“আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো ৷ এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে” তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও ৷ তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরণের লোকরাই হয় সত্যানুসারী”। সূরা বাকারা ১৫৫-১৫৭।
আল্লাহ যখন কাউকে ভালো বাসেন, কিংবা কারো দ্বারা কোন মহৎ কাজ করিয়ে নিতে চান, তবে তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলে ঈমানকে মজবুত করে নেন। আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি সোনা বের করার মতো পরিশুদ্ধির পরীক্ষা। আর যারা সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ ও নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী বলে আল্লাহকে মানে এবং আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল (সাঃ) দেখানো পথে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দিনকে কায়েম করতে চায় তাদের আন্দোলনের জন্য কঠিন পরীক্ষা অতি স্বাভাবিক ও নিয়মিত বিষয়। বলা যেতে পারে যে আন্দোলন আল্লাহর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে যত বেশী অত্যাচারিত নির্যাতিত হয় সে দলই আল্লাহর ততটাই নৈকট্য অর্জনকারী দল। আর কোন ইসলামী দলের কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম বিরোধী শক্তি যদি আবেগে বুকে টেনে নেয়, ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার জন্য অর্থ, জনবল তথা লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে সহায়তা করে তবে সে দলটি নামে ইসলামী হলেও প্রকৃতপক্ষে সাক্ষাৎ ইবলিশ শয়তানের দল।
জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে কায়েমের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ কাজে তাদেরকে প্রতিনিয়ত সয়ে যেতে হয় অপশক্তির যুলুম, নীপিড়ন, নির্যাতন। হুলুদ সাংবাদিকতা আর মিথ্যে অপবাদে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হয়েছে দলটি। মোটকথা জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করতে এমন কোন কুটকৌশল নেই যা প্রয়োগে ক্ষ্যান্ত হয়েছে শয়তানী শক্তি। তবুও জামায়াতের অগ্রযাত্রা চলছেই সাফল্যের সোনালী বন্দরের পানে।
বাংলাদেশের আকাশে ভয়ংকর শকুনের ছায়া। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। সীমান্তে পাখির মতো নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে দেশপ্রেমী নাগরিকদের। সীমান্তকে অরক্ষিত করতে পিলখানায় ঘটানো হয়েছে নারকীয় গণহত্যা। চলছে দেশবিরোধী একের পর এক দাসত্বের চুক্তি, চুক্তির বাস্তবায়ন। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে একের পর এক অচল করে দেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎপ্লান্ট, বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে শিল্প-কল-কারখানা। বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার পায়তারা চলছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ, সমুদ্র বন্দর। দেশের সীমান্তের বিভিন্ন প্রান্তের নদ-নদীতে বাধ দিয়ে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল মরুকরণ সম্পন্নপ্রায়, দেশের বাকী অংশটুকুও মরুভূমিতে পরিণত করতে চলছে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মান। আর এ সবকিছুই চলছে প্রতিবেশী দেশের আজ্ঞাবহ বাকশালী আওয়ামী সরকারের নেতৃত্বে।
দেশের ক্রান্তিলগ্নে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইসলাম ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী শক্তিই পারে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে। তাই প্রতিবেশী দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে, তাদের সকল দাবী দাওয়া পূরণে প্রধান বাধা হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করা সর্বাগ্রে জরুরী বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। তাই ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে ইসলামী মূল্যবোধে আঘাত হানার মতো হাস্যকর মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে দমনে যতই নির্যাতন করুর না কেন তাদের এটুকু বোঝা উচিত ছিল জুলুম নির্যাতনের সাথে সাথে জ্যামিতিক হারে বাড়ে জামায়াতের ঈমানী তেজ। আর সে তেজকে বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ আওয়ামী অপশক্তির হাতে জুলুম, নীপিড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমেই জামায়াতকে পরিশুদ্ধ করবেন। আর এভাবেই জামায়াতকে পরিশুদ্ধ করে হয়তো আল্লাহ তুলে দিতে চান কাধে ইসলামী বিপ্লবের সুমহান দায়িত্ব।
সামনে জামায়াতকেই দায়িত্বে নিতে হবে দেশের দুঃসময়ে। জামায়াতকেই জাগিয়ে তুলতে হবে পাশ্চাত্য নেশায় বুদ হয়ে থাকা দেশবাসীকে। জাগিয়ে তুলতে হবে ইসলাম বিরোধী সকল অপশক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। আর আগামীর দায়িত্ব নিতে জামায়াতকে অবশ্যই পরিশুদ্ধ হতে হবে, পরিশুদ্ধ হতে হবে দলের সর্ব পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্খীদের। আর সে পরিশুদ্ধির অগ্নিপরীক্ষাগারে আজ জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশের নীল আকাশে কালেমার পতাকা ওড়াবে যে নির্ভিত আল্লাহর সৈনিকেরা, তাদেরকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে আন্দোলনে। আর একথা কে না জানে, প্রতি বছর ছাত্রজীবন শেষে যে বিপুল জনশক্তি জীবিকার জন্য কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েন, তাদের জাগিয়ে তুলতে এরচেয়ে ভালো প্রশিক্ষণ আর নেই। ইসলামী আন্দোলনের যে বিশাল কর্মী বাহিনী বসে আছে দর্শক গ্যালারীতে, মাঠে নেমে পড়ার তাদের এইতো সময়।
আর কেন তবে বসে থাক তুমি বদরের প্রান্তরে,সামনে দাড়ায়ে আবু জেহেল, দাড়ায়ে বাকশাল, ঈমানের দৃপ্ত তেঁজে আজই রুখে দাড়াও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন