প্রবল শক্তিমান নক্ষত্রের আলো রাতের আধারে মানুষের কাজে আসেনা তেমন, হোকনা সে কোটি অগনিত এই বিশ্বে। অথচ একটি চাঁদ হোক সে ক্ষুদ্র তুচ্ছাতিতুচ্ছ, জ্যোৎনা হয়ে আলো দিতে যথেষ্ট, কোন এক দিকভ্রান্ত পথিক কে।
রাতের আকাশে কোটি অগনিত নক্ষত্রের মেলা বসে কিন্তু সবগুলো নক্ষত্রের আলো একত্রিত হয়েও একজন পথিক তার পথ খুজে পায় না। এদিকে একটি মাত্র চাঁদ হোক সে ঐ নক্ষত্রের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র কিন্তু একজন পথহারা পথিক ঐ আলোতেই পথ খুজে নিয়ে তার গন্তব্য পৌছতে সক্ষম হয়।
পৃথিবীতে কোরআনের আলো ব্যতিত কোরআনের মতবাদ ছাড়া আর যতো মতবাদ এসেছে তার সবগুলো মতবাদ মিলেও কি পৃথিবীর মানুষদেরকে তার আলোর মুখ দেখাতে পেরেছে? এমন একটি নজিরও কি সৃষ্টি করতে পেরেছে? যার আলোয়ে মানবজাতি তার সঠিক গন্তব্য খুজে পেয়েছে; সকলের সম অধীকার নিশ্চিত করেছে কিংবা একটি শান্তি ও ন্যায়ের সমাজ গড়ে পৃথিবীকে চমকে দিয়েছে?।পারেনি, কখনো পারবেও না।
অথচ যে কোরাআনকে আজ তুচ্ছতাচ্ছিল্ল করা হয়; অবহেলার চোঁখে দেখা হয় যাকে সন্ত্রাসী কিতাব বলে আখ্যায়িত করা হয়। সেই কোরানই কিন্তু আরবের পথভ্রষ্ট মানুষদেরকে সঠিক পথ দেখাতে সক্ষম হয়েছিল।
যে আরবের ইতর মানুষেরা খুনো-খুনো হানাহানি ছাড়া কিছুই বুঝতো না, তরবারীতেই যারা খুঁজত সব প্রশ্নের উত্তর, যারা নারীকে মনে করতে গৃহস্তালী আসবাবপত্রের মতো ব্যবহার্য বিষয়, জীবন্ত কবর দিত যারা কন্যা সন্তানদের, যারা অপরাধের সকল শাখায় তৈরী করেছিল জঘন্য ইতিহাস, সেই অধমেরাই ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসে কোরআনের পরশে হয়েছিলেন ইতিহাস শ্রেষ্ঠ সোনার মানুষ। তাদের নাম মনে এলেই তাই শ্রদ্ধায় বিগলিত হয় হৃদয়, প্রতিটি নাম উচ্চারনের পরই আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলি “রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু”। যারা ইসলামপূর্ব যুগে ছিলেন পরস্পরের শত্রু, যারা ভাইয়ের রক্ত পানের নেশায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে বছরের পর বছর, ইসলামের ছায়ায় আবার তাকেই পেয়ে হয়ে গেলেন সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল, হলেন সবচেয়ে প্রিয় ভাই। এই হলো কোরানের আলো। যে এই কোরানের আলোয় পথ চলবে সেও আলোকিত মানুষে পরিনত হবে।
আজ মুসলিম জাতি হিসেবে আমরা কি পেরেছি সেই কোরআনকে তার যথাযত মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে? পারিনি। আজকে আমরা এই যান্ত্রিকতার সমাজে যন্ত্রের মত এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে কোরআনকে নিয়ে ভাববার পুসরত আমাদের মেলে না। যন্ত্রের মত চলতে চলতে যখন কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি;
তখন আধো ঘুম আধো জাগরনে আমি আর্তনাদ অবস্থায় পবিত্র কুরআনকে দেখতে পাই। বিশাল একটি বিচারালয়ে আমাকে হাত পা বেধে আটার বস্তার মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে শক্ত মার্বেল পাথরের ফ্লোরে। পবিত্র কুরআন কেঁদে কেঁদে আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাচ্ছে; মহামান্য আদালত, এই সেই পাষন্ড, যে আমাকে অবহেলা হতে দেখেও আমার সৎকার করেনি। এই সেই মুসলমান নামধারী নরপশু যে আমাকে গেলাফের কারাগার থেকে মুক্ত করে পৃথিবীতে আমার আসার উদ্দেশ্যকে সমাজে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালায়নি। আমাকে অপমানিত অবস্থায় তোমার দরবারে ঠেলে পাঠিয়েছে। এই নরাধমকে খোদা তুমি কিছুতেই মাপ করো না। আমি নতজানু হয়ে বসে থাকি, আমার জবাব দেয়ার কোন ভাষা নেই, আমার আত্নপ সমর্থনের কোন সুযোগ নেই। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে বসে আছি চরমতম শাস্তির অপেক্ষায়.........
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন