বুধবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১১

বন্ধন

দারিদ্র এমন এক অভিষাপ যে আপনও পর হয়ে যায়। প্রবাদ আছে যে দারিদ্র সামনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে ভালোবাসা পিছনের দরজা দিয়ে পালায়। কথাটি যে মিথ্যে নয় তা সবাই নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন।
আমরা সব সময় নিজের চেয়ে উচু ক্লাসের আত্মীয়-স্বজনের পরিচয় দিতে ভালোবাসি। অমুক মন্ত্রী আমার দুলাভাই, অমুক ডিসি আমার খালু বলতে আমরা অজ্ঞান। কিন্তু সমাজে যাদের অবস্থান একটু নীচে তাদের পরিচয় দিতে আমরা বিব্রত হই, বিরক্ত হই। অমুক রিক্সাওয়ালা আমার ভাই এমন পরিচয় দিতে কাউকেই সাধারণত দেখা যাবে না, এতে মান যায়, জাত যায়।
হঠাৎ যদি কোন দরিদ্র আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায় তবে আমরা প্রমাদ গুণি, এই বুঝি টাকা ধার চেয়ে বসলো, যেন ওদের একমাত্র কাজ অসুখ-বিসুখ বাঁধানো আর জনে জনে কর্জ করে বেড়ানো। ওরা বাসায় বেড়াতে এলে তো কথাই নেই, ওদের আগমনে আমরা যে সীমাহীন বিরক্ত তা প্রকাশের কোন সুযোগই হাত ছাড়া করি না। অথচ ধনী বা উচু শ্রেণীর আত্মীয় স্বজন দেখলে আমাদের হীতাহীত জ্ঞান থাকে না, পারলে সাগর সেঁচে তিমি মাছ এনে খাওয়াই। গরীব আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা হলে উপদেশ বাণী বর্ষণ করে ওদের কাকভেজা করে দিতে পারি কিন্তু দু’পয়সা হাত ফস্কে যেন ওদের পকেটে চলে না যায় তার জন্য পেরেশানীর সীমা থাকে না। 
গরীব কোন আত্মীয় মারা গেলেও পায়না যথাযথ সম্মান। মৃত্যু সংবাদ শুনে হয়তো একটা দীর্ঘ নিৎশ্বাস ছেড়ে বলি,”বড় ভালো ছিল লোকটা”। গরীব আত্মীয় স্বজন মারা গেলে আমাদের অফিসে কর্মব্যস্ততা বাড়ে, বড় বড় স্যারদের পরিদর্শনে আসার অযুহাতে নোংরা পরিবেশে জানাযা থেকে  পালিয়ে স্বস্তি পাই। বলাতো যায় না, জানায়ার আসরে মৃত আত্মীয়ের সৎকারের জন্য পকেটটা আবার হয়তো ফাঁকা হয়ে যাবে। অথচ ধণী কিংবা উচুজাতের আত্মীয়-স্বজনের হাঁচি-কাশিতেও আমরা সমবেদনা জানাই, আর মারা গেলে তো কথাই নেই, কে কার আগে হাজিরা দিতে পারে তার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ বেধে যায়।
অথচ ভালোবাসা, আত্মীয়তার বন্ধন তো ধন সম্পদের স্তুপে চাঁপা পরার বিষয় নয়। আত্মীয় তো সেই যার সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, কিংবা বলা যায় আত্মার সম্পর্ক যার, সেই আত্মীয়। তবে তাকে কি করে সম্পদ আর প্রাচুর্য দূরে ঠেলে দেয়। রক্তের স্মপর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না, শুনেছি এ বাণী অনেক বার, শুনেছে সবাই। তার পরও আত্মীয়তার ডিঙ্গি কিছুতেই সম্পদের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ভালোবাসার সুনীল সৈকতে ভাসতে পারে না।