রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১১

জালীমের জুলুম সইতে আমিও আছি প্রস্তুত



আমার প্রিয় একটি গানের কথা দিয়েই শুরু করলাম এভাবে! ''আমাকে যখন কেউ প্রশ্ন করে কেন বেছে নিলে এই পথ? কেন ডেকে নিলে বিপদ? জবাবে তখন বলি; মৃদু হেঁসে যাই চলি; বুকে মোর আছে হিম্মত''। সত্যিই তো, হিম্মত ছাড়া কি আর এই পথে চলা যায় যায়না। এই পথে চলতে যে চাই অনেক অ-নে-ক হিম্মত। কারন, এই পথের প্রতিটি মড়ে মড়েই যে আবু জেহেলরা পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা নানা ভাবে নানা রকম 'প্রশ্ন' করবে। নানাবিধ অপপ্রচার চালাবে তাইবলে সেই প্রশ্নের জবাব দেয়া রাসূল প্রেমিকদের কাজ নয়; তাতে যে গন্তব্য পৌছতে অনেক বিলম্ব ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে মুসলিম জাতি দোর্দান্ত প্রতাপের সাথে রাজনীতির ঘোড়া দাবড়িয়ে বেরিয়েছে চতুর্দিকে, যাদের নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হয়রত মুহাম্মাদ (সাঃ) রাজনীতিকে রাঙিয়েছেন আদর্শিক রঙে, নিজে নেতৃত্ব দিয়েছেন সত্যের সমরে। ইসলামের সূর্য যখন পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়তে শুরু করে; তখন তাঁরই অনুসারীরা ইসলামে 'রাজনীতি' হারাম বলে ফতোয়া দিয়ে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে মসজিদের কোনে খিল এটে ইসলামকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। কুরআনকে ঝাড়ফুঁক বা তাবিজ হিসেবে ভুত তাড়ানোর জন্য কিংবা রোগব্যাধি সাড়াতে ব্যবহার করে। সেই কুরআনকে গেলাফের কারাগার থেকে মুক্ত করে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে চলার সুযোগ দিতে হলে। ইসলামকে শুধুমাত্র মসজিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে; সমাজের রন্ধে রন্ধে যে অসুখ দানা বেঁধেছে 'ইসলামকে' সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে সেই অসুখের মূলোচ্ছেদ করার সংগ্রামে; যারা নিজেদের আত্মাকে বিলিয়ে দিয়েছে; তাদের প্রতিটি পদে পদেই তো থাকবে বিপদ। বিপদ তাদেরকে হায়েনার মত হানা দিবে এটাইতো স্বাবাভিক। পায়ের তালুতে কাঁটার জর্জরিত আঘাত দেখেও যারা হেঁসে হেঁসে এই পথ মাড়ি দিয়ে চলে; তারাইতো প্রকৃত হিম্মতের অধীকারী


'অধ্যাপক গোলাম আযম' তেমনি হিম্মতের অধীকারী একজন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত যেই মানুষটি সবচেয়ে বেশী অন্যায় অপপ্রচারের স্বীকারে পরিনত হয়েছিলেন তিনিই হচ্ছেন, এই 'অধ্যাপক গোলাম আযম'। অশ্রাব্য ভাষায় যাকে নিয়ে এত গালাগালি, তিনি কিন্তু ঠিকই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন তার বিনম্র ব্যবহারে। যিনি তার পুরো জীবনেই হাঁজারো অপপ্রচার, হিংসা,বিদ্ধেষকে ধুলায় মাড়িয়ে বিনয়াবনচিত্তে হেঁটে চলেছেন; তার আদর্শের পথ ধরে। তাকে নিয়ে যারা বিষোদ্গার করে পথে ঘাটে, জনসমুদ্রে, বরং তাদের আচার আচরণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট সবকিছুই সাধারণ মানুষের কাছে উদ্ভট মনে হয়। আর সেই উদ্ভট মানুষ গুলোই; এখন তাকে নিয়ে আবার নতুন খেলায় মেতেছে। মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের নামে ওরা মানবতা লঙ্গনের সকল আয়োজন প্রায় সমাপ্ত করেছে। কোন বাছ-বিছার কিংবা কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমান ছাড়াই যদি প্রতি মুহূর্তে কাউকে নির্মূলের হুমকি দেয়া হয়। তবে তাকে মানবাধিকারের কোন ধারায় ফেলা যায় আমার বোধগম্য নয়। আবার বিচার ব্যবস্থা নিয়েও কোন কথা বলা যাবেনা। খবরদার! তাতে যে আদালত অবমাননা হয়। কিন্তু চোঁখ বুজে কিভাবে সব মেনে নেই ? তাতে যে নিজেকে গাধা মনে হয়। চোঁখ বুজে কি আর সত্যকে আড়াল করা যায়?

এই বিজয়ের মাসেই নাকি ওরা পরিকল্পিত ভাবে; বিচারের নামে অবিচারের হাতকড়া নিয়ে দাঁড়াবে তার দরজায়। তাই যে কোন মুহূর্তেই গ্রেফতার হতে পারেন 'অধ্যাপক গোলাম আযম'। তার ভাষায় 'জেলখানা নামক পরীক্ষাগারে যেতে 'বিছানা-পত্র নিয়ে তিনিও প্রস্তুত রয়েছেন'। সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছেঃ আপনিতো যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারেন; এই ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে? উনার সহজ উত্তরঃ 'জুলুম করলে জুলুম সহ্য করতে হবে; আর কি করবো'! বৃদ্ধবয়ষী এই মানুষটির এত হিম্মত দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়ে যাই! এজন্যই তো বলা হয়। ''আত্মা যদি হয় ঈমানের বলে দৃপ্ত, আল্লাহর পথে মরেও সে হয় তৃপ্ত। আর মরণ! সে তো সূর্যদয়ের চেয়েও ঢের সত্য। মৃত্যুকে জয় করে অজেয় অমর হয়েছেন যারা, তারাই ঈমানের কঠোর প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ''

প্রশিক্ষণে কারাগারের চেয়ে উপযুক্ত ক্যাম্প আর আছে কি কোথাও? আল্লাহর সৈনিকদের কাঙ্খিত সে সময় মিলে যায় শত্রুর অভিযানে। নিশ্চিন্ত সময় সেখানে, আল্লাহ বিরোধী নাস্তিকদের নীপিড়নে এবাদতে অনুপযোগী আজ মসজিদ মাদরাসা। প্রাণ খুলে যায় না পড়া নামাজ, যায় না করা শব্বেদারী। কারাগারে আজ কে দেবে বাধা আল্লাহর গুণগানে? কেঁদে কেঁদে প্রভুর দরবারে ধর্ণা দেয়ায় বাধা দেয়ার শক্তি যে নেই কারো। তাহলে কিসের ভয় আল্লাহর সৈনিকের, সর্বকালে এমনটিই ঘটেছে। যারা সত্যের পথে লড়ে, তাদের প্রতি পদে পদে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান আর অত্যাচার-নির্যাতনের বাধা। যুলুম, শোষণ, নির্যাতন!!! আরে , নির্যাতন ছাড়া জান্নাতের সুবাতাস পেয়েছে কবে কোন কালে, কতজন সৌভাগ্যবান? ভয় কি তবে তোমার, দৃঢ় শপথে এগিয়ে চল, মাথা উঁচু করে ঢুকে পড়ো জেলখানা নামের পরীক্ষার হলে, বুক ফুলিয়ে বরণ করে নাও সকল নির্যাতন। জেনে রাখ, তোমাদের বরণ করার অপেক্ষায় পৃথিবীর সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মানবেরা, যাদের হৃদয় কানায় কানায় পূর্ণ ভালোবাসায়। এভাবেই সত্য এগিয়ে চলে, আর আলোয় আলোয় ভরে ওঠে অন্ধকার ভূবন।
সাংবাদিকের সাথে অধ্যাপক গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার
http://www.sonarbangladesh.com/blog/sharif/80271

কোন মন্তব্য নেই: