রবিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১১

মৃত্য কি?

মৃত্য কি? মৃত্যু নিয়ে আমি যত ভাবি ততই গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাই। কখনো মনে হয় মৃত্যু যাবতীয় দুঃখ, কষ্ট, বেদনা থেকে মুক্তি, আবার কখনো মনে হয় মৃত্যু মানেই নরক নামক সীমাহীন যন্ত্রনার হাতছানি।
অত্যাধুনিক বিভিন্ন সংজ্ঞার চাপে মৃত্যুর জান ওষ্ঠাগত। তবু মৃত্যুর এ সব সংজ্ঞা আমাকে কিছুতেই মৃত্যুর প্রকৃত চিত্র দেখাতে পারে না। বরং এসব রংচঙা সংজ্ঞাগুলোকে সর্বোচ্চ মৃত্যুর আলামত হিসেবে মেনে নেয়া যেতে পারে। মৃত্যু সম্পর্কে প্রাচীন সংজ্ঞাই তাই আমার কাছে গ্রহণীয় মনে হয়, “শরীর ও আত্মার বিচ্ছেদ ই মরণ”।
শরীর ও আত্মার বিচ্ছেদের সঠিক কোন আলামত আছে কি না জানা নেই। হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়া মানেই যে মৃত্যু নয় তা আজ বিজ্ঞান প্রমাণ করেছেন। তাহলে কখন একটি প্রাণী মৃত তা সঠিকভাবে বলা যাবে? আমার শরীরে যে কোটি কোটি কোষ রয়েছে আত্মা কি তাদের সবার ওপরই জালের মতো বিস্তার করে আছে? যখন মৃত্যু হয় তখন কি প্রতিটি কোষ থেকেই একে একে আত্মাকে বের করে ফেলা হয়, নাকি আত্মা নির্দিষ্ট কোন অংশে অবস্থান করে?
মৃত্যুর পরে কি হয়? আত্মা শরীরের পিঞ্জর থেকে মুক্তি পায় তা তো জানি, তবে এও জানি শরীর ধীরে ধীরে কীটের খাবারে পরিণত হয়, শেষে জৈবসার হিসেবে সঙ্গী হয় ফসলের। কিন্তু আত্মা তো অমর, শরীর থেকে মুক্তি পেয়ে সে কি ভেসে বেড়ায় ইথারে ইথারে নাকি সে খোজেঁ আরেকটি খোলস? মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞান নিশ্চুপ, যেটুকু জানা যায় তা কেবল ধর্মগ্রন্থের কল্যাণেই। তারও যদিওবা ভিন্নতা আছে তবুও ইহকালী যাবতীয় কাজের উপযুক্ত শাস্তি বা পুরস্কার আত্মা পায় সে সম্পর্কে ধর্মগ্রন্থগুলো প্রায় একমত। আর বিজ্ঞানের কথাই যদি বলি তবে “শক্তির ক্ষয় নেই, রূপান্তর আছে মাত্র” এই থিউরী বিশ্বাসী। আর প্রাণীকূলের এই যে আত্মা তা যে এক অদ্ভূত শক্তি তা কারো অবোধগম্য নয়। তাহলে মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞান নিশ্চুপ থাকলেও আত্মা নামের শক্তি যে মৃত্যুর পর শেষ হয়ে যায় না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
পূন্যবানের আত্মা মৃত্যুর পরে বেহেস্তবাসী হয় আর অধমদের আত্মা পায় নরকের শাস্তি, এ কথা ধর্ম বলে। ঠিক কিভাবে তা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু আমাকে যখন কেউ কথা দিয়ে আহত করে, তখন আমি বিষন্ন হই, কেউ ভালোবাসার কথা বললে যদি হৃদয়ে শিহরণ জাগে, তবে শরীরের পিঞ্জরমুক্ত আত্মা এ ধরণের আবেগ থেকে মুক্ত থাকে তাও নিশ্চিতভাবে বলা কি সম্ভব?
মৃত্যু যাই হোক বা মৃত্যু সম্পর্কে আমার যত কৌতুহলই হোক না কেন, মৃত্যুর স্বাদ যে নিতেই হবে তার চেয়ে ধ্রুবসত্য আর কি হতে পারে। তাই মরতেই হবে যখন তখন আস্তিত হই কিংবা নাস্তিক, কিংবা বিজ্ঞানের পুজারীই হই, আমাদের এমন কিছু কি করা উচিত নয় যা আমাদের আত্মাকে আনন্দে আন্দোলিত করবে, ভালোবাসায় শিক্ত করবে?
মনে করি আমি মরে গেলাম, তবে আমার মৃত্যুর পর আমার আত্মা কখন আন্দোলিত হবে সুখে? যখন আমাকে কেউ ভালোবেসে স্মরণ করবে, কিংবা আমার কোন সৎগুণের প্রশংসা করবে, কিংবা করবে আমার গুণকীর্তন, তখন নিশ্চয়ই আমার আত্মা নামের শক্তিটি পৃথিবী বা মহাকাশের যেখানেই থাকুক, সুখে বিভোর হবে। আবার আমার আত্মাকে যখন কেউ অভিষাপ দেবে, আমার নাম উচ্চারিত হলেই যখন মানুষের মন ঘৃণায় বিকৃত হবে, তখন কি আমার আত্মা নরক যন্ত্রণা পাবে না? আস্তিক হলে একে আমি স্বর্গ আর নরক বলে অভিহিত করতে পারি, আর নাস্তিক হলে আমার কি একবারও ভাবা উচিত নয় যে বিজ্ঞানের সূত্রানুযায়ী আত্মার এমন পরিণতি হওয়া অসম্ভব নয়?
তাহলে যদি মৃত্যু পরবর্তী আত্মাকে বিশ্বাস করতে হয় তাহলে তার সুখ আর শান্তির জন্য আমাদের এমন কিছু করা কি উচিত নয় যাতে মানুষের হৃদয়ে মন্দিরে ভালোবাসার আসনটি পাকাপোক্ত করা যায়।মানুষের কল্যাণে নিজেকে এমনভাবে বিলিয়ে দেয়া কি আমাদের উচিত নয় যাতে মৃত্যুর পরও যুগযুগান্তর আমাদের আত্মা জলকেলী করে বেড়াবে মানুষের ভালোবাসার স্বচ্ছ সরবরে? অন্তত আমাদের এটুকু করাতো উচিত যাতে কেউ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করুক বা নাই করুন আমার নামটি উচ্চারিত হলে যেন মানুষ ভ্রুকুঞ্চিত না করে। আসুন না আমরা শপথ নেই, সত্য সুন্দর আর মানবতার কল্যাণে জীবণের শেষ বিন্দু পর্যন্ত উৎসর্গ করে আত্মার শান্তি নিশ্চিত করবো। সবার আত্মা শান্তি পাক, আমীন।