আল্লাহ। খুব ছোট একটি শব্দ। অথচ এই শব্দটি মানুষের জীবনে এনে দেয় বৈপ্লবিক পরির্বতন। কেউ আল্লাহকে বিশ্বাসী করেন, কেউ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চান স্রষ্ঠার অস্তিত্ব। আল্লাহকে বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস শক্তিশালী দুই মেরু। আল্লাহ আছেন, সারা বিশ্বকে তিনি সৃষ্টি করেছেন, সকল জীবের জীবন মরণ সবকিছুই তার আয়ত্বাধীন। কিন্তু সুস্পষ্ট কোন নিদর্শন দিয়ে এ বিশ্বাসকে প্রমাণ করা যায় না। আবার আল্লাহ বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই এ কথা বলা সহজ হলেও অকাট্য যুক্তি দিয়ে একে প্রমাণ করা অসম্ভব। অথচ আল্লাহকে বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস মানুষের জীবনে শক্তভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
একজন আস্তিক এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, বিশ্বাস করেন আল্লাহ তার সকল কাজকর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব নেবেন এবং পরিশেষে প্রতিটি কাজের যথোপযুক্ত বিচার পাবেন। তাই তার আচরণে সর্বদা একটা সতর্কভাব পরিলক্ষিত হয়, কোন অপরাধের জন্য দূনিয়ার শাস্তিকেই তিনি চুরান্ত মনে করেন না, তাই যে কোন কাজে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি কিংবা ক্রোধ সম্পর্কে সচেতন থাকেন।
অন্যদিকে যিনি কোন স্রষ্টায় বিশ্বাসী নন, তিনি ইহকালীন সকল কাজকর্মকে দূনিয়ার আইন দ্বারা বিচার করেন, পরকাল বলতে কোন জগতের অস্তিত্ব তার কাছে নেই বিধায় দুনিয়ার কোন অপরাধের জন্য তিনি পরকালীন শাস্তির ভয় করেন না। তাই তার আচরণে বেপরোয়া ভাব জেগে ওঠে। আর যদি ক্ষমতাধর হন তাহলে ইহকালীন শাস্তিকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পিছপা হন না।
যুগে যুগে যারা বিশ্বাসীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় তারা ছিলেন তৎকালীন সময়ে সর্বোত্তম অনুপম চরিত্রের মহামানব। এক একটি অন্ধকার পঙ্কিল পরিবেশে জন্ম হগ্রহণ করেছেন ঈসা (আঃ), মুসা (আঃ), মুহাম্মাদ (সঃ) সহ অগণিত নেতা যারা ঈমানের আলোকচ্ছটায় তাবৎ দুনিয়াকে আলোকিত করেছিলেন। তাদের নৈতিক উন্নত চরিত্র সবার কাছে সমানভাবে উজ্জল দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট ছিল। তাদের সুশীতল ছায়াতলে যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের চরিত্রও পূর্ববর্তী জীবনের থেকে ছিল একেবারেই ভিন্ন, পরশপাথরের স্পর্শে তারা হয়েছিলেন খাঁটি সোনা। ইতিহাসের পাতায় পাতায় তাদের নাম শ্রদ্ধাভরে লেখা রয়েছে।
অন্যদিকে যারা আল্লাহকে অস্বিকার করেন, তাদের চরিত্রে এমন ফুলেল শোখা দেখা যায় না। বিশেষ করে যারা অবিশ্বাসীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের সাথে বিশ্বাসীদের নেতাদের তুলনা করলে সুস্পষ্ট ব্যবধান ধরা পরে যা শিশু কিশোর পুরুষ মহিলা সবার কাছেই সমানভাবে স্পষ্ট।
এর যে কোন ব্যতিক্রম নেই তা নয় তবে ব্যতিক্রম কখনো বিবেচ্য বিষয় নয়। বিশ্বাসীদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা বিশ্বাসী বিশ্বাসী বলে চিৎকার করেন অথচ তাদের কাজ কর্মে অবিশ্বাসীদের আচরণ পরিলক্ষিত হয়, আবার এমন অনেক নাস্তিক রয়েছেন যাদের আচরণ আস্তিকের মতো। এর কারণ এই যে তারা তাদের স্ব স্ব বিশ্বাসের প্রতি আস্থাশীল নন। বিশ্বাসের তিনটি স্তর। মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং কাজে পরিণত করা। আল্লাহর কাছে সকল কাজের জবাবদিহি করতে হবে বলে একজন আস্তিক মৌখিক স্বীকৃতি দেন, অন্তরে এটি লালন করেন এবং এ অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা চালান। কিন্তু যদি কেউ আল্লাহকে মৌখিকভাবে স্বীকার করেন কিন্তু কাজে পরিণত না করেন, তবে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে তিনি আল্লাহকে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন নি, যাকে ইসলামী পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুনাফিকরা ঈমানের আমলী স্বীকৃতি তথা জামায়াতে নামাজ আদায় করতেন, যদিও তা ছিল লোক দেখানো, তাদের নামাজে প্রাণ থাকতো না, খুশুখুজু থাকতো না।
আল্লাহকে বিশ্বাস করা এত ব্যাপক বিষয় যে যিনি সত্যিকার অর্থেই আল্লাহকে বিশ্বাস করেন তার দ্বারা মানবজাতির কোন ক্ষতি সাধিত হতে পারে না, পারে না হতে কোন অন্যায়, অশ্লীলতা, জুলুম, রাহাজানি, হত্যা নির্যাতন। আল্লাহতে বিশ্বাস করার সাথে সাথে মানুষের জীবন হয়ে ওঠে মোহনীয়, যাবতীয় অন্যায় থেকে তিনি থাকেন পবিত্র, মানুষ ও জীবজন্তু, গাছপালা, তরুলতা তার অনিষ্ট থেকে থাকে নিরাপদ।
তাহলে এখন বিবেকের কাছে প্রশ্ন, কোন পথে যাবে তুমি, অবিশ্বাসীদের পথে, নাকি বিশ্বাসীদের পথে, যে পথে হেটে গেছেন শতাব্দীর সেরা সেরা মহামনাবেরা?