***যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর পূজা করে, যে কেয়ামত পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? তারা তো তাদের পুজা সম্পর্কেও বেখবর।*****আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। *** ওই ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে তারা সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল, যিনি মহাপরাক্রমশালী এবং নিজের সত্তায় নিজেই প্রশংসিত – (আল বুরুজ-৮) || যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম - নিপীড়ন চালিয়েছে ,তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা - পোড়ার শাস্তি – (আল বুরুজ-১০) || যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের বাগান যার নিম্নদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে ঝরণাধারা৷ এটিই বড় সাফল্য – (আল বুরুজ-১১) || এই ওয়েবসাইট সম্পর্কে আপনার মতামত ও গঠনমূলক সমালোচনা জানিয়ে ই-মেইল করুন। *** হে আল্লাহ,আমাদেরকে তোমার সত্যের পথে পরিচালিত কর। আমাদের সম্মুখে তোমার পথ সহজ ও সরল করে দাও। আমীন...!

শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

শহীদ মো: মুস্তাফিজুর রহমান

শহীদ নং-১২
নাম: মো: মুস্তাফিজুর রহমান
সাংগঠনিক মান: সদস্য প্রার্থী
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৩
পিতার নাম: মো: আব্দুল জলিল
সর্বশেষ পড়াশুনা: এম.এস.এস. শেষ বর্ষ, অর্থনীতি বিভাগ।
জীবনের লক্ষ্য: অধ্যাপনা।
শহীদ হওয়ার স্থান: রাবি শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে।
আঘাতের ধরন: গুলি, চাইনিজ কুড়াল, রামদা।
কাদের আঘাতে শহীদ: ছাত্রদলের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য।
স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম: ছোট গোপালপুর, ডাক: তালবাড়ীয়া, থানা: যশোর, জেলা: যশোর।
ভাইবোন : ৬ জন।
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান : ২য়।
পরিবারের মোট সদস্য: ৯ জন।
পিতা: জীবিত, পেশা: চাকুরী।
মাতা: জীবিত, পেশা: গৃহিণী।
শহীদ হওয়ার পূর্বে স্মরণীয় বাণী: শাহাদাতের ঠিক পূর্বে বলেছিলেন, “আমি মৃত্যুর আগ পর্যন- দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করেছি। সভাপতি ও কর্মীভাইদেরকে আমার সালাম পৌঁছাবেন।”
শাহাদতের পর শহীদের মাতার প্রতিক্রিয়া: শহীদ মুস্তাফিজ শাহাদাতের দীর্ঘদিনের ব্যবধানেও স্বাভাবিক হতে পারেননি। শহীদের আম্মা বলেছিলেন, “মুস্তাফিজ যে কেমন ছিল তা বলে পারা যাবে না। ওকে হারিয়ে কোন মা-ই বেঁচে থাকতে পারে না, কিন্তু' আমি যে কিভাবে.......!
 শাশ্বত সত্তার সান্নিধ্যে

শাহ্‌ আলম

মানুষের গুণাবলী মানুষকে চিরভাস্বর করে রাখে। মৃত্যুর পরও তাকে করে রাখে অমর, পৃথিবীর বুকে তাকে করে রাখে চিরস্মরণীয় । তেমনি গুণসম্বলিত আমার মেজভাই। যার গুণাবলী প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই পৃথিবীর বুক থেকে তাকে চিরবিদায় নিতে হয়েছে। একটি কুঁড়ি তার সৌরভ বিকশিত করার পূর্বেই ঝরে গেল আমাদের হৃদয়ে একটা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। যদিও তার বিদায় ছিল প্রশংসিত, তবু মনে হয় হৃদয়ের কোন সূক্ষ্ম সুতা যেন ছিঁড়ে গেছে, যা কখনও পূরণ হবার নয়। আমরা ছিলাম মোট চার ভাই, সে ছিল মেজ। আর আমি ছিলাম সবার ছোট। আমাদের ভেতর সে ছিল সবচেয়ে পাতলা লম্বা এবং ফর্সা। আর স্বভাব ছিল অত্যন- কোমল। ভাইয়াকে রাগতে আমি খুব কমই দেখেছি। তবে যে কয়বার রেগেছে তার অধিকাংশই ছিল আমার ওপর। তবে সেটা তার ব্যক্তিগত রাগ ছিল না। মায়ের সাথে আমি মাঝে মাঝে তর্ক করতাম। এ তর্ক করাকে সে পছন্দ করতো না। এর জন্য ভাইয়ার হাতে আমি কয়েকবার মারও খেয়েছি। আমি তখন বেশ ছোট ছিলাম, তখন মনে হতো ভাইজান খুব খারাপ। মনে হতো তার সাথে আর কখনো কথা বলবো না। কিন' কিছুক্ষণ পরেই আবার সব ঠিক হয়ে যেত। ভাইয়া আমাকে ডেকে বুঝাতো ‘মায়ের সাথে কখনো ঝগড়া করতে নেই।’ তাই কখনো বেশি সময় তার ওপর রাগ করে থাকতে পারিনি। ভাইয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল অত্যন- খোলামেলা, বন্ধুর মত। বড় ভাইকে আমরা সবাই আপনি বলে সম্বোধন করি। কিন' মুস্তাফিজ ভাইকে আমরা সবাই তুই বলে সম্বোধন করতাম। এতে ভাইয়ার কোন রাগ কিংবা ক্ষোভ ছিল না। মা মাঝে মাঝে একারণে আমাদের বকা দিত। কিন' ভাইজান বলতো, তাতে কি হয়েছে। ওভাবে ডাকলেই আমার ভাল লাগে। বড় ভাইয়ের সাথে আমরা প্রয়োজন ব্যতীত কোন কথাই বলতাম না।
আমাদের কোন কথার মাঝে বড় ভাই আসলে আমাদের কথা থেমে যেত আর যতটা সম্ভব সেখান থেকে সরে যেতে চেষ্টা করতাম। কিন' মুস্তাফিজ ভাই ছিল আমাদের গল্পের সাথী। তার সাথে আমরা সব ধরনের কথাই বলতাম। ওর জীবনের অনেক স্মৃতি আমার হৃদয়ে পরিস্ফুটিত হয়ে আছে। সেগুলোর ভেতর কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছিঃ
কোন এক অনুষ্ঠানে আমরা সবাই নানার বাড়িতে গিয়েছি। আমরা সবাই যে যার কাজে ব্যস-। মুস্তাফিজ ভাই কখন এসেছে তা হয়তো অনেকেই জানে না। কারণ সে এসেই একটা ঘরে ঢুকেছে আর বের হয়নি। কেননা বাইরে অনেক মেয়ে ঘোরাফেরা করছিল আর ভাইজান অত্যন- পর্দা মেনে চলতো। এ কারণে সে বিনা প্রয়োজনে খুব বেশি আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেত না। মা যেতে বলায় গিয়েছিল। এদিকে দুপুর হয়ে গিয়েছে। সবার খাওয়া শেষ হয়েছে। কিন' মুস্তাফিজ ভাইয়ার কথা আর কারও মনে নেই। বাইরে যেহেতু অনেক মেয়ে রয়েছে তাই তিনি বাইরে বের হতে পারছেন না। এমন সময় কে যেন ঘরে গিয়ে দেখে ভাইয়া বসে রয়েছে। খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করায় বলে, এখনো খাওয়া হয়নি। তখন প্ল্লেটে করে তার ভাত ঘরে নিয়ে আসার পর খায়। সেদিন ভাইয়ার ঘরে কেউ যদি না ঢুকতো তাহলে হয়তো তার খাওয়াই হতো না। রাতে সবার শোবার ব্যবস'া করা হয়েছে। মুস্তাফিজ ভাইয়ারও ব্যবস'া করা হয়েছে। এক ঘরে। কিন' তাকে বাড়ির ভেতর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই মনে করছে কোথাও হয়ত গেছে। এদিকে যে যার মত শুয়ে পড়েছে। রাত দশটার দিকে কোন এক প্রয়োজনে আমি বাইরে এসে দেখি ভাইয়া বাইরের সিঁড়িতে অন্ধকারের মধ্যে চাদর জড়িয়ে বসে আছে। তখন ছিল শীতকাল। প্রচন্ড শীতের মধ্যে মুস্তাফিজ ভাইয়ার এখানে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করায় ও বলে, কোন ঘরে আমার শোবার ব্যবস'া করেছে তা আমি জানিনা। আমি বললাম, জানিসনা বলে তুই শীতের মধ্যে এখানে বসে থাকবি? ও বললো, মেয়েদের জন্য বাড়ির ভেতরে যেতে পারছিনা। আমি তখন ভাইয়াকে নিয়ে গিয়ে শোবার জায়গা দেখিয়ে দেই। প্রচন্ড শীতের মাঝে এভাবে বসে থাকতে দেখে আমার তখন কান্না এসে গিয়েছিল। আরও বেশি খারাপ লাগছিল এই ভেবে, যদি আমি ওখানে না যেতাম তা হলে হয়তো গোটা রাতটা ভাইয়ার ওখানেই কেটে যেত। এই কথা মনে হলে এখনো আমার অন-র ফেটে যায়।
আর একদিনের ঘটনা। মেজ ভাইয়ের প্রশংসাপত্র কি জন্য একটি কাগজ তোলার জন্য একটা দরখাস- আমি প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে যাই। সেখানে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান যিনি, তিনিও বসে ছিলেন। প্রিন্সিপাল আমার দরখাস- দেখে অর্থনীতি বিভাগের প্রধানের নিকট দেন। প্রথমে তিনি মেজভাইকে চিনতে পারছিলেন না। পরে চিনতে পেরে বলছিলেন, এ ছেলে কি পাস করতে পারবে? এ তো একদিনও ক্লাস করতে পারেনি। তখন পাশের এক স্যার বললো, ছাত্র ভাল হয়তো থার্ড ক্লাস পেয়েও যেতে পারে। কিন' রেজাল্টে দেখা গেল ভাই সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছে। স্যারদের সেই কথা এখনো আমার মনে পড়ে।
আর একদিনের ঘটনা আমার মনে পড়ে। শিবিরের কোন এক সম্মেলনে মেজ ভাইয়ার সাথে আমি ঈদগাহর মাঠে গিয়েছি। সম্মেলন প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় হঠাৎ অনেক মানুষের চিৎকার শোনা গেল। মেজভাই মনে করলো হয়তো বিরুদ্ধ কোন দল আক্রমণ করেছে। সংগে সংগে আমাকে ও একপাশে যেতে বলে পাশে অনেক কাঠ ছিল তার মধ্যে থেকে একটি তুলে নিয়ে দৌড়ে গেটের কাছে চলে গেল। তখন তার চেহারায় যে নির্ভীক এবং সাহসের ছাপ ফুটে উঠেছিল এখনো আমার তা মনে আছে। সেদিন ছিল ৬ ফেব্রুয়ারী ’৯৩ শনিবার। আমি মাগরিবের নামায পড়ে মসজিদ থেকে বাইরে বেরিয়েছি। এমন সময় ইমাম সাহেব আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোর ভাই এখন কোথায়? আমি সঙ্গে সঙ্গে বলি রাজশাহী। তখন তিনি বললেন, আমি তোর বড় ভাইয়ের কথা বলছি। সেই মুহূর্তে ইমাম সাহেবের মুখে আমি যে ভাব দেখি সেখান থেকেই এই হৃদয় বিদারক ঘটনার শুরু। আমি বাড়ি ফিরতে ফিরতে মনে করছিলাম ইমাম সাহেব আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়েছিলেন কেন। এরপর এশার নামায পড়ে বাড়িতে এসে শুনি রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে মারামারি হয়েছে। আর এতে কয়েকজন মারা গেছে। এনিয়ে আমরা আলাপ করছি এমন সময় মঈন ভাই আব্বাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে এসে বলে, মেজভাই সামান্য আহত হয়েছে। তিনি আমাদের একজনকে রাজশাহী যেতে বললেন শিবিরের ৫/৬ জন ভাইয়ের সাথে। এদিকে বাড়িতে কান্নাকাটি পড়ে গেছে। মা কাঁদছে আর বলছে, ‘আমার মুস্তাফিজ বেঁচে নেই। যদি বেঁচেই থাকতো তাহলে ওরা এখনই ওকে আনতে যাচ্ছে কেন?’
আমি কিন' একথা মোটেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি মাকে বলছি, আপনি একথা বলছেন কেন? মঈন ভাইতো বললেন যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে যশোরের কোন ছেলেই নেই। তবু মা শুধু কাঁদছে আর ওকথা বলছে। আব্বা তখন আমার কাছে এক হাজার টাকা দিয়ে বলে তুমি ওদের সাথে রাজশাহী যাও। এরপর আমি মঈন ভাইয়ের সাথে শিবিরের অফিসে আসি। এখানে এসে দেখি সবার মুখে যেন শোকের ছায়া। সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে আর আমার কাছে যেন কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে। এদের ভাব দেখে আমার নিজের কাছেই কেমন অস্বসি- লাগছিল। আমি রাস-ায় বেরিয়ে আসি। তখন দু’জন আমার কাছে এসে আমাকে ভেতরে যেতে বলে। ওদের কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল ওরা মনে করছে আমি বোধ হয় গাড়ির নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করব। আমার শুধু মনে হচ্ছিল ওরা আমার সাথে এভাবে কথা বলছে কেন? অথচ ওরাই বলছে মেজভাই সামান্য আহত হয়েছে। এরপর সেখান থেকে আমাকে আর একটি মেসে নিয়ে যায়। এখানে এসে অনেকক্ষণ ঘরের মধ্যে বসে একটু বাইরে বেরিয়েছি এমন সময় শুনি রান্নাঘরের মধ্যে কয়েকজন কথা বলছে। আমি তখন খাচ্ছিলাম। তাদের কথা শুনে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। আরেকজন বলছে এমন অবস'া হবে আমি কখনও ভাবতে পারিনি। এভাবে আমার মনে আসে- আসে- সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। যা হোক টিকিট কেটে আমরা রাত এগারোটার সময় ট্রেনে উঠি। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। আমি এত চেষ্টা করছি একটু ঘুমুতে কিন' ঘুম মোটেই আসছেনা। আমি মনে মনে তখন দোয়া করছি, মেজভাই যেন সামান্য আহত হয়। আমি ওখানে গিয়ে যেন দেখি তার সামান্য আঘাত লেগেছে। ওকে যদি বাড়িতে নিয়ে আসা সম্ভব হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িতে নিয়ে আসব। মুস্তাফিজ ভাই ওখানে থাকতে চাইলেও জোর করে ওকে নিয়ে আসব। আর শুধু আল্ল্লাহর কাছে দোয়া করছি ওখানে গিয়ে যেন ভাইয়াকে সুস' অবস'ায় পাই।
এসব কথা চিন-া করতে করতে ফজরের আযানের আগে রাজশাহী এসে পৌঁছি। সে রাতে আমার আর মোটেও ঘুম আসেনি। আমরা প্রথমে মনে করলাম মসজিদে নামায পড়ে তারপর শিবিরের অফিসে যাব। কিন' তখনও আযান হয়নি দেখে আমরা শিবিরের অফিসে যাই। কিছুক্ষণ ডাকার পর একজন গেট খুলে দেয়। আমাদের একজন তাকে জিজ্ঞেস করে শিবিরের কয়জন মারা গেছে। সে বলে দুইজন মারা গেছে আর দু’জনই যশোরের। একজনের নাম রবিউল কিনা জিজ্ঞাসা করায় বলে, হ্যাঁ একজন রবিউল। এমন সময় আমি শুনতে পাই আমাদের মধ্যে একজন আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করছে মুস্তাফিজ ভাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করব? ও বলছে না থাক, মুস্তাফিজ ভাইয়ের ছোট ভাই রয়েছে। তারপর জিজ্ঞাসা করে, ওদের বর্ণনা কেমন? তিনি বলেন, একজন বেশ মোটা আর একজন পাতলা। পাতলা লোকটির মাথায় চুল বেশ কিছুটা পাকা। এই বর্ণনা শুনে আমি যে তখন কত আনন্দ পেয়েছিলাম এমন আনন্দ আমি জীবনে কখনো পাইনি। তখন একজন জিজ্ঞাসা করে আরেকজনের নাম মুস্তাফিজ কিনা। সে বলে হ্যাঁ আরেকজনের নাম মুস্তাফিজ। তখন আমার কান যেন একথা বিশ্বাস করতে চাইলো না। আমার বারবার মনে হচ্ছিল ওই লোক নিশ্চয়ই ভুল করে মেজ ভাইয়ের নাম বলছে। ওর বর্ণনা মতে তো মেজভাই হতে পারে না। আবার মনে হলো অন্য কোন মুস্তাফিজ হতে পারে। তারপর আমরা ফজরের নামায মেসেই পড়ে নেই। আমার সাথের ছেলেরা ইতিমধ্যে ওদের কাছ থেকে শুনে নিশ্চিত হয়ে গেছে যে মেজ ভাই-ই মারা গেছে। কিন' আমার কাছে ওরা কিছুই বলছেনা। আমি একজনের কাছে জিজ্ঞেস করায় সে বলল, আমরা এখনো সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই। কিন' ওদের গোপনীয় আলাপ আর হাব ভাব দেখে আমি ততক্ষণে নিশ্চিত হয়ে গেছি আমার ভাই-ই মারা গেছে। তখন আমি একজনকে বলি, আমার কাছে আর গোপন করার দরকার নেই। আমি জেনে গেছি আমার ভাই মারা গেছে। আপনি যশোরে টেলিফোন করে বাড়িতে এ খবর পৌঁছে দেবার ব্যবস'া করুন। একথা শুনে উনি আমার গায়ে হাত বুলিয়ে সান-না দেবার চেষ্টা করছেন। কিন' কোন কথা বলছেন না। আমি পুনরায় তাকে অনুরোধ করায় সে বলে, ব্যবস'া করা হয়েছে।
সারা রাত মোটেই ঘুম হয়নি তারপর টেনশন। আর এখন এই দুঃসংবাদ শুনে আমি যেন কেমন হয়ে গেলাম। দু'চোখ লাল হয়ে গেছে। চোখের ভেতর কেমন যন্ত্রণা করছে, মাথাটা অত্যন- ভারী মনে হচ্ছে। আমি যেন কোন কিছু চিন-া করতে পারছি না, কিছু বুঝতে পারছিনা। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম এমন সংবাদ শোনার পরও আমার চোখে একটুও পানি আসছে না বা আসতে চাইলেই আমি সেটাকে প্রকাশ করতে পারছি না কেন? আসলে মানুষের চোখে বোধ হয় তখনই পানি আসে যখন তাকে কেউ সান-্বনা দেয় বা সান-্বনা পাওয়ার মতো কোন মানুষ তার পাশে থাকে। এখানে এসে সবাইকে এত ব্যস- মনে হচ্ছে যে আমার প্রতি কারও খেয়াল করার এতটুকু সময় নেই। যাহোক একজন আমাকে বললো এখনতো রাত বেশ রয়েছে, তাছাড়া হাসপাতালও সকাল ৯টার আগে খুলবে না। তাই তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও। আমার যদিও তখন ঘুম আসছিল না তবুও একটু একা থাকতে পারবো ভেবে শুয়ে পড়ি। চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে অনুভব করলাম আমার চোখে পানি আসছে। আমি খুব চেষ্টা করছি আমার চোখের পানি যেন কেউ দেখতে না পায়। কারণ চোখের পানি ফেলার মতো পরিবেশ তখন ওখানে ছিলনা। একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কিনা জানিনা। তবে একটু পরে একজন আমাকে ডেকে বললো, ওঠেন এখন হাসপাতালে যেতে হবে। আমার চোখের ভেতর তখন ভীষণভাবে যন্ত্রণা করছে। হোটেল থেকে আমরা নাস-া করে হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হই।
আমার বারবার মনে হচ্ছে আমি কিভাবে আমার ভাইকে অচল অসাড় কিংবা মৃত অবস'ায় দেখব! হাসপাতালে আমি তখনো বুঝতে পারছিনা ভাইয়াকে কোথায় রাখা হয়েছে। এমন সময় হাসপাতালের একজনকে জিজ্ঞাসা করা হলো পোস্ট মর্টেম রুম কোন দিকে? আমি তখন চমকে উঠি এই ভেবে যে তাকে পোষ্ট মর্টেমে রাখা হয়েছে! মানে ভাইকে পোষ্ট মর্টেম করা হবে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি মোট তিনটি লাশ রয়েছে। একদিকে দু’জন অন্যদিকে আর একজন। আমি প্রথম যার দিকে তাকাই সে ছিল রবিউল। তখন আমার একান- কামনা ছিল, হে আল্লাহ! এদের মধ্যে আমার মেজভাই যেন না থাকে। কিন' আফসোস! দ্বিতীয় জনের দিকে তাকিয়েই দেখি আমার ভাই। আমার ভাইয়ের সমস- মুখ রক্তাক্ত। মুখে মাথায় অনেকগুলো কাটা দাগ। মাথার চুল কিছুটা কাটা। সমস- মুখে রক্ত থাকা সত্ত্বেও আমার মনে হলো ভাইয়া যেন হাসছে। তারপর আমি আর কিছুই দেখতে পেলাম না। ওরা আমাকে ধরে বাইরে নিয়ে এলো। বাইরে এসে বারবার আমার একটি কথা মনে হচ্ছিল, যাকে আমি কখনও হাঁটুর ওপর কাপড় উঠাতে দেখিনি, যে এত পর্দা মেনে চলতো তাকে শুধু একটি জাঙ্গিয়া পরিয়ে রাখা হয়েছে! আর মেডিকেল কলেজের গাদা গাদা ছেলেমেয়েরা ভাইকে ওভাবে দেখছে! আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে, ওকে যেন অন-ত কোমর থেকে পা পর্যন- ঢেকে দেয়া হয়। কিন' আমার কথা কে শুনবে? আমার একথা তাদের কাছে হাস্যকর ছাড়া হয়তো কিছুই মনে হবে না।
বেলা ১১টার সময় পোস্ট মর্টেম করার জন্য ডাক্তার এলো। আমি যশোর সদর হাসপাতালে একবার পোস্ট মর্টেম করা দেখেছিলাম। মাথার খুলি খোলার সময় জোরে জোরে মাথায় আঘাত করা হয়। আর এ শব্দ অনেক দূর থেকেও শোনা যায়। এখানেও এভাবে করা হবে ভেবে আমার সাথে যে কয়জন ছিল তাদেরকে বলি, চলুন একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াই। তারা জিজ্ঞেস করে কেন? আমি ওদেরকে কিভাবে বলবো যে যখন আমার ভাইয়ের মাথায় ওভাবে আঘাত করা হবে আমি সে শব্দ সহ্য করতে পারবো না। আমি ওদেরকে বলি, এমনি আমার এখানে থাকতে ভাল লাগছে না। একারণে ওরা আমাকে নিয়ে পোষ্ট মর্টেম ঘর থেকে একটু দুরে দাঁড়ায়। কিন' বেশি দূরে নয়। কিছুক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ সেই আঘাতের শব্দ শুনতে পাই। তখন আমার যে কেমন কষ্ট হচ্ছিল তা লিখতে পারবো না। মনে হচ্ছে আমার প্রাণপ্রিয় ভাইয়ার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে, আর সেই আঘাত আমার কানে আসছে। উহ! এর চেয়ে কঠিন পরিসি'তি আর কী হতে পারে!। আমার বুকটা তখন চৌচির হয়ে যাচ্ছে। জানলাম, রবিউল ভায়ের পোস্ট মর্টেম চলছে। কিছুক্ষণ পর রবিউল ভাইয়ের পোস্ট মর্টেম হয়ে গেল এবার নিশ্চয় তাহলে আমার ভাইয়ের পালা করে ওদেরকে প্রায় জোর করেই আমি আরও দূরে নিয়ে যাই। যাহোক এরপর আমি আর সে শব্দ শুনতে পাইনি। এক সময় শুনি সবার পোস্ট মর্টেম হয়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে প্রায় সাড়ে বারোটার সময় শিবিরের অফিসে তাদেরকে নিয়ে আসা হয়। সেখানে শহীদদেরকে গোসল দিয়ে মসজিদে জানাযার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়্‌ জানাযা শেষে আমার ভাই আর রবিউল দু’জনকেই ট্রাকে উঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্বে এক মসজিদে জানাযার জন্য আনা হয়। এ দু’জায়গায়ই জানাযায় প্রচুর লোক অংশ গ্রহণ করে।
এখানে জানাযা শেষে আমি ট্রাকের ড্রাইভারের পাশে বসে রয়েছি। আমার পাশে রবিউল ভাইয়ের চাচা, উনার একটা মেয়ে আর একটা লোক বসে রয়েছে। বেশ কিছু লোক ট্রাকের পার্শ্বে এসে আমাকে দেখে বলছে, ওই দেখ মুস্তাফিজ ভাইয়ের ছোট ভাই বসে আছে। তখন আমি অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানি ঠেকাতে পারলাম না। আমি মাথা নিচু করে রয়েছি আর আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে অঝোর ধারায়। তখন শহীদ রবিউলের চাচা আমাকে সান-্বনা দিয়ে বললো, কেঁদোনা বাবা! যা হবার তা হয়ে গেছে। আমাকে দেখ না আমি সারা জীবন রবিউলকে মায়ের মতো মানুষ করেছি। কই আমি তো কাঁদছি না! একথা বলার পরই দেখি, উনি আমার চেয়েও বেশি কাঁদছেন। এরপর আমার চোখ দিয়ে আরো বেশি পানি ঝরতে শুরু করলো। সেই আমি প্রথম কেঁদেছিলাম। আর কখনো কাঁদিনি।
(লেখকঃ শহীদ মুস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই)

আমার দেখা শহীদ মুস্তাফিজ

মোঃ আব্দুল লতিফ

শাহাদাতের কয়েক দিন পূর্বে এশার নামাজ পর তৎকালীন শিবিরের শের-ই-বাংলা হলের সভাপতি আজম মনিরুল ইসলাম মুকুল ভাই ভর্তিচ্ছুক ভাইদেরকে বিভিন্ন রুমে ভাগ করে দিলেন। মুকুল ভাই বললেন - লতিফ ভাই, আপনি পাতলা মানুষ, মুস্তাফিজ ভাইও হালকা-পাতলা । দুইজনে ভাল মিলবে। আমি বললাম, আলহামদুলিল্ল্লাহ! আমার বড় লেপ আছে অসুবিধা নাই। মুস্তাফিজ ভাই পূর্বে থেকে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। উনার একটি কোর্ট ফাইল ভর্তি ছিল ডাক্তারের দেয়া ব্যবস'াপত্র আর পরীক্ষা নিরীক্ষার বিভিন্ন কাগজ পত্র। ফজরের আজান হলেই উনি রুমের সবাইকে নামাজের জন্য ডেকে তুলতেন। নামাজ পড়েই সকালে প্রাতঃভ্রমণে বের হতেন। ভ্রমণ করে এসেই রুমের মেঝেতে একেবারে হাত পা ছেড়ে দিয়ে খালি মাথায় চিৎ হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতেন প্রায় ১৫/২০ মিনিট। আমি একদিন উনার নাকে হাত দিয়ে বললাম, কী ব্যাপার মুস্তাফিজ ভাই মারা গেলেন নাকি? উনি চোখ মেলে হেসে জবাব দিলেন আমি এভাবে মরবো? আমার মুত্যু হবে শাহাদাতের মৃত্যু। ইন্‌শাআল্ল্লাহ !
আমি বিভিন্ন শহীদের এ ধরনের উক্তি দায়িত্বশীল ভাইদের কাছ থেকে শুনে বিশ্বাস করতে পারতামনা। মনে করতাম জজবা বাড়ানোর জন্যই এই সকল বক্তৃতা। কিন' না, মুস্তাফিজ ভাই আগেই শাহাদাতের কথা বলে আমার সেই ভুল ভেঙ্গে দিয়েছেন। ভর্তির কাজ চলছে মুস্তাফিজ ভাইয়ের। এদিকে প্রথম বর্ষ ভর্তির ফরম ও বিতরণ চলছে। আমরা থাকতাম ক্যাম্পাসের একেবারে কাছের হল শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের পশ্চিম ৬নং রুমে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য ভর্তি গাইড আমার রুমেই রাখা হতো আবার বিক্রি শেষে রুমে নিয়ে আসা হত। আমি ব্যাংকের সামনে ভর্তি গাইড কনটেস্ট বিক্রি করছি।
মুস্তাফিজ ভাই এসে বললেন, লতিফ ভাই আজকে তো বৃহস্পতিবার। হাফ অফিস তাই ভর্তির টাকা জমা দিতে পারলাম না। তাছাড়া সকল কাজ কমপ্ল্লিট। ভর্তিটা কমপ্ল্লিট হলেই বাড়ি যেতে পারতাম। আমি বললাম, আগামীকাল ৫ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ অতএব, আপনি বাড়ি চলে যান আমি আপনার ভর্তির টাকা জমা দেব।
মুস্তাফিজ ভাই বললেন, ৫ ফেব্রুয়ারীর পরেই তো ৬ ফেব্রুয়ারী। প্রাণপ্রিয় কাফেলার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। কোন দিন তো দেখিনি আপনারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করেন। আর কোন দিন দেখতে পাব কিনা দেখেই যাই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ৭ তারিখে যাওয়া যাবে। উনি আর গেলেন না সেদিন। ৬ ফেব্রুয়ারী সকালে দুইজন মিলে খিচুড়ী রান্না করে খেলাম। আমি রিক্সায় করে গাইড নিয়ে আসলাম ব্যাংকের সামনে। মুস্তাফিজ ভাই বললেন, প্রথমে তো একটু বেশি ভীড় হবে আমি একটু পরেই যাব। আমি গাইড বিক্রি করছি। আরো ৮/১০ জন আছেন আমার সাথে। বেলা ১০-২৫ মিনিট। ছাত্রমৈত্রীর একটি মিছিল আমাদের সামনে দিয়ে গেল, তাদের শ্ল্লোগান ছিল, “আবার এলো ফেব্রুয়ারী, চল আমরা শিবির মারি।” সকলে চমকে উঠলেন হঠাৎ করে এমন শ্ল্লোগান কেন? ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিল করার কথা সকলের সেখানে তা বাদ দিয়ে শিবির মারার শ্ল্লোগান কেন? বলতেই আবার পর পর দুইটি মিছিল। একটি ছাত্র দলের, আর একটি জাসদ ছাত্রলীগের। সকলের মুখে একই শ্ল্লোগান। তখন মতিহার হলের সভাপতি হাবিব ভাই এসে বললেন, লতিফ ভাই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছে সাবধানে থাকবেন। আমি আসছি।
ইতোমধ্যে ভর্তির সকল কাজ শেষ করে শহীদ মুস্তাফিজ ভাই আমার কাছে এসে হাজির। তিনি বললেন, “আচ্ছা লতিফ ভাই সকলে একই শ্লোগান দিচ্ছে কি ব্যাপার? এরা কি শিবির মারার ইজারাদারী নিয়েছে? কে দিল এদের শিবির মারার ঠিকাদারী। কথা বলা উনার শেষ হয়নি। এমন সময় ১০-১৫ মিঃ গুলি আর বোমার শব্দে প্রকম্পিত হলো প্রশাসনিক ভবনের উত্তর ও পশ্চিম দিক। মুস্তাফিজ ভাই বললেন, চলেন আট জন আমরা আছি আল্ল্লাহর নাম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমি বললাম আপনি ক্যাম্পাসে নতুন আপনি কী জানেন? আমরা যদি সামনে পড়ি ওদের? তাহলে কী হবে? উনি বললেন, “আপনার জন্য যে গুলি বাজেট আছে তা আমার বুকে লাগবেনা আর আমার জন্য যেটা বাজেট আছে তা আপনাকে স্পর্শ করবেনা।” উপসি'ত ৬ জন বললেন, মুস্তাফিজ ভাইয়ের কথা ঠিক আছে তবে আন্দাজে ওদের সামনে খালি হাতে পড়ে বোকামী ছাড়া আর অন্য কিছুই হবে না। শেষে আমরা বিনোদপুর চলে আসলাম।
আব্দুল জব্বার ভাই তখন বিনোদপুর এলাকার সভাপতি। উনি আমাদের সাথে আরো কয়েক জনকে মুস্তাফিজ ভাই সহ পাঠিয়ে দিলেন। আমরা আমীর আলী হলের পেছন দিয়ে জোহা হলের সামনে গেলাম তখন সেখানে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে। এক পর্যায়ে ওরা আমাদের জোহা হল দখল করে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিল। তখন কিন' শহীদ রবিউল ভাইয়ের লাশ জোহা হলের গেস্ট রুমে। বেলা প্রায় দুইটা। মুস্তাফিজ ভাই আজান দিলেন। লতিফ হলের পেছনের মাঠে আমরা নামাজ পড়ে আবার জোহা হল পুনরুদ্ধার করলাম। সোহরাওয়ার্দী, মাদার বক্স পার হয়ে হবিবুর রমান হলের সামনে চারা গাছের গোড়া থেকে ইট ভেঙ্গে সামনে অগ্রসর হতে লাগলেন মুস্তাফিজ ভাই। সবার চাইতে দুর্বল রোগা মানুষ। সেই দুর্বল মানুষটিই বীরের মত শুধু সামনেই চলছেন আমাদের কাছ থেকে। একাই প্রায় ৩০/৪০ হাত দূরে ওদের গুলির জবাবে ইট ছুঁড়ছেন। এমন সময় ঘাতকের একটি বুলেট তার কপালে এসে লাগলো। পড়ে গেলেন তিনি। আমরা গুলিবৃষ্টির কারণে একটু পিছু হটলাম। তখন ওরা মুস্তাফিজ ভাইয়ের লাশ নিয়ে চলে গেল। সংঘর্ষ শেষে ওদের নেতারা মুস্তাফিজ ভাইকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করলো, যেহেতু লাশ ওদের দখলে ছিল। কিন' যখন তারা মুস্তাফিজ ভাইয়ের নাম ঠিকানা সহ কোন তথ্য পেলনা তখন শিবিরের বহিরাগত সন্ত্রাসী বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। ওদিকে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান ভাই খুঁজছেন, কে জানে মুস্তাফিজ ভাই ভর্তি হয়েছেন আর তার প্রমাণাদি। এমন সময় আমি তাঁর ভর্তির প্রমাণাদি নিয়ে হাজির। এমন কাছে থেকে শহীদ মুস্তাফিজকে দেখে আমার মনে হয়েছে সত্যিই শাহাদাতের মৃত্যু সবার নসীবে হয় না।
(লেখকঃ সাবেক সভাপতি, বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)

কোন মন্তব্য নেই: