শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬

‘‘মৃত্যুকে যারা ভালোবেসে নাম দিয়েছে “প্রিয়তমা”।

মৃত্যু,তোমায় আদর করে কি নামে ডাকব আমি? তোমার নামটি উচ্চারনে কেন এতো ভয় জাগে বুকে! তোমায় দেখলে কেনইবা সকলে পালাতে চায়। তবেকি তুমি নিদারুন তোমার কি কোনই সৌন্দর্য নেই তুমি কি কেবলি কুৎসিত! নাকি তুমি শুধুই মৃত্যু যার কোন বর্ননা নেইতোমাকে দেখে ভয়ে দৌড়ে পালাব নাকি তোমায় গলায় জড়িয়ে ধরব! ওরা মৃত্যুকে দেখে খুঁজে পায়রার খোপ কিংবা ডোবার ক্লেদ। না! আমি তাদের কেউ নই, আমি ২৮ অক্টোবর আমি সেই রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর। আজ আমার রক্ত ঝরার দিন। আমি আজ বলছি সেই সব শহীদদের কথা যারা মৃত্যুকে দেখে বলেছে বাহ, তুমি কতো সুন্দর! যারা মৃত্যুকে ভালোবেসে নাম দিয়েছে প্রিয়তমা। 

গলায় জড়িয়ে আলিঙ্গন করেছে আমারী বুকের উপর দাঁড়িয়ে আমি ধন্য হয়েছি; তাদের শরীরের প্রতিটি পবিত্র রক্ত আমার এই উষ্ণ বুকটাকে শীতল করে দিয়েছিল আজকের এই দিনে। তাদের হাস্যজ্জল চোখগুলো আমার আত্মাটাকে আজও নাড়া দেয়। তাদের আল্লাহু আকবার ধ্বনি শুনার জন্য আমি ফেটে চৌচির হয়ে যাই। আমি চিৎকার দিয়ে বলি ওহে, অমানুষের দল আল্লাহর এই প্রিয় মানুষগুলোকে তোমরা একে একে মেরে ফেলছো কেন? ওদের মেরো না। ঐ পশু গুলো আমার কোন কথাই শুনেনি। হয়তো পশুও সেদিন তাদের দেখে বলেছে আহা,কি চমৎকার! আজকে তোমরা আমাদের পশুত্বটাকেও ছাড়িয়ে গেলে। শয়তান ও হয়তো সেদিন অট্রহাসিতে হেঁসে ছিলো।

ওহ,এতো রক্ত! দেখে মনে হলো আজ বুঝি পশু জবাইয়ের দিন! অথচ না! আজ কিছু মানুষ রুপী পশু একত্রিত হয়ে আল্লাহর সৃষ্টি সেরা মাখলুকাত মানুষকে পশুর মত নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। যে নির্মমতার কোন বর্ণনা নেই। যে ধিক্কার জানাবার কোন ভাষা নেই। সেদিন পুরো পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে আমাকে। দেখেছে সেই পশুদের; যারা তাদের বিকেক আর বুদ্ধিতে পশুত্ত্বের কালিমা অঙ্কন করেছিল। আর আমি হয়েছি কলঙ্কিত। আমার স্থান হয়েছে ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে যুগ থেকে যুগান্তর পর্যন্ত সকল বিবেকবান মানুষ আমাকে স্বরন করবে। আমিও আমার সৃতিতে বয়ে নিয়ে যাব কিছু নিস্পাপ আর নিরপরাধ মানুষ আর কিছু মানুষরুপী জানোয়ারদের

কি করে সম্ভব একের পর এক জীবন্ত তরতাজা মানুষগুলোকে সাপের মত নির্মমভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা। কি দোষ ছিল ওদের? আল্লাহর পথে পথহারা মানুষকে ডাকা কি তাদের অপরাধ ছিল? সত্যের আলোয়ে আলোকিত একটি সমাজ উপহার দেয়াই ছিল যাদের জীবনের লক্ষ্য। সেটা যদি তাদের অপরাধ হয়ে থাকে তবে সেই ২৮ অক্টোবরের প্রতিটি শহীদের প্রতিটি রক্তকনা আল্লাহর কসম করে আমাদের জানান দিয়ে গেছে; খবরদার! আমাদের অপরাধে তোমরাও একই অপরাধী না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু বরন করো না! এই অপরাধে অপরাধী হওয়া ছাড়া কোন মুক্তি নেই। নেই কোন সফলতা। আমাদের এই নির্মম মৃত্যু দেখে;বাতিলের আঘাতে ছিন্ন-ভিন্ন দেহ দেখে যদি তোমরা পিচু হটে যাও যদি ভয় তোমাদের মৃত্যু হতে পালিয়ে নিতে চায় । তবে আরেকবার দেখে নাও আমাদের রক্তমাখা মুখগুলো। বাতিলের আঘাতে জর্জরিত আমাদের ছিন্ন-ভিন্ন দেহগুলো বারবার দাঁড়িয়ে তোমাদের কি বলতে চেয়েছিলো! ভেতরের আত্মার ধ্বনিগুলোও আরেকবার ভালো করে কান পেতে শুনে নাও। ২৮ অক্টোবরের সেই অধ্যায়টা খুলে আরেকবার পড়। আমাদের অগ্নীঝরা চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে এবার বল, মৃত্যুকে তোমার কি মনে হয়! নিশ্চই এতক্ষনে মৃত্যুকে প্রিয়তমার মতন গলায় জড়াতে ইচ্ছে করছে! হ্যাঁ, যদি তাই হয়; তাহলেই কেবল আমাদের আত্মাগুলো শান্তি পাবে। নচেৎ আমাদের স্বরনে তোমাদের কফোটা অশ্রু আমাদের কষ্টটাকে আরো রক্তাক্ত করবে। আমাদের ব্যাথা গুলোকে কষ্টে কষ্টে আরো ব্যাথিত করবে। আমাদের বার্তা শুধু এতটুকুই বাতিলের মসনদ ভেঙ্গে চুরে চুরমার করে দাও। সবুজ পাখীর নীড়ে তোমরাও ছটে আসো আমরা তোমাদের সাক্ষাতের প্রতীক্ষায় রইলাম।

আমি ২৮ অক্টবর, আজকের এই দিনটিকে হয়তো অনেকেই ভুলে যান কিন্তু আমি ভুলিনা। ভুলেনা সেইসব মায়েরা। আমি সেই সকল শহীদি মায়েদের বুকফাটা কান্না শুনতে পাই। তাদের বলি তোমরা কেঁদোনা তোমাদের চোখে অশ্রু বেমানান। পৃথিবীর প্রতিটি লাল গোলাপ আজকের দিনে শুধুই তোমাদের জন্য; চেয়ে দেখ কি অপরুপ আর কতো লাল, যেন তোমার সেই আদরের সন্তানের রক্তমাখা প্রতিচ্ছবি। কিদারুন তার সুগন্ধ । তোমারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা, তোমারাই এনেছিলে এ ধরায় দ্বীনের জ্যোতি, যারা দুনিয়ার সমস্ত সত্যপথ যাত্রীদের মরতে মরতে শিখিয়ে গেছেন; মৃত্যুভয়ে পালিয়ে নয় বরং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে প্রিয়তমার মত বুকে জড়িয়ে ধরহাঁসতে হাঁসতে ছুটে চল অনন্ত অসীম জান্নাতের ঠিকানায়। আজকের এই দিনে সেই শহীদদের ও তাদের মায়েদের আমার লাল সালাম