শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

শহীদ মো: খলিলুর রহমান

শহীদ নং-৮
নাম: মো: খলিলুর রহমান
সাংগঠনিক মান: সদস্য
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২২ জুন ১৯৯০
পিতার নাম: মৃত আয়েজ আলী মন্ডল
সর্বশেষ পড়াশুনা: ১ম বর্ষ সম্মান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।
জীবনের লক্ষ্য: শিক্ষক হওয়া ইচ্ছা ছিল।
আহত হওয়ার স্থান: সৈয়দ আমীর আলী হল।
শহীদ হওয়ার স্থান: ঘটনাস'লেই।
আঘাতের ধরণ: কাটা রাইফেলের গুলি, হকিস্টিক, রড, কুড়াল।
যাদের আঘাতে শহীদ: জাসদ, ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন।
স'ায়ী ঠিকানা: গ্রাম: ঘোষকুড়া, ডাক: রামবাড়ী, থানা: নিয়ামতপুর, জেলা: নওগাঁ।
ভাইবোন : ৯ জন।
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান: ৫ম।
পরিবারের মোট সদস্য: ১৬ জন।
পিতা: মৃত।
মাতা: মৃত।
শাহাদতের পর শহীদের মাতার প্রতিক্রিয়া: শহীদের নিজের পিতা-মাতা মৃত হওয়ায় সৎ মা তাকে লালন পালন করতেন। শাহাদাতের পর তাঁর মা তাঁকে শহীদ হিসাবেই কবুল করার জন্য আল্লাহর কাছে দোওয়া করলেন।
শাহাদাতের প্রেক্ষাপট: শহীদ খলিলুর রহমান
১৯৮২ সাল থেকে ৯০ সাল পর্যন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাসি-ক্যবাদী ইসলাম বিরোধী খুনীরা শিবিরের আটজন নেতা ও কর্মীকে হত্যা করেছে। শহীদ খলিলুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ৮ম শহীদ। অতীতে এ সমস- খুনীদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মামলা দায়ের করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স'ানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলেই খুনীচক্র আবারও খুনের নেশায় মেতে উঠেছিল। যার ফলশ্রুতিতে খলিলের মত একজন প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় তরুণকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হল। শহীদ খলিল একজন পিতৃমাতৃহীন এতিম। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানার এক দরিদ্র পরিবারের সন-ান। শাহাদাতের পূর্বে শহীদ খলিল ইসলামী শিক্ষা ১ম বর্ষের পরীক্ষার্থী ও ১৯৮৯-৯০ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সৈয়দ আমীর আলী হল শিবিরের সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
১৯৮৯ এর ১৮ এপ্রিলের পর থেকে ক্যাম্পাসে কম বেশি টেনশন থাকলেও ’৯০ এর ২২ জুনের পূর্বে তেমন বড় ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়নি। ১৯৮৯-৯০ প্রথম বর্ষ সম্মানের ক্লাস মাত্র ১২ দিন পূর্বে শুরু হয়েছে। সেশন জট কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ক্লাস ও পরীক্ষা সমূহ রীতিমত চলছে। নবাগত ছাত্র-ছাত্রীরা শিবিরের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে দলে সংগঠনের কাফেলায় শরীক হচ্ছে। বাতিল খোদাদ্রোহীরা হিংসার থাবা বিস-ার শুরু করেছে আবারও শিবিরের অগ্রযাত্রাকে রুখে দাঁড়াতে। ঘটনার দিন রাত ১০ টায় ছাত্রশিবির শাহ্‌ মখদুম হল শাখা নবাগত ছাত্রদের স্বাগত জানিয়ে হলে মিছিল শুরু করে। মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগ (না-শ) সহ অন্যান্য সকল সংগঠন একযোগে চিৎকার শুরু করে ধরধর, মারমার ইত্যাদি বলে। বিভিন্ন করিডোরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে মিছিলের পথ বন্ধ করার চেষ্টা করে। বিশ্রী ভাষায় শিবিরকে গালিগালাজ করতে থাকে। গোটা হলকে অন্ধকার করে দিয়ে হাতবোমা ও ককটেলের শব্দে প্রকম্পিত করে তুলে। সন্ত্রাসীরা শিবির কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে হল গেটে তালা লাগিয়ে অস্ত্র উচিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ফলে নিরীহ শিবির কর্মীরা প্রাণ ভয়ে অন্ধকারে ছুটাছুটি করতে থাকে। জীবন রক্ষার্থে তারা হল গেটের তালা ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী সৈয়দ আমীর আলী হলে আশ্রয় নেয়। তখন আমীর আলী হলের প্রভোস্ট জনাব আব্দুর রহমান বৈঠক স'গিত ঘোষণা করে বাইরে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে খুনী সন্ত্রাসীরা গোটা হল ঘিরে ফেলে। এখানেও শিবির কর্মীরা জীবনের নিশ্চয়তা পেলনা। উপর্যূপরি বোমা ও ককটেলের শব্দে হলকে এক নারকীয় হত্যাপুরীতে পরিণত করল। ঘটনার আকষ্মিকতা উপলব্ধি করে রাঃ বিঃ প্রক্টর জনাব সায়েদুল ইসলাম ও রাজশাহীর এস. পি. আলী ইমাম ফোর্সসহ সেখানে উপসি'ত হন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সামনে এমন হত্যাযজ্ঞ চলছে অথচ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। প্রক্টর জনাব সায়দুল ইসলাম পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ সুপার আলী ইমামকে প্রায় ৪০/৫০ মিনিট যাবত অনুরোধ জানাতে থাকে কিন' এস. পি. তার কথায় কোন কণর্ পাত করেননি। তার ধারণা পুলিশ ভূমিকা নিলে এই ভয়াবহ ঘটনা হয়ত ঘটতো না।
পুলিশ যখন সেখানে উপসি'ত তখন রাকসুর ভিপি রাগিব আহসান মুন্নাসহ সংগ্রাম পরিষদের বিপুল সংখ্যক কর্মী সশস্ত্র অবস'ায় দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশ সন্ত্রাসীদের নিরস্ত্র করার জন্য কোন ব্যবস'া গ্রহণ করেনি। পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা হলের ভিতর প্রবেশ করল এবং ঠান্ডা মাথায় পুলিশ প্রহরায় শিবির কর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাল। অনেকের মত আহত হল খলিলুর রহমান। তারপর খোদাদ্রোহী হায়েনারা চাইনিজ কুড়াল, ধারাল কিরিচ ও ছোরা দিয়ে খলিলকে নিমর্মভাবে হত্যা করল। সন্ত্রাসীরা যখন হল ঘেরাও করে রেখেছিল তখন পুলিশ হলের মধ্যে যেতে অস্বীকার করেছে। প্রক্টরের অনুরোধ পর্যন- পুলিশ রাখেনি অথচ সন্ত্রাসীরা বাহির থেকে হলে প্রবেশ করলো কিভাবে? তা সবার কাছেই রহস্যজনক। শহীদ খলিলকে খুন করে জাসদ-মৈত্রীর খুনীরা পুলিশের সামনে দিয়ে মৃত খলিলকে হল গেট দিয়ে বের করল। ইচ্ছে করলে পুলিশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে খলিলুর রহমানকে তখনও উদ্ধার করতে পারত কিংবা মেডিকেলে পাঠানোর ব্যবস'া করতে পারত কিন' তারা তা করেনি। হল প্রভোস্ট জনাব আব্দুর রহমান নিজ মুখে স্বীকার করেছে, “শিবিরের সমর্থক আমীর আলী হলে বেশি ছিল কিন' তারা কাউকে আক্রমণ কিংবা অন্য কোন কক্ষে অগ্নি সংযোগ করেনি। বাইরে থেকে সন্ত্রাসীরা গিয়েই খলিলকে হত্যা করেছে। খলিলকে হত্যা করে দুষকৃতিকারীরা তাদের কর্মী বলে দাবি করেছিল। কিন' সত্য উদ্ভাসিত হওয়ায় তাদের মিথ্যার মুখোস উম্মোচিত হয়। খলিল হত্যার পর একটি তদন- কমিটিও গঠিত হল কিন' সেই তদনে-র ফলাফল জাতি জানতে পারেনি। পরবর্তীতে বি এন পি সরকারের সাথে আওয়ামী লীগ আঁতাত করে ৬০ জন খুনীকে মামলা থেকে রেহাই দিয়েছে।” অনেকের ধারণা খলিলুর রহমান সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি আঘাতে হলের মধ্যেই শাহাদাত বরণ করেছিলেন। আবার অনেকেই বলেছেন প্রচন্ড আঘাতে খলিল জ্ঞান হারিয়ে ছিলেন পরে তাকে সন্ত্রাসীরা হলের বাইরে এনে হত্যা করে। রাত ১২ টার দিকে খলিলুর রহমানকে মেডিকেলে নেয়ার জন্য এম্বুলেন্স এসেছিল কিন' সংগ্রাম পরিষদের খুনীরা তাতে বাধা প্রদান করে। পাষন্ড নরখাদকরা শহীদ খলিলের লাশের গলায় দড়ি দিয়ে টেনে হেঁচড়ে প্রথমে লতিফ হলে আনে অতঃপর এস, এম, হলের গেস্ট রুমে নিয়ে যায়। তারপর হায়েনার দল শহীদ খলিলকে নিজেদের কর্মী বলে মিথ্যা দাবী করতে দ্বিধাও করেনি। বহু চেষ্টার পর রাত ৩টার দিকে খলিলুর রহমানকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় কিন' ততক্ষণ শহীদ খলিল জান্নাতের অনেকগুলি সিঁড়ি পেরিয়ে উপরে উঠে গেছেন। শহীদ খলিলকে যখন আমীর আলী হল থেকে দুষকৃতিকারীরা বের করে আনে তখন হল গেটে প্রক্টর ও এস. পি. উভয়ই উপসি'ত ছিলেন কিন' তারা ঐ মানুষখেকোদের হাত থেকে শহীদ খলিলকে উদ্ধারের সামান্যতম চেষ্টাও করেনি।

বেহেশতের দোলনায় শহীদ খলিল

মোঃ নুরুল ইসলাম শাহীন

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৮ম শহীদ, খলিলুর ঘোষকুড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৮৮-৮৯ সেশনে তিনি উচ্চ শিক্ষার আশা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ইতিপূর্বে তিনি নাটোরের জামহুরিয়া মাদ্রাসায় লেখা-পড়া করেন। সাংগঠনিক জীবনে তিনি নাটোর শহর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শাহাদাতের সময় তিনি আমীর আলী হল শাখার সেক্রেটারী ছিলেন। ১৯৯০ সালের ২২ জুন রাত্রে সন্ত্রাসীদের হাতে তিনি নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের কিছুক্ষণ পূর্ব পর্যন- আমি ও শহীদ খলিল ভাই একই সাথে হলে অবস'ান করছিলাম। শহীদ খলিল ভাইকে মহান রাব্বুল আলামিন শাহাদাতের পেয়ালা পান করালেন আর আমাকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন। ১৯৯০ সালের ২২ জুন রাত্রে কি ঘটেছিল সে সম্পর্কেই নিজস্ব অভিজ্ঞতার কিছু কথা তুলে ধরছি।
২২ জুন ৯০। ইসলামী ছাত্রশিবির শাহ্‌ মখদুম হলে একটি প্রচার মিছিলের আয়োজন করে। মিছিল শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই জাসদ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে তৎকালীন সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে নিরস্ত্র শিবির কর্মীদের ওপর বোমা হামলা চালায় এবং হলের প্রধান গেট বন্ধ করে তাতে বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ করে দেয়। যাতে নিরস্ত্র শিবির কর্মীরা বৈদ্যুতিক শক খেয়ে বের হতে না পারে। সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় কামারুজ্জামান নামে এস এম হলের একজন সাথী মারাত্মকভাবে আহত হন। শিবির কর্মীরা হলের গেট ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে এবং প্রাণ রক্ষার্থে আমীর আলী হলে গিয়ে প্রবেশ করে। আমীর আলী হলে শিবির কর্মীরা প্রবেশ করার পরপরই সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা অন্যান্য হল থেকে একযোগে আমীর আলী হলে আক্রমণ চালায়। হলের প্রধান গেট বরাবর উপর্যুপরি গুলি বোমা ফাটাতে থাকে। আক্রম-
ণের সময় পুলিশ তাদের চিরাচরিত নিময় অনুযায়ী তিন হল চত্বরের এক জায়গায় নীবরে দাঁড়িয়ে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল। কিন' এক পর্যায়ে সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা উপুর্যপরি গুলি বোমা ফাটিয়ে হলের প্রধান গেট ভেঙ্গে ফেলে এবং শিবির কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে তৎকালীন এস এম হল সভাপতি শামিম ভাই, মোখলেস ভাইসহ অনেকেই আহত হন। এখানেও শিবির কর্মীরা প্রাণ রক্ষার্থে বিভিন্ন দিক দিয়ে হল থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে আমি বাহিরের অবস'া দেখার জন্য ছাদে ওঠার পর কখন যে সন্ত্রাসীরা হলের ভিতর ঢুকে পড়েছে সে খবর জানতে পারিনি। খলিল ভাই হলের ভিতর থেকে বের হতে পারেননি। সেই সময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসী পিটু খান, টিটন, জোহান সহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী খলিল ভাইকে ধরে ফেলে এবং চাকু, কিরিচ, রামদা দ্বারা উপর্যুপরি আঘাত করে। কিছুক্ষণ পরেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রক্ত পিপাসুরা শুধু খলিল ভাইকে খুন করেই ক্ষান- হয়নি, তারা শহীদ খলিল ভাইয়ের পবিত্র দেহকে টেনে হেঁচড়ে এস এম হলে নিয়ে যায় এবং জাসদের কর্মী শিবিরের হাতে খুন হয়েছে বলে মিথ্যা গুঞ্জন ছড়ানোর চেষ্টা করে।
সন্ত্রাসীরা খলিল ভাইকে খুন করার পর হল ভাংচুর ও পোড়ানোর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে। তারা একে একে শিবির কর্মীদের সমস- রুমগুলো জ্বালিয়ে দেয়। উল্লেখ্য যে, সন্ত্রাসীরা হলের ভিতরে ঢুকে পড়ায় ছাদ থেকে নেমে বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ আমার হয়নি। আমি আল্ল্লাহর ওপর ভরসা করে ছাদের ওপর একাএকা বসে সন্ত্রাসীদের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করছিলাম। হল পোড়ানোর পর পুলিশ হলের ভেতরে প্রবেশ করে। সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসীরা পুলিশকে হল থেকে চলে যাওয়ার জন্য বারবার নির্দেশ দেয়। ভাগ্যক্রমে পুলিশ হলের ছাদে ওঠে এবং বলে কেউ ছাদে থাকলে বেরিয়ে আসুন। আমি পুলিশের হাতে ধরা দিলাম। পুলিশ ছাদে কিছুক্ষণ অবস'ান করে আমিও তাদের মাঝে অবস'ান করি। কিছুক্ষণ পর ছাত্রমৈত্রীর দুইজন সন্ত্রাসী আমাকে খুঁজতে আসল। সেই সময় পুলিশের সিপাহীরা আমাকে তাদের ঢাল দ্বারা লুকিয়ে রাখে এবং তাদেরকে বলে এখানে আমরা ছাড়া অন্য কেউ নেই। তারা বারবার পুলিশকে আমার অবস'ান স্বীকার করার জন্য অনুরোধ করে এবং শেষ পর্যন- বলে আমরা রাকসুর নেতা। রাকসুর নাম শুনে পুলিশ আমার অবস'ান স্বীকার করে। সন্ত্রাসীদ্বয় আমার নিকটে এসে বলে, আপনি শিবির করেন কিনা শিবির করলে ছেড়ে দেব। মিথ্যা কথা বললে আপনাকে খুন করব। আমি টেকনিক্যাল উত্তর দিলাম। তারা শেষ পর্যন- চলে গেল।
এদিকে সাধারণ পুলিশের সিপাহীরা ব্যস- হয়ে পড়েছে আমাকে বাঁচানোর জন্য। শেষ পর্যন- তারা আমাকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের পোষাক খুলে আমাকে পরাল, আমাকে তাদের জামা, ঢাল, লাঠি, ক্যাপ, সব কিছু দিয়ে পুলিশ সাজাল এবং সন্ত্রাসীদের মাঝ থেকে আমাকে উদ্ধার করে পুলিশের গাড়িতে করে থানায় নিয়ে এলো। আমি থানায় পুলিশদের সাথে গল্প করে, পুলিশের এক রুমে শুয়ে আছি এমন সময় একজন পুলিশ আমাকে ডেকে বলল- বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্র খুন হয়েছে দেখেন তো চেনেন কিনা। আমি এ্যাম্বুলেন্সের ভিতর মৃতের মুখের পর্দা তুলে দেখি খলিল ভাই। যে খলিল ভাইয়ের সাথে কয়েক ঘণ্টা এক সাথে অবস'ান করছিলাম। পুলিশেরা আমার নিকট খলিল ভাইয়ের পরিচয় জানতে চাইলো। আমি তাদেরকে খলিল ভাইয়ের পরিচয় দিলাম। আশ্চার্য ঘটনা হল যে খুনিরা খলিল ভাইকে খুন করার নেতৃত্ব দিল সেই খুনী রাকসুর জি. এস. রুহুল কুদ্দুস বাবু থানায় এসে শিবির নেতাদের নামে খলিল হত্যার মিথ্যা মামলা করে। পরবর্তীতে অবশ্য সেই মামলার ঋ.ও.জ. হয়। দুই দিন থানায় রাখার পর পুলিশ আমাকে ৫৪ ধারায় (সন্দেহ জনক মামলা) কেইস দিয়ে কোর্টে প্রেরণ করে। আদালতে একজন হিন্দু ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তিনি আমাকে জামিন না দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হল- আমার ৫৪ ধারার কেইস, যা সাধারণত জামিন ধরলেই জামিন হয়ে যায়, কিন' আমাকে জামিন দিলেন না। অথচ তারপরের দিন খলিল ভাইয়ের প্রধান দুইজন খুনীকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করলে সেই হিন্দু ম্যাজিস্ট্রেটই একদিন পর তাদের বিরুদ্ধে খুনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও দু’জনকেই জামিন দিয়ে দেন। কিন' দুর্ভাগ্য আমার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জামিন না পেয়ে দশ দিন পর জজ কোর্টে জামিন হয়।
কিছুদিন পর ২২ জুনের ঘটনা তদনে-র জন্য সরকার একজন দায়রা জজের নেতৃত্বে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন- কমিটি গঠন করে। আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। জজ সাহেব আমাকে ঘটনাস'ল থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে শুনে তিনি অনেকক্ষণ ধরে আমার সঙ্গে কথা বলেন। আমি জজ সাহেবকে সমস- ঘটনা খুলে বলেছি কিন' সেই তদন- কমিটির রিপোর্ট সরকারের নিকট দাখিল হলেও আজ পর্যন- প্রকাশিত হয়নি।
শহীদ খলিল ভাই ছিলেন অত্যন- নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। শাহাদাতের এক বছর পূর্বে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। খলিল ভাই ও আমি একই মাদ্রাসায় পড়ার কারণে দু’জনের মধ্যে বেশ হৃদ্যতা গড়ে উঠেছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি মাদ্রাসার সকল শিক্ষক ও ছাত্রদের হৃদয় জয় করে ফেলেছিলেন। শাহাদাতের কয়েক দিন পূর্বের একটি ঘটনা সবাইকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। সেটা হলো- তিনি কামিল পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। কোন এক পরীক্ষায় প্রশ্ন কারো কমন পড়েনি। মুহাদ্দিস সাহেবরা অধিকাংশ ছাত্রকে সহযোগিতা করছিলেন। একজন মুহাদ্দিস খলিল ভাইকে বলছিলেন যে, খলিল, প্রশ্নতো একটু খারাপ হয়েছে, তোমাকে একটু সহযোগিতা করি। উনি বললেন, না আমার সহযোগিতার কোন প্রয়োজন নাই। আমি যতটুকু জানি ঠিক ততটুকুই লিখব। তাঁর জবাব শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। এই ঘটনার কয়েক দিন পরই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর লিখিত পরীক্ষা শেষ করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রস'তি নিচ্ছিলেন। এমন সময় হায়েনারা তার জীবন কেড়ে নিল। খলিল ভাইয়ের আর মৌখিক পরীক্ষা দেয়া হলো না।
(লেখকঃ অধ্যাপক, ইসলামিয়া কলেজ ও সাবেক সভাপতি, শহীদ সাব্বির আহমদ উপশাখা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)

কোন মন্তব্য নেই: