অপুষ্ট ডানার পাখিটা এক চোখ বাঁকা করে মাথাটা একটু কাত করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঐ নীল আকাশ পানে; আর ভাবছে! আমার বুঝি আর কখনো ঐ আকাশে উড়া হবেনা। ছোঁয়া হবেনা নীল আকাশ। বাতাসের হালে পাল তুলে দিয়ে আপন স্বাধীনতায় উড়ে বেড়ানোর সে-কি আনন্দ তা বুঝি আমার ভাগ্যে আর হবেনা। এভাবে একটু পর পর মাথাটা ঘুরিয়ে আবার চারপাশে তাকাচ্ছে পাখিটা। যদি কেউ এসে আবারো রক্তাক্ত করে তার স্বাধীন ডানা দু'টো। এক ধরনের ভয় তার মনে খেলা করছে। বুঝতে পারছি তার মনটা ভালো নেই হয়তো পাখি হলে আরো বেশী বুঝতে পারতাম তার মনের অবস্থা। কিছুক্ষন পর অন্য একটি পাখি তার সামনে দিয়ে উড়ে গেল। তার দেখা দেখী সেও উড়তে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না বরং পড়ে গিয়ে অনেক বেশী আঘাত পেল। এভাবে আর কতো বৃথা চেষ্টা করবে সে! এক সময় অন্যদের ঠোঁকর খেতে খেতে অপুষ্ট ডানার পাখিটা আরো আহত হবে রক্তাক্ত হবে; একসময় বুঝে যাবে ঐ আকাশে উড়ার চাইতে নিজেকে রক্ষার কাজেই সে ব্যস্ত থাকবে। যে ডানার উপর স্বাধীনতা ভর করে তার নীল আকাশে উড়ে বেড়ানোর কথা ছিল তার সে ডানায় রক্তাক্ত স্বাধীনতা নিয়ে তাকে আজ পিপড়ের ডাইনিং টেবিলে যেতে হবে। কারন অপুষ্ট ডানা নিয়ে নীলাকাশ ছোঁয়া যায় না।
কিচ্ছু ভাল্লাগে না। অপুষ্ট ডানার পাখিটার মত নিজেকে খুব
তুচ্ছ আর অসহায় মনে হয়।
মনে হয় যেন মেরুদন্ডহীণ ক্ষুদে শুককীট। গুটির খোলসের অন্ধগুহায় বন্দী। খোলসের ওপারে মুক্ত নীল আকাশ, আকাশে রঙ্গীণ ঘুড়ির ওড়াউড়ি। মনে মনে খোলস মুক্তির প্রহর গুণি, প্রজাপতির মতো গুটি কেটে কেটে নীল আকাশে রঙ্গীণ পাখা মেলে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখি। পরাধীনতার
শৃঙ্খল ছিঁড়ে স্বাধীনতার ডানা
মেলে উড়ে বেড়ানোর অধীকার খুজি প্রতিনিয়ত। আর ভাবি স্বাধীনতা কি শুধুই একটি নাম নাকি তারও আছে কিছু অধীকার?
স্বাধীনতা! স্বপ্নের স্বাধীনতা। প্রাণ খুলে মনের কথা বলার, হরিণ শাবকের মতো দিগ্বিদিক ছুটে বেড়ানোর অবাধ অধিকার। অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন না করে নিজের মত চলার অধিকারই তো স্বাধীনতা। স্বাধীণতার সে
স্বপ্নে বিভোর আমি। আমাদের সাথে
স্বাধীনতা শব্দটির পরিচয় প্রায় চল্লিশ বছর আগে থেকেই; তারপর থেকেই দেখেছি ওর ক্ষত, বিক্ষত রক্ত
ক্ষরন। শব্দটিকে নিয়ে ওরা এত খেলেছে এত মেতেছে যে এখন আর চিবাতে গেলে রক্ত বেরোয় না। সে আজ ডানা ভাঙ্গা পাখিটার চেয়েও অসহায়। তবুও চারদিকে স্বাধীনতার ছড়া-ছড়ি ,উড়া-উড়ি কিন্তু কোথায় স্বাধীনতা? যখনি স্বাধীন
ভাবে কিছু করতে যাই, কিছু বলতে চাই
ওরা পরাধীনরার শৃঙ্খল পড়িয়ে
দেয় আমার হাতে পায়ে। বুটের তলায় চেপে ধরে আমার স্বাধীনতা। সুতীক্ষ্ণ ছুড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় স্বাধীনতার সওদাগরের দল, কসাই যেমন ছুড়ির ফলা দিয়ে পশুর চামড়া ছড়ায় তেমনি ভাবে স্বাধীনতাকেও ইচ্ছেমত ক্ষত,বিক্ষত রক্তাক্ত করার নেশায় আচ্ছন্ন ওদের চোঁখ। কাঁটা চামুছ দিয়ে
খুছিয়ে,খুছিয়ে স্বাধীনতা বের করার প্রতিক্ষায় থাকে ওদের ডাইনিং টেবিল গুলো।
স্বাধীনতা তাহলে কি শুধু ওদের জন্যই ? আমাকে কি তাহলে ওদের অধীনেই ঠোঁকর খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে চিরকাল। ওদের ইচ্ছের কাছেই বন্দী থাকবে আমার স্বাধীনতা ? ওরা স্বাধীনতার বুলি উড়িয়ে বেড়ায় চোঁখের সামনে কিন্তু ঐ ডানা ভাঙ্গা পাখিটির মত দূর্বল পা টেনে টেনে কেবল পিপড়ের ডাইনিং টেবিলে পৌঁছা যায়, নীলাকাশ ছোঁয়া যায় না। স্বাধীনতার সুফল পাওয়া যায়না। তবুও জানি সুবেহ সাদেকের আগে সূর্যের দেখা মেলে না। আঁধার যতই হোকনা নিকষ কালো, ভোরের সোনালী আলোয় তা হবেই হবে দ্বীপ্তিময়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন