প্রথম মানব হয়রত আদম (আঃ) কত যুগ আগে পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা করেছিলেন তা আমার জানা নেই, ইতিহাস গবেষকরা হয়তো এ ব্যাপারে ভালো যুক্তি দিতে পারবেন। মানবজাতির শুরু থেকে সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন দর্শন মানুষকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। শুরুতে মানুষের জীবনটা একেবারেই সাদামাটা বা সহজ-সরল হলেও সময়ের তালে তাল মিলিয়ে জীবন ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। এক সময় মানুষ সমাজ তৈরী করে, সমাজ পরিচালনার জন্য সামাজিক নিয়ম-কানুন তৈরী করে, সল্প পরিসরে হলেও সামাজিক জীবনে রাজনীতি এসে যায়। মানুষ চলার পথে বিভিন্ন আচার-আচরণে অভ্যস্ত হয়ে
ওঠে, সাদামাটা মানব জীবনকে বর্ণিল করার জন্য সৃষ্টি করে কৃষ্টি, সংস্কৃতি। মানুষ প্রয়োজনে পণ্য বিনিময় শেখে, ক্রয়-বিক্রয় শেখে, আস্তে আস্তে তাদের সামনে অর্থনীতি ফুলে ফলে পল্লবে সুশোভিত হয়ে ধরা দেয়। প্রতিটি পদেেপ মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হয়ে খোঁজে এর যথোপযুক্ত উত্তর, সহজ-সরল মানুষের জীবনে ধীরে ধীরে বিজ্ঞান স্থান করে নেয়। এভাবে মানব জাতি পূর্ণতার দিকে এগিয়ে চলে, সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলে, উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়।
ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুতে আরবের মরু প্রান্তরে ইসলামের আবির্ভাব মানব ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হয়রত মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে সামগ্রিক মানব জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা মানবজাতির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি েেত্রর জন্য যথোপযুক্ত দর্শন নিয়ে ইসলাম তার যাত্রা শুরু করে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত ও ধিকৃত অন্ধকার যুগ বা আইয়্যামে জাহেলিয়া মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পৃথিবীর সবচেয়ে আলোকিত যুগে পরিবর্তিত হয় অধ্বপতিত ও ঘৃণিত একটি বর্বর জাতি ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়ে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়, প্রশংসিত হয়। আর এ পরিবর্তনের চাবিকাঠি ছিল ইসলাম, যার মূলমন্ত্র হল পবিত্র কোরআন ও রাসূলে সুন্নাহ।
ছোট কাসের ছাত্ররা সাধারণ বিজ্ঞান পড়ে। একটু উচু কাসে উঠলে সাধারণ বিজ্ঞান পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে বিভক্ত হয়। পদার্থ বিজ্ঞান আবার আরেকটু উপরের কাসে ভাগ হয়ে কোয়ান্টাম ফিজিঙ্, এপ্লাইড ফিজিঙ্ বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়। আসলে বিজ্ঞান এতো বিশাল একটা বিষয় যে এর প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়েই স্বতন্ত্র অধ্যয়ন করা জরুরী হয়ে পড়ে।
তেমনি ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ইতিহাস পড়ার এক ফাঁেক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ইসলামের ইতিহাস স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে, ইসলামের জন্য আলাদা ইতিহাস কেন, তাহলে তার জবাব দেয়ার কিছু থাকে না। একটা বিষয়ের গভীরে যেতে হলে সে বিষয়টাকে অন্য বিষয় থেকে আলাদা করে নিবিঢ়ভাবে অধ্যয়ন করা আদৌ খারাপ কিছু নয়। ইসলামের ইতিহাস নিয়ে আলাদা লেখাপড়া কেন এমন গো ধরলেই ইতিহাস থেকে ইসলামের ইতিহাসটা হারিয়ে যাবে না কারন ইসলামের ইতিহাস মানব ইতিহাসের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
রাষ্ট্র বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা হলে গণতন্ত্রের কথা আসে, ধনতন্ত্রের কথা আসে, ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদের কথা আসে, সর্বাত্মকবাদ আসে, স্বৈরতন্ত্র আসে, রাজতন্ত্র আসে ঠিক সেভাবেই ইসলামও এসে যায়। ঠিক তেমনি অর্থনীতি ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল সাবজেক্ট। এ বিষয়ের একটা অংশ ইসলামী অর্থনীতি। ইসলামের অর্থনীতি কেন? শুধু অর্থনীতি পড়লে সমস্যা কোথায় এমন প্রশ্ন অবান্তর।
এভাবে প্রতিটি বিষয়ে ইসলাম একটি স্বতন্ত্র স্থান দখল করে আছে, যা নিবিঢ় অধ্যয়ন ও গবেষণার দাবী রাখে। এখন কেউ যদি আপত্তি তুলে ধর্মকে প্রতিটি বিষয়ের সাথে গুলিয়ে ফেলার কি দরকার, ধর্ম থাকবে উপাসনালয়ে, ধর্ম থাকবে মসজিদের মধ্যে, ধর্ম থাকবে আলমারীর ভেতর, গেলাফে সযতনে মুড়িয়ে তালাচাবি বন্দী করে রাখা ধর্মগ্রন্থের মধ্যে, তবে তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই ইসলাম কোন ধর্মের নাম নয়, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মানব জীবনের এমন কোন বিষয় নেই ইসলাম যেখানে তার দর্শন প্রকাশ করেনি। ইসলামের আবির্ভাব মানব জীবনের প্রতিটি েেত্র বাসা বাঁধা দুষ্টতকে সঠিক ঔষধ প্রয়োগে সুস্থ করে তোলার জন্য।
কেউ যদি বলেন, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়কে তো হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান প্রভৃতি ধর্মের সাথে সম্পর্কিত করা হয় নি, হিন্দু অর্থনীতি, হিন্দু ব্যাংক, হিন্দু রাজনীতি এমন আলাদা বিষয়তো নেই তাহলে ইসলামের নামে কেন থাকবে, এমন আপত্তি কেউ তুললে আমি দ্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই, মানব জীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে যদি এ সকল ধর্ম কোন সমাধান দিতে না পারে, কোন দিক নির্দেশনা দিতে না পারে তবে তার দায় কেন ইসলামকে বহন করতে হবে? ইসলাম মানব জীবনের প্রতিটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছে তাই ইসলামের নামেই আলাদা সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এতে আপত্তির কি আছে? হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টান ধর্মে যদি অর্থনীতি নিয়ে কোন দিক নির্দেশনা থাকে তবে তারা সেমতে অর্থনীতি চালু করুক, ব্যাংকিং চালুক করুক তাতে তো আমাদের আপত্তি নেই, তবে আমাদের বিশ্বাস নিয়ে তাদের এতো মাথাব্যাথার কারন কি? যোগ্যতা দিয়ে যদি আদর্শের মোকাবেলা করা না যায় তবে গলাবাজি করে একটি প্রতিষ্ঠিত আদর্শের গতিরোধের অর্থ কি?
একজন মুসলমান হিসেবে আমি মনে করি ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান, আর ইসলামকে শ্রেষ্ঠ জীবন বিধান হিসেবে বিশ্বাস করার কারনেই আমি মুসলমান। ইসলামের চেয়ে অন্য ধর্মের আদর্শ যদি আমার কাছে শ্রেষ্ঠ মনে হতো তবে আমি সে ধর্ম গ্রহণ করতাম কিংবা যদি মনে করতাম একেকটি ধর্মে একেকটি বিষয় ভালো, তবে ঐ ভালো বিষয়গুলোকে একত্র করেছে যে সকল ধর্ম তা গ্রহণ করতাম বা তেমন কোন নতুন ধর্ম উদ্বাবনে সচেষ্ট হতাম। কিন্তু আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান, তাই ইসলাম প্রচারে, ইসলামী নিয়ম-নীতি প্রকাশে ইসলামের নিয়ম-নীতি বাস্তবজীবনে মেনে চলতে আমার সর্বশক্তি নিয়োগ করবো।
কেউ যদি বলেন ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম এর প্রমাণ কি তবে আমার জবাব এটাই যে, আমি কাউকে ইসলাম শ্রেষ্ঠ এটা মানতে বাধ্য করছি না, তাই ইসলাম শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করারও আগ্রহ আপাতত নেই। ইসলাম শ্রেষ্ঠ এটুকু বিশ্বাস রাখার অধিকার নিশ্চয়ই আমার রয়েছে?