পৃথিবীতে এমন কয়েকজন অসাধারণ মানুষ জন্ম নিয়েছেন যাঁরা মানবজাতির চিরন্তন গৌরব, যাঁরা আদর্শ মানুষের প্রতীক তথা মানবতা ও মনুষ্যত্বের পূর্ণতার মডেল। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে জন্ম না নিলে আদর্শের দিক থেকে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করতো ব্যাপক অপূর্ণতা এবং আদর্শিক শূণ্যতা ও আধ্যাত্মিক অপূর্ণতার অশেষ ঘূর্ণাবর্তে মানবজাতি হতো বিভ্রান্ত, ফলে মানুষ কাঙ্ক্ষিত উন্নতির সোপান থেকে চিরকালের জন্য থাকতো পিছিয়ে। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যে তিনি এমন কয়েকজন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাঁরা মানুষের জন্য সব ধরনের পূর্ণতা ও উন্নতির আদর্শ। নবী-নন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা জাহরা (সাঃ) সেইসব অসাধারণ মানুষেরই একজন। এটা স্বাভাবিক যে এ ধরনের মানুষের অকাল বিদায় বা বিয়োগ-বিধুর শাহাদত শোকের সাহারায় সৃষ্টি করে অনন্ত মাতম। শোকের এই অনন্ত মাতমে একদিকে যেমন তাঁদের প্রতি খোদাভীরু মানুষের শ্রদ্ধা ও গভীর ভালবাসা বিধৃত হয়, তেমনি শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঐসব মহান ব্যক্তিত্বের আদর্শ এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও সুদৃঢ় করা সম্ভব হয়।
হযরত ফাতেমা জাহরা (সাঃ) ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ অনেক মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। আর এ জন্যেই তাঁর উপাধি ছিল আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠ, আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত, আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র, আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আয যাকিয়া বা সতী, আয জাহরা বা দ্যূতিময় প্রভৃতি। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবী (সাঃ)'র সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা (সাঃ)'র অন্য একটি নাম উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁকে সকল যুগের নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণে তাঁকে দেখলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ফাতেমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতেমাকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়। হযরত ফাতিমা (সাঃ) বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী- সাঃ উল্লেখ করেছেন।
হযরত ফাতেমা জাহরা (সাঃ) ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ অনেক মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। আর এ জন্যেই তাঁর উপাধি ছিল আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠ, আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত, আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র, আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আয যাকিয়া বা সতী, আয জাহরা বা দ্যূতিময় প্রভৃতি। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবী (সাঃ)'র সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা (সাঃ)'র অন্য একটি নাম উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁকে সকল যুগের নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণে তাঁকে দেখলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ফাতেমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতেমাকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়। হযরত ফাতিমা (সাঃ) বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী- সাঃ উল্লেখ করেছেন।
অনেক ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী পবিত্র কোরআনের সূরা কাওসার-এ উল্লেখিত কাওসার বলতে হযরত ফাতেমা (সাঃ)কেই বোঝানো হয়েছে। মক্কার কাফের ও মুশরিকরা যখন বিশ্বনবী (সাঃ)কে আবতার বা নির্বংশ বলে উপহাস করতো, এবং রাসূলের ওফাতের পরই তার ধর্ম শেষ হয়ে যাবে বলে প্রচার করতো তখন এই সূরা নাজেল হয়। এ সূরায় কাফেররাই নির্বংশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ফাতিমা (সাঃ)'র মাধ্যমে রাসূলে পাক (সাঃ)'র বংশধারা আজো অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে নির্মূল হয়ে গেছে আবু লাহাব ও আবু জাহেলদের বংশধর।
হযরত ফাতিমা (সাঃ) ছিলেন বিশ্বনবী (সাঃ) 'র আহলে বাইত বা পবিত্র বংশধারায় জন্ম নেয়া মুসলমানদের ১১ জন ইমামের জননী। বিশ্বনবী (সাঃ) ও স্বামী আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ)'র পর এই ১১ জনই ইসলামকে সব সংকট ও দূর্যোগের কবল থেকে রক্ষার তরী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। এরই প্রমাণ দেখা যায় কারবালায় তাঁর পুত্র হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ)ও এর আগে হযরত ইমাম হাসান (আঃ)'র নজিরবিহীন আত্মত্যাগে। মুসলমানদের নেতা হিসেবে ও বেহেশতী যুবকদের সর্দার হিসেবে এই দুই মহাপুরুষকে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন হযরত ফাতেমা (সাঃ)। বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁদেরকে নিজ সন্তান বলে উল্লেখ করতেন।
একজন পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ হিসেবে হযরত ফাতিমা(সাঃ)এটা প্রমাণ করেছেন যে,পরিপূর্ণতার শিখরে ওঠার জন্য নারী হওয়া বা পুরুষ হওয়া জরুরী কোনো শর্ত নয়। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন এমন এক যুগে যখন আরবরা নারীকে মনে করতো কেবল ভোগের সামগ্রী এবং জাত্যাভিমানী আরবদের ঘরে কণ্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে তারা অমর্যাদার ভয়ে কণ্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত বা গোপনে মেরে ফেলতো । কিন্তু মহান আল্লাহ তার সর্বশেষ রাসূল ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের ঘরে একজন কন্যা সন্তান পাঠিয়ে নারী জাতির জন্য অশেষ সম্মান ও মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন।
হযরত ফাতিমা (সাঃ)ছিলেন একজন আদর্শ জননী,একজন আদর্শ স্ত্রী বা গৃহিনী,একজন আদর্শ সমাজ-সেবিকা। অর্থাৎ মুসলিম নারী যে শালীনতা বজায় রেখে জীবনের সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তাঁর দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন নবী-নন্দিনী। আজকের যুগে যেসব মহিলা বা বুদ্ধিজীবী নারী-মুক্তির কথা ভাবছেন তাদের জন্য প্রকৃত আদর্শ হওয়া উচিত হযরত ফাতিমা (সাঃ)।
হযরত ফাতিমা (সাঃ)ছিলেন একজন আদর্শ জননী,একজন আদর্শ স্ত্রী বা গৃহিনী,একজন আদর্শ সমাজ-সেবিকা। অর্থাৎ মুসলিম নারী যে শালীনতা বজায় রেখে জীবনের সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তাঁর দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন নবী-নন্দিনী। আজকের যুগে যেসব মহিলা বা বুদ্ধিজীবী নারী-মুক্তির কথা ভাবছেন তাদের জন্য প্রকৃত আদর্শ হওয়া উচিত হযরত ফাতিমা (সাঃ)।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র ওফাতের পর খুব বেশি দিন বাঁচেন নি হযরত ফাতিমা (সাঃ)। এ সময় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও বাণীকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য অসম-সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন নবী-নন্দিনী। বিশ্বনবী (সাঃ)'র ওসিয়ত প্রচার এবং কিভাবে মুসলমানরা বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পাবে তা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে মনে করেন অনেক মুসলমান বিশেষজ্ঞ,ঐতিহাসিক ও আলেম। তাদের মতে, ঐসব নির্যাতনের কারণেই তাঁকে অকালে শাহাদত বরণ করতে হয়েছে। এমনকি অনেকে মনে করেন, তাঁর কবরও অবমাননার শিকার হতে পারে এমন আশঙ্কায় তিনি তাকে গোপনে গভীর রাতে দাফন করতে বলেছিলেন স্বামী আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ)কে। আজো সকল শ্রেষ্ঠ গুণে গুণান্বিত এই মহিয়সী ও নীর্ভিক সংগ্রামী নারীর কবর অচিহ্নিত। অন্যদিকে অন্য অনেক মুসলমান মনে করেন, রাসূল (সাঃ)'র বিয়োগ-ব্যথায় শোকাকুল হযরত ফাতিমা (সাঃ) স্বাভাবিকভাবেই মারা গিয়েছিলেন এবং তিনি কারো নির্যাতনের কারণে মারা যান নি। যাই হোক্, হযরত ফাতিমা (সাঃ) মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মুক্তির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। তাই মুক্তিকামী মুসলমানরা আজও কেবল তাঁর পবিত্র নাম স্মরণ করেই ইসলামের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করেন না।
হযরত ফাতিমা (সাঃ)'র সান্নিধ্য ও সেবা না পেলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ)'র জীবনও পুরোপুরি বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করতো না। তাঁরা ছিলেন একে-অপরের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হযরত ফাতিমা (সাঃ)-কে মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতা বলেও প্রশংসা করেছেন। তিনি বলতেন,আমি যখনই বেহেশতের সুবাস পেতে চাইতাম তখনই কণ্যা ফাতেমার ঘ্রাণ নেই। রাসূল (সাঃ)একবার প্রাণপ্রিয় কণ্যাকে বলেছিলেন, হে ফাতেমা! আল্লাহ তোমাকে নির্বাচিত করেছেন, তোমাকে পরিপূর্ণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সজ্জিত করেছেন এবং তোমাকে বিশ্বের নারীকূলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
হযরত ইমাম হাসান মুজতাবা (আঃ)থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, একবার শুক্রবার রাতে দেখলাম মা ফাতিমা (সাঃ)এবাদতে মগ্ন। একটানা রূকু ও আর সেজদায় থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে উঠলো। আমি শুনতে পেলাম তিনি মুমিন নারী ও পুরুষের জন্য অনেক দোয়া করছেন,কিন্তু নিজের জন্য কোনো দোয়াই করলেন না। আমি প্রশ্ন করলাম, মা, আপনি কেন নিজের জন্য দোয়া করলেন না,যেভাবে অন্যরা দোয়া করে থাকে?তিনি জবাবে বললেন, হে আমার পুত্র! আগে প্রতিবেশির কথা ভাবতে হবে, এরপর নিজের ঘরের কথা ... ।
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরীব-দূঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (সাঃ)'র একটি বড় বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ বা কারো উদ্দেশ্যে যে কোনো বক্তব্য রাখার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা খুব সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে আল্লাহর প্রশংসা করা ছিল তাঁর অন্য একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (সাঃ)'র আহলে বাইতের অন্য সদস্যদের মত তিনিও কখনও অন্যায়ের সাথে আপোস করেন নি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা বা সক্রিয় থাকার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন আনন্দ। হযরত ফাতিমা (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থণা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই।
হযরত ফাতিমা জাহরা (সাঃ)'র আরেকটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে এবং তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণের তৌফিক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানিয়ে শেষ করবো আজকের এই আলোচনা। নবী-নন্দিনী (সাঃ)বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সাঃ)র চেহারার দিকে তাকানো এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত। পবিত্র কোরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। #
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন