাগর মোহনায়, দীর্ঘ পথচলায় সাথী হয়েছে রাশি রাশি পলিমাটি, জেগে উঠেছে উর্বরা স্বর্ণদ্বীপ। পিছন পানে ফিরে তাকানোর সময় কোথা? এখন সময় শুধু চাষাবাদের, এখন সময় শুধু সোনানী ফলফসলের। যে অতীতকে শুদ্ধ করা যেত কয়েক পুরুষ আগে, সে ব্যর্থতার দায় সেই প্রজন্মের। তাদের ব্যর্থতায় বেড়ে ওঠা নতুন উর্বরা ফসলী জমি চাষাবাদের বদলে রক্তে রঞ্জিত করার মাঝে সফলতা কোথায়? এভাবে ইতিহাসের ঋণ শোধা যায় না, এভাবে ব্যর্থতার দায় এড়ানো যায় না।
যে বটের চারা উপড়ে ফেলা যেত আটত্রিশ বছর আগে, সে আজ ফুলে ফলে পল্লবে সুশোভিত মহীরুহ। তার ডালে ডালে গান গায় রঙ-বেরঙের পাখি, ছায়াতলে বাশিঁবাজায় রাখালের দল, ক্লান্ত পথিক দুদন্ড জিরোয় সুশীতল ছায়াতলে। আজ যে বৃক্ষ সিডর, আইলার আঘাত সয়ে সয়ে শেকড় গেড়েছে দু’কোটি মানুষের হৃদয়ে, তাকে তবু মুখের ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেয়ার দুঃস্বপ্ন তাড়া করে ফেরে।
দু’কোটি জামাত-শিবির। আত্মীয়তার বন্ধনে ওরা আজ আওয়ামী লীগ, বিএনপির ভাই, বন্ধু, সন্তান-
সন্ততি। দু’কোটি শেকড় বিস্তৃত হয়েছে ষোলকোটি বাংলাদেশীর রক্তে-মাংসে। চাইলেই আর শুকনো মরিচের মতো পিষে ফেলা যায় না, জামাত-শিবির পিষতে গিয়ে নিজের শরীর রক্তাক্ত করার মতো বাতুলতা সভ্যমানুষের শোভা পায় না।
তবুও চেষ্টার ত্রুটি রাখছেনা ওরা। একাত্তরের অপরাধের দায়ে নতুন প্রজন্মকে ঠেলে দিতে চায় বর্বরতার অন্ধগুহায়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে চায় আটষট্টি হাজার গ্রামে। উর্বরা ফসলী জমি চায় মিষ্টি বারি, ওরা ভাসিয়ে দিতে চায় রক্তের লোনা বানে। সুজলা-সুফলা শষ্য শ্যামলা বাংলাদেশের স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন, বাতাসে মিলিয়ে যায় প্রতিশোধের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে।
সংখ্যায় ওরা কম, দু’কোটি হয়তো বা, সংখ্যালঘু রাজনৈতিক দল। একদা “সংখ্যালঘু নির্যাতন” কথার ফুলঝুঁড়িতে পত্র-পত্রিকা ভরে উঠেছিল পদ্মার চরের মতো। আজ “একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী” বিচারের নামে চলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, চলে সংখ্যালঘু জামায়াত-শিবির নির্যাতন। বদলে গেছে দিন, বদলে গেছে সংবাদের প্যাটার্ন। সিন্ডিকেটেড সংবাদের খামারে এখন নতুন জাতের শস্যের আবাদ। এবারে সংবাদের মাঠ ভরে আছে যুদ্ধাপরাধী বিচারের প্রহসনে, সচেতন পাঠক হলুদ সাংবাদিকতার ক্যানভাসে বিচিত্র চিত্র দেখে অচেতন হন, হলদে শর্ষে ক্ষেতে শর্ষে ভুতের আবাদ দেখে চমকে ওঠে। “আংশিক নয় পুরো মিথ্যে” গল্পে জেগে ওঠে সকালের “প্রথম আলো”।
রাতের আধাঁরে ক্যাম্পাসে র‌্যাব-পুলিশ-ছাত্রলীগের ত্রি-মুখী অভিযানে বাঘবন্দী ওরা। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে বিপর্যস্ত মেধাবী ছাত্রসমাজ। তবু কোনঠাসা বাঘের থাবা যখন ওদের হুৎপিন্ড খামচে ধরে, প্রতিশোধে অন্ধ হায়েনার মতো পুলিশের নল ঠেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাফিজুর রহমান শাহিনের ঘাড়ে, ক্ষতবিক্ষত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাইমিনুল ইসলামের সোনালী স্বপ্ন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে স্তব্ধ হয় বিশ্ববিবেক। এভাবে কি ওরা কেড়ে নিতে চায় সোনার সন্তানদের, যাদের রাত কাটে জায়নামাযে, যাদের ঘুম ভাঙ্গে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নে, যাদের সকাল হতো কোরআনের আহ্বানে, যাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে আল্লাহর পথে মানবতাকে ডেকে ডেকে। অথচ আল্লাহই তো বলেন, তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে, সৎ কাজ করে আর বলে, “আমি মুসলমান”?

কোন মন্তব্য নেই: