বিচারের নামে বাংলাদেশে যে কত কুৎসিত অভিনয় হতে পারে এবং সরকার
যে কতটা প্রতিহিংসা পরায়ণ হতে পারে সেটিই এখন বিশ্ববাসী দেখছে। যে কোন আবিস্কারে মেধা
লাগে। যে কোন খেলায় কৃতিত্ব দেখাতে প্রতিভা লাগে। কিন্তু কুৎসিত অভিনয়ে সে প্রতিভা
লাগে না। বাংলাদেশের সরকার আজ সে কুৎসিত পথেই পা বাড়িয়েছে।এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে
প্রচণ্ড উত্তপ্ত হাওয়া বইছে। যুদ্ধ যুদ্ধ ভাবই শুধু নয়,বরং যুদ্ধ শুরুও হয়ে গেছে। সরকার বিরোধীদের নির্মূলে ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগ একা নয়,বরং ময়দানে নেমেছে
এক ধরনের তরুন একাত্ররের চেতনার নামে যাদের জেগে উঠেছে মহা তারন্য। আমিও একজন তরুণ
হিসেবে তাদের এই তারন্যর অংশীদার হতে পারতাম কিন্তু কেন জানি বিবেকটা বারবার বাধা হয়ে
দাঁড়াচ্ছে ! ইসলামে শুধু দেহ-হত্যাই পাপ নয়,জঘন্য পাপ হলো বিবেক-হত্যা ও ঈমান হত্যা। জাতি কখনো হাসপাতাল,কলকারখানা বা ক্ষেতে খামারে মারা যায় না। মারা যায় চেতনার ময়দানে।
জাতির বেঁচে থাকার চুড়ান্ত যুদ্ধটি হয় মূলত চেতনার এ রণাঙ্গনে। উদ্ভিদ বা পশুকুল থেকে
মানুষের বাঁচাটি এজন্যই ভিন্নতর।
আজকে সত্যিকারভাবে
শাহবাগের এই তরুনরা যদি বলতো ,দেশকে যারা লুটেপুটে
খাচ্ছে আমরা তাদেরও বিচার চাই, সকল গুম হত্যার বিচার
চাই। কুইক রেন্টাল, পদ্মা সেতূ, শেয়ার বাজার , হলমার্ক কেলেঙ্কারি, সাগর-রুনি হত্যা ও বিশ্বজিৎ হত্যাসহ সকল হত্যাকারী হোতাদের ফাঁসি চাওয়া হতো! যদি
বলা হতো যুদ্ধাপরাধিদের বিচার রাজনৈতিক প্রহসনমুক্ত হতে হবে। যদি সকল যুদ্ধাপরাধিদের বিচার চাওয়া হতো! মাত্র সাত-আটজন ব্যাক্তিই কি পুরো বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধি কিংবা
মানবতাবিরুধী? ক্ষমতাসীন দলের যারা যুদ্ধাপরাধি তাদের
বিচার কেন চাওয়া হচ্ছেনা? তাহলে কি বলবো শুধুমাত্র
একটি দলের বিরুদ্ধেই তাদের সকল চেতনা জেগে উঠলো!! বর্তমান ট্রাইবুনাল বিভিন্ন মহল থেকে
সম্পুর্ণ বিতর্কিত হওয়ার পরও শাহবাগের এই তারন্য কেন বলছেনা যে, আন্তর্জাতিক মান ও সকল মহলের গ্রহন যোগ্যতার ভিত্তিতে সকল যুদ্ধাপরাধি
ও মানবতাবিরুধী অপরাধীদের বিচার করা হোক! যদি এমনটি হতো, তাহলে একজন টগবগে তরুন হিসেবে আমার তারন্যের চেতনার সবটুকু তাদের
সাথে থাকতো; কিন্তু তা না করে তারা একটি বিতর্কিত
ট্রাইবুনালের মিথ্যা রায়কে; আরো একধাপ এগিয়ে
ফাঁসিই দিতে হবে (যদিও তারা অপরাধী না হয়ে থাকে) সেই মিথ্যাটাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
করবার কাজে চেতনার যে অবক্ষয় করছেন; তাতে আমি কোন ভাবেই সমর্থন করতে পারিনা। আমার তারন্যের চেতনা বলে আমিও যুদ্ধাপরাধিদের বিচার চাই তবে সেটা বিবেকের কাঠগড়ায়
দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ সচেতনার সাথে; কোনভাবেই চেতনার
নামে অচেতন হয়ে নয়!
দুর্বৃত্তি,সন্ত্রাস ও ধোকাবাজী শুধু বাংলাদেশের রাজনীতি,প্রশাসন ও অর্থনীতিকেই গ্রাস করেনি,সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্তি হয়েছে দেশটির ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে। যেদেশের
রাজনীতি,প্রশাসন,বুদ্ধিবৃত্তি,শিক্ষাব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থার সবচেয়ে বড় কীর্তি হলো দেশটিকে
বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের মাঝে দুর্বৃত্তিতে পাঁচবার প্রথম স্থানে পৌঁছে দেয়া,সেদেশে ইতিহাস রচনায় সততা ও সুবিচার স্থান পাবে সেটি কি আশা
করা যায়?বরং ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলো অতি ভয়ংকর দুর্বৃত্তদের মিথ্যা কাহিনীতে
পূর্ণ হবে সেটিই কি কাঙ্খিত নয়? কারা একাত্তরে অস্ত্র হাতে ময়দানে ছিল সেটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ
নয়,কারা এখন আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রভু ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলে
এবং কারা শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চায় সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি চিত্রিত হচ্ছে মানবতাবিরোধী
অপরাধ রূপে। শাস্তিযোগ্য অপরাধ রূপে চিহ্নিত হচ্ছে ঘরে জিহাদ ও শরিয়তি বিধান বিষয়ক
বই রাখাটিও। এ অপরাধে অপরাধীদের তালিকায় তারা দিন দিন নতুন নাম যোগ করতে থাকবে। এবং
যাকে ইচ্ছা তাকে তারা কাঠগড়ায় তুলবে। আদালত এভাবে ব্যবহৃত নির্যাতনের হাতিয়ার রূপে।
একাত্তরে কারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল সেটিও ইসলামের বিপক্ষশক্তির কাছে গুরুত্বপূর্ণ
নয়। তাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোন সদস্যের বিচার নিয়েও তারা আগ্রহী নয়। বরং তারা দেখছে
কারা তাদের বর্তমান শত্রু। ফলে যে শিবির কর্মীটির জম্ম একাত্তরের দশ-বিশ বছর পর,তাকেও তারা হত্যাযোগ্য মনে করে। ফলে তাঁকে তারা নিষ্ঠুর ভাবে
নিহত করছে।
দেশে পুলিশ
বাহিনী রয়েছে, র্যাব আছ,সেনাবাহিনীও আছে। কিন্তু তাদের দ্বারা রাজনৈতীক শত্রু-নির্মূলের
এজেণ্ডাটি ইচ্ছামত পালিত না হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের
ময়দানে নামতে বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর প্রকাশ্য জনসভায় তাদের
প্রতি জামায়াত-শিবির নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো,নির্মূলের অর্থ কি? নির্মুলের অর্থ কাউকে আলিঙ্গণ বা চুম্বন করা নয়। বরং সেটি নিরেট হত্যা। এটি বুঝতে
কি বেশী বিদ্যাবু্দ্ধি লাগে? এতদিন দেশে মশামাছি
নির্মূলের অভিযান হতো। সে নির্মূলের অর্থ হতো কীটনাশক ঔষধ ছিটিয়ে মশামাছির হত্যা বা
বিনাশ। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীগণ আজ যখন নির্মূলের ঘোষণা দেন তখন দেশ থেকে মশামাছি নির্মূলের
কথা বুঝান না। বুঝান রাজনৈতীক শত্রু নির্মূলের। সাথে বাংলাদেশী সেক্যুলারিস্টরা ভারতীয়দের
সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলে। রাষ্ট্র নির্মানে ইসলামী চেতনার গুরুত্ব যেমন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য
নয়,তেমনি গ্রহণযোগ্য নয় ইসলামী শরিয়তের প্রতিষ্ঠাও। তাতে তাদের
রাজনীতি থাকে না। আর শরিয়ত প্রতিষ্ঠা পেলে তো তাদের মত অপরাধীদের স্থান হতে হয় কারাগারে
অথবা কবরস্থানে। কারন তাদের অপরাধ তো আল্লাহর
বিরুদ্ধে যুদ্ধের। তাই জনগণের চেতনা থেকে এবং
সে সাথে রাষ্ট্রকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর লক্ষ্যে; রাষ্ট্র ও তার প্রশাসনিক শক্তিকে তারা
পরিনত করেছে ইসলামি চেতনা নির্মূলের হাতিয়ারে।
নাস্তিকতার
সিমেন্ট দিয়ে তৈরি আওয়ামী লীগের দেয়াল এখন হেলে পড়েছে। এদেয়াল গুড়িয়ে দেয়ার এখনই সময়।
প্রয়োজন শুধু আরেকটি শক্ত ধাক্কার। ওরা যতই ষড়যন্ত্র করুকনা কেন; ইসলামী রাজনীতি বন্ধের দাবিতে যতই মুখে ফেনা তুলুক কিংবা ইসলামী
প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে ; কিছুটা এগুতে গিয়ে যদি ভাবে তারা সফল হতে যাচ্ছে; তবে ওদের বলে দিতে চাই, 'যে নীল নদে আল্লাহ ফেরাউনকে চুবিয়ে মেরেছেন; সেই নীল নদেই আল্লাহ আবার মূসাদের জন্য রাস্তা করে দিয়েছিলেন। একজন ইসলামের খাদেম
যিনি কোটি কোটি মানুষের অহংকার; সেই আল্লামা সাঈদীকে
নিয়ে যারা ষড়যন্ত্রের বীজ বুনছেন; মিথ্যা নাটক সাজিয়ে
তাকে ফাঁসি দিতে চাচ্ছেন। তারা ভুলে গেছেন সেই মূসার অনূসারীরা এখনো বাংলার জমীন থেকে
বিলীন হয়ে যায়নি। যাদের প্রতিটি রক্তকনা বদর আর ওহুদের কথা বলে; রাসূলের একটি আদর্শ বাস্তবায়নে ওরা হাঁসিমূখে জীবনটা বিলিয়ে
দিতে জানে। তাদের চোঁখের সামনে দিয়ে আল্লামা সাঈদীকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হবে আর
তারা নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকবে তা শুধুমাত্র আবু জেহেলরাই ভাবতে পারেন।
শাহবাগে
যারা একাত্তরের চেতনার নামে গান,বাজনা কিংবা নাছানাছি
করছেন। আপনার বিবেকটাকে একটিবার প্রশ্ন করে দেখেন আপনি কি আসলেই সত্যের পথে আছেন? কোন বিশেষ মহলের স্বার্থের ঝুলিতে আপনার এই তারন্য জমা হচ্ছেনাতো? একটু ভেবে দেখবেন! আর
যারা এই শাহবাগ নিয়ে শঙ্কিত তাদেরকে বলি এই শাহবাগটাই পুরো বাংলাদেশ নয়। আরো লক্ষ,লক্ষ তরুন মাথায় কাপন
বেঁধে প্রতিক্ষায় রয়েছে। জীবন যাদের কাছে হাঁসি মুখে বিলিয়ে দেবার একটি উপকরন ছাড়া
আর কিছুই নয়! শাহবাগে যারা আছেন তারা কয়জন সেই জীবন দিতে প্রস্তুত? শাহাদাতের সেই তামান্না নিয়ে আজ লক্ষ,লক্ষ জামায়াত-শিবিরের জন্ম হয়েছে; সেই জীবন গুলো যদি একবার জেগে উঠে তবে সেটা উত্তাল মহাসমুদ্রের
মতো ;
আর বাতিলের সকল ষড়যন্ত্র,তাদেরই তৈরি নাট্যমঞ্চ (শাহবাগ) ডিঙ্গি নৌকা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর উত্তাল মহাসমূদ্রে
ছোট ডিঙ্গি নৌকা কখনো ভাসানো যায়না!!!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন