খুব ছোট বেলায় চোঁখের সামনে একটি কুকুরকে মরতে দেখে খুব খারাপ লেগেছিল। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে কুকুরটিকে নিয়ে গিয়ে মাটি চাপা দিয়ে ছিলাম। ওর অকাল মৃত্যু কতটুকু যে আচরন কেটেছিল হৃদয়ে তা শুধুমাত্র শিশুমনই উপলব্দি করতে পারে।
একটা প্রানীর জন্য আমাদের মায়ার শেষ নেই। খেতে বসলে পোষা বিড়ালটিও খেয়েছে কিনা তারও খবর নিতে ভুলিনা। না, খুব যে একটা উপকারের কথা ভেবে আমরা কুকুর-বেড়ালকে আদর করি তা নয় বরং কাছে থাকতে থাকতে, আদর করতে করতে ভালো বাসতে শুরু করি ওদের। একটা কুকুরকে মরতে দেখলেও আমাদের চোখ আর্দ্র হয়ে ওঠে, বুক ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে দীর্ঘনিঃশ্বাস, আহা! অবলা প্রাণী, না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে।
অথচ মানুষ হয়েও আমরা কিন্তু সাধারন মানুষদের জন্য দরদ অনুভব করি না। জাপানিরা জানে কিভাবে হাতপাখা দিয়ে শত্রুর গর্দান কেটে ফেলা যায়। মানুষ হত্যার মাঝে কোনো বাহাদুরি নেই। যে প্রান সৃষ্টিতে আমার নূন্যতম কোন অবদান নেই, যাকে হত্যা করি তাকে হয়তো জীবনে কোনদিন একবেলা আহার দিয়ে তার দেহে প্রোটিন সরবরাহ করি নি, অথচ তার প্রান সংহারে আমাদের কতই না উৎসাহ উচ্ছাস। সাপের মত পিটিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করি। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে নিভে যায় একটি জ্বলন্ত প্রদীপ। আবার সেই নিরব,নিথর রক্তাক্ত দেহে আনন্দ উল্লাসে নিত্য করি। আজ ২০০৬ এর সেই রক্তাক্ত অক্টোবর। এমাসেই ওরা ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। একজন জীবন্ত মানুষকে কি করে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা যায় সমগ্র বিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করেছে। ধিক এসব মানুষরুপী পশুদের, ধিক রক্তপিপাসু হায়েনাদের, ধিক গনতন্ত্রের খোলসে লুকিয়ে থাকা পশুতন্ত্রের চ্যালাদের।
কত ক্ষমতা আমাদের ? ক্ষুদ্র একটা মাছিও তো সৃষ্টি করতে পারি না, কিংবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র আনুবিক্ষনিক কোন প্রাণীর প্রাণ সঞ্চার করার কোন নজীর আজো কি আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি ? তাহলে কেন এই হানাহানি ? কেন অন্যর প্রাণ নিয়ে অন্যায় টানাটানি। স্বার্থের কারনে যাদের পছন্দ করিনা; তাদের নিঃশ্বেষ করার জন্য প্রতিনিয়ত নতুন কৌশলে এগিয়ে যাওয়ার মত বাতুলতা মানুষের শোভা পায়না। নৈতিকতার বিসর্জন দিতে দিতে কতো নিছে নামতে পারে ওরা; তাদের না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ওরা হিংস্র হায়েনার মতো নখের থাবা নিয়ে বসে থাকে প্রতিক্ষায়।
একটি বারও মনে হয় না ওরা মানুষ, একটা কুকুরের জন্য যে মায়া হয় আমাদের;তার চেয়ে হাজারগুণ বেশী স্নেহ পাওয়ার অধিকারী সৃষ্টির সেরা মাখলুকাত মানুষ। একটি কুকুরের সাংস্পর্শে থেকে থেকে যদি তার কষ্টে মন কাঁদে, পোষা কুকুরের নাওয়া খাওয়ার আগে যখন আমরা লাঞ্চ করার ফুসরত পাই না। তখন আমারি মত মানুষ নির্মমভাবে, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তখনও কি আমাদের মানবতাবোধ জাগ্রত হতে পারে না ? যদি পশুর সাথে থেকে থেকে তোমাদের মানবিকতা লুপ্ত হয়ে থাকে, যদি তোমাদের মন হয়ে থাকে কুকুরের বেড়ালের মনের মতোই তবে কুকুরও তো তার স্বজাতির কষ্টে কষ্ট পায়, দুঃখে চোঁখের জল ফেলে।
তাহলে মনুষত্বকে বিসর্জন দিয়ে তোমরা যারা পশু হয়ে গেছ তাদের প্রতি একটাই অনুরোধ, দয়া করে পশুরও অধম হয়ো না, অন্তত পশুর মতো আচরণ করতে শেখ, স্বজাতির দুঃখে দু’ফোটা চোঁখের জল ফেলতে শেখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন