মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১১

জামায়াত,শিবির কি ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বন্দী ?



আমার জন্ম স্বাধীনতার অনেক পরে। স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদানের কোন সুযোগ আমার হয়নি, দেখার সুযোগও হয়নি, তাই এ যুদ্ধ নিয়ে বড় বড় মন্তব্য করার ধৃষ্টতাও আমার নেই। আসলে সময়ই সব কিছুর প্রকৃত সাক্ষী। কে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, কে রাজাকার, কে সত্যের সৈনিক, কে অসুরের দোসর তা সঠিক ভাবে নিরুপনের সময় আমার মনে হয় আমরা পার করে এসেছি। এখন আমরা এ নিয়ে যতই গবেষণা করিনা কেন সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আমাদের ইতিহাস হচ্ছে আমরা অতীত নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের পান্ডিত্য জাহির করতে ভালোবাসি। কিন্তু আমার মনে হয় আমরা যারা তরুন তাদের বর্তমান নিয়ে বেশি ভাবা উচিত। বর্তমানে কারা দেশের উন্নয়নে অন্তরায়, কারা অশান্তি সৃষ্টিকারী তাদেরকে চিহ্নিত করা। অতীতের রাজাকারদের আমরা স্পষ্ট করে, সঠিকভাবে নাও চিনতে পারি কিন্তু বর্তমানে যে বা যারা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করবে তাদেরকে তো আমরা ইচ্ছে করলেই চিনতে পারবো।

অবশ্যই একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদারদের এদেশীয় সহযোগী ছিল, অবশ্যই অনেকে হত্যা নির্যাতন আর লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল একাত্তরে, কিন্তু সে দায় এখন কোন বাছ-বিচার ছাড়াই, কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়াই যদি জামাত-শিবিরের দু’কোটি কর্মী-সমর্থকের ঘাড়ে তুলে দেয়া হয়, প্রতি মুহূর্তে তাদের নির্মূলের হুমকি দেয়া হয়, চালানো হয় যদি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, তবে তাকে মানবাধিকারের কোন ধারায় ফেলা যায় আমার বোধগম্য নয়। বিচারের নামে নিরপরাধ ব্যক্তিদেরকে ডান্ডাবেরী পরিয়ে সচেতন জনগনের নিকট পুরো বিচার ব্যবস্থা এখন একটি প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। ন্যায় বিচার আজ প্রতিহিংসার চার দেয়ালে ঘেরা এক আর্তনাদ। না-না চুপ! বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কোন কথা বলার সুযোগ নেই, আদালত অবমাননা হয় তাতে। তবুও মুখ বুজে সব কিছু মেনে নিলে নিজেকে গাধা মনে হয়, চোঁখবুজে সত্যকে যে আড়াল করা দায়। বিশ্বে মানবাধিকার লংঘন নতুন কিছু নয়। অথচ ন্যায় অন্যায়ের ভেদাভেদ না করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা কোন সভ্য সমাজেই স্বীকৃত নয়। সরকারের অনৈতিক হস্তক্ষেপে ন্যায়বিচার প্রতিনিয়ত ব্যহত হয় এদেশে। নিম্নআদালত থেকে সরকার বিরোধী কেউ সহজে জামিন পেয়েছে এমন ঘটনা ভাবা যায় না এখানে।

বাংলাদেশে যখনই স্বাধীনতা বিরোধী কিংবা জামাত শিবির ইস্যু আলোচিত হয় সাধারণ মানুষের চোঁখে ভেসে ওঠে একাত্তরের ভয়াল ছবি। পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টিভি জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে এতবেশী প্রচারণা চালিয়েছে যে যারা জামাত শিবির দেখেনি তাদের ধারণা হবে যে এদের প্রত্যেকের মাথায় দুটো করে শিং, মুখে সাপের মতো বিষাক্ত দাঁত, হাতে শকুনের মতো নখর রয়েছে। অথচ লোকমুখে জামাত শিবিরের যে ভয়ংকর গল্প তারা শোনেন, বাস্তবে তার সাথে মিল খুব কমই খুঁজে পান তারা। বরং যারা জামাত ও শিবিরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে পথে ঘাটে, জনসমুদ্রে, তাদের আচার আচরণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট সবকিছুই সাধারণ মানুষের কাছে উদ্ভট মনে হয়। অশ্রাব্য ভাষায় প্রতিনিয়ত গালাগাল করে যখন অন্যকে খারাপ প্রমাণে মরিয়া হয়ে ওঠে ওরা, ঠিক তখন এসব মুর্খ বিপ্লবীদেরকে কিছুতেই সাধারণ মানুষ ভালো লোক বলে ভুল করতে পারে না।


সর্বকালে এমনটিই ঘটেছে। যারা সত্যের পথে লড়ে, তাদের প্রতি পদে পদে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান আর অত্যাচার-নির্যাতনের বাধা। তবুও সত্য এগিয়ে চলে, আলোয় আলোয় ভরে ওঠে অন্ধকার ভূবন। সুতরাং,রাত এখন যথেষ্ট গভীর হয়েছে, ঘোর আধারে ঢেকে গেছে দেশ। এবার সময় হলো সুবেহ সাদেকের। এখন অপেক্ষা শুধু মুয়াজ্জিনের আজানের। আল্লাহু আকবর। আল্লাহু আকবর প্রতিদ্ধনির।

কোন মন্তব্য নেই: