মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, কে যাবে বেহেস্তে? মুসলিমদের ধারণা কেবল মুসলমানরাই বেহেস্তে যাবে, খৃষ্টানদের ধারণা, তারা ছাড়া আর কেউ যাবেন না বেহেস্তে, ইহুদীর বেলায়ও একই কথা। পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারা ৬২ নম্বর আয়াতে এ প্রশ্নের মীমাংসায় ইংগিত আছে। তবে আয়াতটার সঠিক অর্থ পাওয়া যায় না। একেকটি তাফসিরে একেক অর্থ। আয়াতে তিনটি শর্তের বিনিময়ে জান্নাতে স্থান দেয়ার ঘোষণা আছে, এক) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, দুই) আখেরাতের প্রতি ইমান আনা তিন) আমলে সলেহ করা, ইহুদী, খৃস্টান, সাবেয়ি কিংবা মুসলমান যেই হোক না কেন এ তিনটি শর্ত পালন করলে জান্নাতে স্থান পাবে। জানিনা আমি ভুল কিছু বলে ফেলছি কি না।
অন্ধকার যুগে মূর্তি পূঁজারীর ঘরে জন্মগ্রহণ করে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সকল শিরকের নাগপাশ ছিন্ন করে এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস এনেছিলেন, এনেছিলেন নিছক নিজের বিবেক বুদ্ধিকে সম্বল করে। তখনো তিনি নবুয়ৎ পাননি। এমন চারিত্রিক উৎকর্ষতার শীর্ষ উঠেও যদি তিনি নবুয়ত না পেতেন তাহলে তিনি জান্নাতে যেতে পারতেন না, আদৌ আমার তা বিশ্বাস হয় না। বরং তার শির্ক মুক্ত চরিত্রের কারনে তিনি নবুয়ত লাভ করেছিলেন, হয়েছিলেন খলিলুল্লাহ।
আরো পরে আরেকটি অন্ধকার যুগে একই রকম পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেন নবীশ্রেষ্ঠ হয়রত মুহাম্মাদ (সঃ)। চল্লিশ বছর পর্যন্ত তিনি শির্ক থেকে নিজেকে পবিত্র রেখেছেন, এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন এবং মানবজাতির কল্যাণের জন্য চেষ্টা করেছেন, সততার সাথে লেনদেন করেছেন, কখনো একটিও মিথ্যে কথা বলেননি। এরকম অনুপম চরিত্রের অধিকারী বলেই তো তাঁকে নবুয়ত দান করা হয়, করা হয় শেষ নবী। তাহলে নবুয়ত পাওয়ার পূর্বেই যদি তাঁকে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হতো তাহলে তিনি জান্নাত পেতেন না, আদৌ আমি তা বিশ্বাস করি না।
এখানে হয়তো অনেকেই বলবেন যে তাঁরা নবুয়তের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন বলেই তাদেরকে আল্লাহ অনুপম চরিত্র দান করেছেন, তাহলে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবুজর গিফারী (রাঃ) এবং হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) এর ইমানের ব্যাপারে কি ব্যাখ্যা দেয়া যায়? হয়রত আবুজর গিফারী (রাঃ) এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিলেন, নামাজ চালু হওয়ারও আগ থেকে তিনি নামাজ আদায় করতেন, এমনকি রাসূল সাঃ কে তিনিই প্রথম ইসলামী কায়দায় সালাম দেন যা পরে ইসলামে গৃহীত হয়।
হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) মুর্তিপূজা ছেড়ে সত্য দিনের আশায় একের পর এক ধর্মযাযকদের সাথে থেকেছেন, সর্বশেষে তিনি রাসূল (সাঃ) এর সন্ধানে মদিনায় যাবার পথে দাসে পরিণত হন, তবুও দমে যান নি। শেষ পর্যন্ত তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করেন।
এরা ইসলাম গ্রহণের পূর্বেই এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতেন, পরকাল বিশ্বাস করতেন এবং বিবেক অনুযায়ী সৎ কাজ করতেন, তাহলে ইসলামের আশ্রয়ে আসার পূর্বেই যদি তাদের মৃত্যু হতো তবে তারা জান্নান পেতেন না তা কিছুতেই এ মন বিশ্বাস করতে চায় না।
আজো বিশ্বের এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে ইসলামের আলো পৌঁছেনি, যারা নিমজ্জিত শেরেকের মহাসাগরে। কিন্তু এদের মাঝ থেকেও যদি কেউ এক আল্লাহ বিশ্বাসী হয়ে শির্ক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, পরকালে এক আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে বিশ্বাস করে এবং বিবেক অনুযায় আমলে সলেহ (সৎ কাজ) করেণ তবে তারা জান্নাতে যাবে না কি তাদের স্থান হবে জাহান্নামে তা আমার জানতে বড় ইচ্ছে হয়। পরওয়ারদেগার, এ সত্যানুসন্ধানীকে আলোর পথ দেখাও।